Advertisement
১৬ মে ২০২৪

হেলমেট ছাড়াই স্কুটিতে, দুর্ঘটনায় মৃত্যু তরুণীর

তাঁদের কারও মাথাতেই ছিল না হেলমেট। রবিবার, বড়দিনের আনন্দ করতে স্কুটি চালিয়ে হাওড়া থেকে পার্ক স্ট্রিট যাচ্ছিলেন দুই তরুণী। কিন্তু সেই আনন্দে যোগ দেওয়া আর হল না। মা উড়ালপুলে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তাঁদেরই এক জন। গুরুতর আহত ও অচৈতন্য অবস্থায় অন্য তরুণী ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

মোনালিসা দেবনাথ। (মাঝে) হাসপাতালে আহত অবন্তিকা। (ডান দিকে) দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্কুটি। — নিজস্ব চিত্র

মোনালিসা দেবনাথ। (মাঝে) হাসপাতালে আহত অবন্তিকা। (ডান দিকে) দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্কুটি। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৯
Share: Save:

তাঁদের কারও মাথাতেই ছিল না হেলমেট। রবিবার, বড়দিনের আনন্দ করতে স্কুটি চালিয়ে হাওড়া থেকে পার্ক স্ট্রিট যাচ্ছিলেন দুই তরুণী। কিন্তু সেই আনন্দে যোগ দেওয়া আর হল না। মা উড়ালপুলে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তাঁদেরই এক জন। গুরুতর আহত ও অচৈতন্য অবস্থায় অন্য তরুণী ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় মৃত মোনালিসা দেবনাথ (২৪) স্কুটি চালাচ্ছিলেন। পিছনে বসেছিলেন তাঁর বান্ধবী অবন্তিকা। মোনালিসার বাড়ি হাও়ড়ার শরৎ চ্যাটার্জি রোডে। অবন্তিকা সম্পর্কে বিশদ তথ্য রবিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। মোনালিসার ব্যাগ থেকে পাওয়া ফোন নম্বর থেকে তাঁর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। মোনালিসার বাবা শঙ্কর দেবনাথ হাসপাতালে এসে মেয়ের দেহ শনাক্ত করেন। তিনি আহত অবন্তিকাকে দেখে চিনতে পারলেও নাম ছাড়া আর কোনও তথ্য পুলিশকে দিতে পারেননি।

কী ভাবে ঘটল দুর্ঘটনা? পুলিশ সূত্রে খবর, হাওড়া থেকে বন্ধু অবন্তিকাকে স্কুটিতে চাপিয়ে মোনালিসা রেসকোর্সের দিক থেকে এজেসি বসু রোড উড়ালপুলে উঠেছিলেন। যাওয়ার কথা ছিল পার্ক সার্কাস হয়ে পার্ক স্ট্রিটে। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটে উড়ালপুলের বাইপাসের দিকের অংশে। পুলিশের অনুমান, সম্ভবত ভুল করে মোনালিসা ও অবন্তিকা বাইপাসের দিকে মা উড়ালপুলে ঢুকে পড়েন। পরে খেয়াল হলে, আচমকা ব্রেক কষে দাঁড়াতে গিয়ে বেসামাল হয়ে উড়ালপুলের রেলিংয়ে ধাক্কা মারে স্কুটি। দুর্ঘটনাস্থলে একটি হেলমেট পড়ে থাকতে দেখেন পুলিশকর্মীরাও। কিন্তু পুলিশের দাবি, হেলমেট স্কুটিতে ঝোলানো ছিল। দু’জনের মাথাই ছিল খালি।

পুলিশের একাংশের মতে, ওই দুই তরুণীর হেলমেট না থাকা যেমন দুর্ঘটনার একটি কারণ, তেমনই অন্যতম কারণ উড়ালপুলের সঠিক জায়গায় সাইনবোর্ড না থাকা।

রেসকোর্সের দিক থেকে আসার সময়ে পার্ক সার্কাসের কাছে এজেসি বসু রোড উড়ালপুলটি দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটি নেমে গিয়েছে পার্ক সার্কাসের সাত মাথার মোড়ে। অন্যটি গিয়ে মিশেছে মা উড়ালপুলের সঙ্গে।

পুলিশের একাংশের অভিযোগ, যেখান থেকে উড়ালপুলটি ভাগ হচ্ছে, তার কিছুটা আগে সাইনবোর্ড দেওয়া থাকলে চালকদের পক্ষে সহজেই বোঝা সম্ভব তাঁরা কোন রাস্তা ধরবেন। কিন্তু, এখানে উড়ালপুল ভাগ হয়ে যাওয়ার ঠিক সংযোগস্থলে লাগানো রয়েছে সাইনবোর্ড। অভিযোগ, আগে কোনও বোর্ড না থাকায় দ্রুত গতিতে যেতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে সেটি অনেকেরই নজরে পড়ে না। ফলে অনেকেই পার্ক সার্কাসের দিকে যেতে গিয়ে ভুল করে মা উড়ালপুলে উঠে দুর্ঘটনার শিকার হন।

পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ ডিসেম্বর এ ভাবেই পার্ক সার্কাস যাওয়ার বদলে বাইপাসের দিকে উড়ালপুলে ভুল করে ঢুকে মাঝখানে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন দুই যুবক। হঠাৎ করে থেমে যাওয়ায় পিছন থেকে তাঁদের মোটরবাইকে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয় তপসিয়ার বাসিন্দা ওই দুই যুবকের। এর আগে ওই সংযোগস্থলে ধাক্কা মারায় মাঝখান থেকে নীচেও পড়ে গিয়েছিলেন এক যুবক।

লালবাজার সূত্রের খবর, উড়ালপুলের উপরে সমস্ত সাইনবোর্ড লাগায় কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ। এর জন্য খরচ দেয় পরিবহণ দফতর। তা হলে উড়ালপুলে সাইনবোর্ড লাগাতে কার্পণ্য কেন পুলিশের? এই নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অফিসার, অতিরিক্ত কমিশনার(৩) সুপ্রতিম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর কাছ থেকে কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Helmet Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE