Advertisement
E-Paper

Gold Dust: বিপর্যয়ের পরেও ধুলোয় সোনা খুঁজছেন নেহারালারা

বৌবাজার জুড়ে ‘নেহারালা’র সংখ্যা ষাট-সত্তর। আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা এঁরা বেশির ভাগই এ রাজ্যে হাওড়া বা বন্দর এলাকায় থাকেন।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২২ ০৬:৫৯
বৌবাজারের ফুটপাত থেকে  ধুলো সংগ্রহ করছেন এক নেহারালা।

বৌবাজারের ফুটপাত থেকে ধুলো সংগ্রহ করছেন এক নেহারালা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বৌবাজারের ভাঙা মহল্লা পাহারা দিতে দিতে ভোরে তন্দ্রা এসেছিল এক পুলিশকর্মীর। ঘুম ভাঙল তাঁর জুতোয় টোকা পড়তেই। চোখ খুললেন কারও ডাকে, ‘‘বাবু পা-টা তুলুন। রাস্তা ঝাঁট দেব।’’ বিস্মিত উর্দিধারী ভাবলেন, পুর সাফাইকর্মী তো নন, এঁরা কারা?

ছোট কড়াই, লোহার ব্রাশ আর প্লাস্টিকের জগ রেখে রাস্তা ঝাঁট দিয়ে আগন্তুক তখন এক দিকে জড়ো করছেন ধুলো। জগে ভরা সেই ধুলো তুলছেন কড়াইয়ে। কড়াইয়ে জল ঢেলে লোহার ব্রাশ দিয়ে চলল আরও কয়েক দফা ধুলো ঝাড়া। ভেজা ধুলো নিয়ে এর পরে হাঁটা দিলেন। সেই পথ দিয়েই হেঁটে আসা স্থানীয় এক জন পুলিশকর্মীকে বললেন, ‘‘এঁরা নেহারালা। বৌবাজারে ধুলো ঝাড়লেও সোনা মেলে। ওঁরা সেই ধুলো ঝেড়ে সোনা বার করেন! বিপর্যয়ের পর থেকে দিনকয়েক ওঁদের দেখা যাচ্ছিল না। আজ দেখলাম।’’

জানা গেল, বৌবাজার জুড়ে ‘নেহারালা’র সংখ্যা ষাট-সত্তর। আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা এঁরা বেশির ভাগই এ রাজ্যে হাওড়া বা বন্দর এলাকায় থাকেন। প্রতিদিন সামান্য সরঞ্জাম নিয়ে ভোরে বৌবাজারে চলে আসেন। শুরু হয় দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেন, গৌর দে লেন বা হৃদয়রাম বন্দ্যোপাধ্যায় লেনের মতো সোনাপট্টির রাস্তা, দোকান ঝাঁট দেওয়া। কাজ চলে ভোর পাঁচটা থেকে বেলা দশটা-সাড়ে দশটা পর্যন্ত। ঝাঁট দেওয়ার পারিশ্রমিক নেন না তাঁরা। উল্টে যে দোকান বা দোকানের সামনের রাস্তা তাঁরা ঝাঁট দেন, সেটির মালিককেই নির্দিষ্ট টাকা দেন।

অমল দাস নামে স্থানীয় এক স্বর্ণ কারিগর জানাচ্ছেন, ‘বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতি’র হিসাব অনুযায়ী, বৌবাজার জুড়ে প্রায় তিনশো-চারশোর বেশি সোনার দোকান রয়েছে। শোরুমে বরাত দেওয়া গয়না তৈরি হয় সেখানেই। শুধুমাত্র দুর্গা পিতুরি লেনেই এমন দোকান ৫৫টি। সোনার কাজ করার সময়ে গুঁড়ো সোনা ধুলোয় মিশে যায়। সেই ধুলো ঝেড়েই সোনা বার করেন নেহারালারা।

কী ভাবে? বৌবাজারের আর এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী মোহনবাবু বললেন, ‘‘আদতে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার বাসিন্দা এঁরা। রাস্তা ঝাঁট দেওয়ার পাশাপাশি সোনার কারিগরদের বহু দিন ব্যবহার করা পোশাক, সোনার কারখানার পাপোশ, চাটাইও তাঁরা সংগ্রহ করেন।’’ এর পরের দীর্ঘ পদ্ধতির কথাও শোনালেন মোহনবাবু। তিনি জানান, সংগৃহীত সব কিছু বড় কড়াইয়ে ফেলে আগুন ধরানো হয়। তার ছাই অপেক্ষাকৃত ছোট কড়াইয়ে রেখে সালফিউরিক অ্যাসিড মেশানো হয়। ওই ভাবে পক্ষকাল রেখে কাদা কাদা ভাব হলে শুরু হয় জল দিয়ে বার বার ধোয়া। সংগ্রহ করা ধুলোও একই ভাবে বার বার ধোয়া হয়। তাতে ধুলো বা ছাইয়ের থেকে ভারী হওয়ায় সোনা থিতিয়ে যায়। সঙ্গে লোহা, তামাও থিতিয়ে যায়। সেগুলি থেকে সোনাকে আলাদা করতে তাই নাইট্রিক অ্যাসিড দেওয়া হয়। তামা বা লোহাকে খেয়ে নেয় এই অ্যাসিড। পড়ে থাকে সোনা। এখানেই শেষ নয়।

ফের ধুয়ে এতে পারদ দিয়ে সেই মিশ্রণ ছেঁকে নেওয়া হয়। বিশেষ পাত্রে তা গরম করলেই পারদ উবে পড়ে থাকে শুধুই সোনা। তা বিক্রি করা হয় বৌবাজারের পোদ্দারদের কাছে। স্বর্ণ-ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ধুলো ঝেড়ে পাওয়া সোনা কম্পিউটারে ফেলে তাঁরাই গুণমান যাচাই করেন। সেই পদ্ধতিকে ‘টঞ্চ’ বলে। ভাল মানের সোনা হলে নেহারালাদের কাছ থেকে বাজারদরেই তা কিনে নেওয়া হয়।

মেটিয়াবুরুজ থেকে আসা নেহারালা মহম্মদ হোসেন বললেন, ‘‘স্বাভাবিক সময়ে ধুলো ঝেড়ে সোনা বেচে দিনে আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা আয় হয়। গত কয়েক দিন রোজগার বন্ধ। পুলিশের ব্যারিকেডের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেছি। এখন ধুলো ঝেড়েও কী লাভ বলুন! সোনার কাজ এখন এলাকার কোথায় হচ্ছে?’’

Bowbazar Gold Market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy