Advertisement
E-Paper

ওঁর ভালবাসা না পেলে এমন করে গাইতেই পারতাম না

পূর্বা দাম

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০

সুচিত্রাদির সঙ্গে আমার সেই বারো বছর বয়স থেকে সম্পর্ক। খুবই ভালবাসতেন আমায়। আমার গুরু ছিলেন তিনি। গান কেমন গাইতেন, সেটা তো সবাই জানেন। কিন্তু ওঁর গান শেখানোর ব্যাপারটা ছিল একেবারে অন্য রকম। সবার থেকে আলাদা। গান জিনিসটা আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দিতেন বড় অদ্ভুত ভাবে। সেটা ক’জন পারেন আমি ঠিক জানি না। আমরা গানটাকে ভাল করে যাতে বুঝতে পারি, উনি আপ্রাণ সেই চেষ্টা করতেন। সুচিত্রাদি যে ভাবে শিখিয়েছেন তা ভুলতে পারিনি। এখনও সেই ভাবেই গাওয়ার চেষ্টা করি। উনি আমাদের সব সময় বলতেন, “তোমরা গানটাকে প্রথমে ভাল করে পড়। বোঝার চেষ্টা কর। তার পর গাও।” যাতে আপনা থেকেই গানটা ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। সত্যি তেমনটাই হত। আমিও আমার ছাত্রীদের একই কথা বলি।

সুচিত্রাদির গায়কি এত অন্য রকম ছিল, যেটা আমি আর কারও ভিতর পাই না। যেমন জোরালো গলা, তেমনই অদ্ভুত মাদকতা। মাধুর্যের সঙ্গে ছিল গাম্ভীর্যও। ওঁর গাওয়া সব গানই ভীষণ ভাল। আলাদা করে কিছু বলা যায় না। তবে তার মধ্যেও ‘কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি’ এবং ‘তবু মনে রেখ’— এই দু’টি গান আমার সব সময় মনে পড়ে। ওঁর পূজা পর্যায়ের গানও আমার ভীষণ প্রিয়।

আমার কাছে সুচিত্রাদি মায়ের মতো ছিলেন। ওঁর কাছে যেমন বকুনি শুনেছি, তেমন আদরও পেয়েছি। পেয়েছি ভালবাসাও। এইচএমভি-তে যখন রেকর্ডিং করতে যেতাম তিনি ছিলেন আমার ‘ট্রেনার’। সেটা ১৯৭৪-’৭৫ সাল হবে। সদ্য আমার বাবা-মা প্রয়াত হয়েছেন। তার মধ্যেই রেকর্ডিং-এর দিন পড়ল। যাব না কিছুতেই। সুচিত্রাদি জোর করে নিয়ে গেলেন। আমি গাইতে পারছিলাম না। একটা স্বরও ঠিকঠাক জায়গায় লাগছিল না। আসলে আমার ভেতরটা তখন অন্য রকম হয়ে ছিল। শোকের ভারে আমি কেমন অথর্ব হয়েছিলাম। সুচিত্রাদি বললেন, “এক পা হাঁটতে পারছিস না! দেখ বাবা-মা তোর জন্য সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। একটা পা বাড়ালেই ওঁদের কাছে পৌঁছতে পারবি। তুই যেতে চাস না?” তাঁঁর এই কথার পরই আমি নোট-টা লাগাতে পেরেছিলাম। আমাকে আর দ্বিতীয় বার গাইতে হয়নি। তিনি সব সময় আমায় এই ভাবে আগলে রাখতেন।

চলে যাওয়ার আগে খুবই অসুস্থ ছিলেন। দেখতে যেতাম। হাতটা ধরে বসে থাকতেন। ফেরার সময় বলতেন, “আমাকে ছেড়ে যাবি না তো? আবার আসবি? আসিস।” আমরা যেতাম। ওঁকে দেখে এত কষ্ট হত, কথা বলতে পারতাম না। হাত-পা কাঁপছে। কথাবার্তাও ভাল করে বলতে পারতেন না। গেলেই হাত দুটো চেপে ধরে বসে থাকতেন। ছাড়তেন না। কিছু নিয়ে গেলে ভীষণ খুশি হতেন। যখন সুস্থ ছিলেন, ওঁর কাছে যাওয়ার সময় কিছু না কিছু খাবার তৈরি করে নিয়ে যেতাম। এত খুশি হতেন। এমনও হয়েছে, রাত সাড়ে দশটার সময় ফোন করে বললেন, “পূর্বা শোন, আমি এখন তোর তৈরি করা মালপোয়া খেতে খেতে তোকে ফোন করছি। কী ভাল রান্না করিস রে!” এত মিষ্টি করে বলতেন! শুনে আমার চোখে জল চলে আসত। ভীষণ ভালবাসতেন। ওঁর ভালবাসা না পেলে আমি কি এমন করে গান গাইতে পারতাম!

purba dam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy