Advertisement
E-Paper

কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ’ অর্থলগ্নি সংস্থার, বিক্ষোভ

সারদা কাণ্ডের পরও অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ যে বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ মিলল রবিবার দুপুরে বাগুইআটিতে। ‘ওয়াক অন, ব্যথা গন।’ খবরের কাগজ, টেলিভিশনে এই নামেই দেখা যেত ওষুধের ওই বিজ্ঞাপনটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৫:১১

সারদা কাণ্ডের পরও অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ যে বন্ধ হয়নি, তার প্রমাণ মিলল রবিবার দুপুরে বাগুইআটিতে।

‘ওয়াক অন, ব্যথা গন।’ খবরের কাগজ, টেলিভিশনে এই নামেই দেখা যেত ওষুধের ওই বিজ্ঞাপনটি। অভিযোগ, হাঁটুর ব্যথার ওই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা বাজার ও লগ্নিকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে প্রতারণা করেছে। অভিযোগ, সংস্থার লেকটাউনের প্রধান কার্যালয়টি অনেকদিন ধরেই বন্ধ। রবিবার দুপুরে ওই সংস্থায় লগ্নিকারী কয়েকশো এজেন্ট ও আমানতকারী অভিযুক্ত সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌরভ রায়ের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখান। কিন্তু বাড়িতে সৌরভবাবু ও তার পরিবারের কেউ ছিলেন না। বিক্ষোভ সামলাতে ঘটনাস্থলে আসে বাগুইআটি থানার পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি (এয়ারপোর্ট ডিভিশন ২) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “লেকটাউন থানায় একটি জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছিল। অভিযোগকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হলেই আদালতের নির্দেশ মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অশোকা লাইফ সায়েন্স লিমিটেড নামে ওই সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারীরা জানাচ্ছেন, তাদের সংস্থার বিভিন্ন অফিস ছড়িয়ে রয়েছে কলকাতা থেকে শুরু করে কৃষ্ণনগর, হাবড়া, জলপাইগুড়ি, অসম এমনকী রাঁচিতেও। এই সব জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছেন প্রচুর এজেন্ট ও আমানতকারীরা। অভিযোগ, হাঁটুর ব্যথার ওষুুধ প্রস্তুতকারী ওই সংস্থা ধীরে ধীরে নানা ধরনের কোম্পানি খুলতে থাকে। অভিযোগ, ওই সংস্থায় টাকা লগ্নি করলে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ টাকা, দশ বছরে পাঁচগুণ টাকা পাওয়া যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। রেকারিং থেকে ফিক্সড্ ডিপোজিট সব ধরনের টাকা রাখারই সুবিধা ছিল এই সংস্থায়। সেই সঙ্গে অভিযোগ, আমানতকারীদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল এখানে যিনি টাকা লগ্নি করবেন তাঁর নামে একটি জীবনবিমাও হয়ে যাবে। যত বছরের জন্য আমানতকারী লগ্নি করবেন, সেই সময়ের মধ্যে তিনি মারা গেলে মোটা টাকাও পাওয়া যাবে।

লিলুয়ার বাসিন্দা অশোককুমার রায় জানান, তিনি ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে সাত বছরের জন্য ১০ লক্ষ টাকা লগ্নি করেছিলেন। অশোকবাবুর অভিযোগ, “চুক্তি মতো আমার মাসে মাসে ১৫ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সেই টাকা পাচ্ছি না।”একই অবস্থা কৃষ্ণনগরের প্রশান্তকুমার দাশের। প্রশান্তবাবুর অভিযোগ, ২০০৭ সালে ওই সংস্থায় এক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো টাকা পাননি। এ রকম নানা আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ নিয়ে এ দিন আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীরা ভিড় করেছিলেন সৌরভবাবুর বাড়ির সামনে। কেউ কেউ আবার চেক দেখিয়ে অভিযোগ করে বলেন, বারবার চেক বাউন্স করছে।

আমানতকারীরা জানাচ্ছেন, নির্ধারিত সময়ে টাকা না-পাওয়া থেকে শুরু করে, চেক বাউন্স হওয়া এ রকম নানা আর্থিক বেনিয়ম শুরু হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে। কিন্তু সম্প্রতি গত কয়েক মাস ধরে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ আরও বেশি করে উঠতে থাকে বলে অভিযোগ। মনোজ নন্দী নামে এক আমানতকারী জানান, চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখ সৌরভবাবুর বাড়িতে আমানতকারীদের সঙ্গে সৌরভবাবুর বৈঠক হয়। সেখানে সৌরভবাবু লিখিত ভাবে জানিয়ে দেন ৯ মার্চ আমানতকারীদের বকেয়া টাকার ৫০ শতাংশ মিটিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তী ৫০ শতাংশ টাকা আগামী ছ’মাসের মধ্যে মিটিয়ে ফেলা হবে।

সেই মতো এ দিন সকাল থেকে আমানতকারীরা সৌরভবাবুর বাড়ির সামনে ভিড় করেন। কিন্তু ওই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, সৌরভবাবু বাড়িতে নেই। আমানতকারীদের ওই আবাসনের তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে সৌরভবাবু পরিবার নিয়ে থাকেন। ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায় ফ্ল্যাটের সামনে তালা ঝুলছে। বারবার কলিং বেল টিপলেও কেউ দরজা খোলেননি।

সৌরভবাবু বাড়িতে না থাকলেও তাঁকে শেষ পর্যন্ত টেলিফোনে ধরা যায়। সৌরভবাবু বলেন, “আমার মা খুবই অসুস্থ। একটি নার্সিংহোমে ভর্তি আছেন। এই নিয়ে আমি খুবই বিচলিত। শনিবারই আমানতকারীদের জানিয়ে দিয়েছিলাম রবিবার বাড়িতে না আসার জন্য। ওঁদের কবে আসতে হবে তা পরে জানিয়ে দেব। প্রত্যেক আমানতকারীকেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে।” যদিও ফোনের এই কথা শুনে আমানতকারীদের অভিযোগ, পুরোটাই ভুয়ো প্রতিশ্রুতি। সৌরভবাবু কোনও আমানতকারীকেই শনিবার ফোন করে কিছু বলেননি। এ দিকে আবাসিকদের অভিযোগ, এই নিয়ে মাঝেমধ্যেই ওই আবাসনে আমানতকারীরা এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এর ফলে আবাসনের শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে।

walk on baguiati
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy