কালমৃগয়া
রবীন্দ্রনাথের মূল পাঠ অক্ষুণ্ণ রেখেই এই সময়ে দাঁড়িয়ে কালমৃগয়া-কে বিন্যস্ত করেছি। আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতি যে ভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ছে সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি মঞ্চায়নে।—বলছিলেন পৌলমী চট্টোপাধ্যায়। থাঙ্কমণি কুট্টির কাছে তালিমপ্রাপ্ত ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী পৌলমী এত দিন তাঁর একক নৃত্যের সঙ্গে অভিনয়ও করেছেন নাটকে, এই তাঁর প্রথম পরিচালনা, গীতিনাট্য কালমৃগয়া (১৮৮২), নৃত্য-গীত-অভিনয় এই তিনের সম্মিলনেই মঞ্চায়ন।
প্রাকৃতিক সম্পদ বা নিসর্গকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন রাজা দশরথ আর তাঁর শিকারিরা। অরণ্যে লালিত-পালিত অন্ধ ঋষির পুত্র ঋষিকুমার প্রশ্ন করে দশরথকে: ‘কী দোষ করেছি তোমার,/ কেন গো হানিলে বাণ!’ মঞ্চায়নের ধরনও জানালেন পৌলমী: ‘‘বনদেবীরা সব সময়ই গান আর নাচে নিজেদের প্রকাশ করবেন, গানের কথা-সুর তো রবীন্দ্রনাথের, আর নাচে ভরতনাট্যম মোহিনীআট্যম কথাকলি ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী ব্যবহার করা হচ্ছে। বনদেবীরা নিসর্গের প্রতিভূ, শিল্পসৃজনেরও, ফলে লিরিসিজমটা যুক্ত থাকছে তাঁদের সঙ্গে। শিকারিদের দুর্বৃত্তায়ণে ধ্রুপদী শৈলী ব্যবহার করছি না, বৈপরীত্যটা বোঝানোর জন্যে। আর অন্যান্য চরিত্র গানগুলোকেই গদ্যের মতো করে বলবে, পদ্যছন্দে শোনা যাবে তাদের সংলাপ। আবহ পশ্চিমী মার্গ সঙ্গীতের ধাঁচে, পরিচালনায় দিশারী চক্রবর্তী। বনদেবতার গানটা ‘সঘন ঘন ছাইল গগন ঘনাইয়া’ গাইছেন শ্রীকান্ত আচার্য। থিয়েটার-অপেরার মিশেলে টেক্সটটাকে নতুন ধাঁচে মঞ্চস্থ করতে চাইছি।’’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কালমৃগয়া-য় তিনি অন্ধ ঋষির চরিত্রে, রেলিশ করছেন এই নতুন অভিজ্ঞতা: ‘গড়নটা নতুন, নিরীক্ষামূলক, কাজ করতে তাই খুব ভাল লাগছে। তা ছাড়া এত দিন আমার নাটকে অভিনয়ের সময় মেয়েকে নির্দেশ দিয়ে এসেছি, এ বারে ওর নির্দেশনায় কাজ করছি, আনন্দই হচ্ছে। এ ভাবেই তো পরম্পরা তৈরি হয়।’ কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক-এর আর্থিক সহায়তায় প্রযোজনার দায়িত্বে আনর্ত পৌলমীর নৃত্যগোষ্ঠী। প্রথম দু’টি অভিনয় ১৩-১৪ অগস্ট, সন্ধে ৭টায় জ্ঞানমঞ্চে। মহড়ার ছবি: অনিন্দ্য দে’র সৌজন্যে।
কবিকথা
‘পশ্চিম বঙ্গের কবি দেখিলাম মোর / মতো নাই জেদের অপ্রতিহত জোর।’ সখেদে লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ‘বাঙাল’-এর অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে। ১৯৪০-এ লিখেছেন,‘বাঙাল যখন আসে মোর গৃহদ্বারে,/ নূতন লেখার দাবি লয়ে বারে বারে / আমি তারে হেঁকে বলি সরোষ গলায়—/ শেষ দাঁড়ি টানিয়াছি কাব্যের কলায়...’। তবু ‘বাঙাল’ সুধীরচন্দ্র কর ছাড়তেন না, লিখিয়ে নিতেন নতুন লেখা। এক যুগেরও বেশি তিনি ছিলেন রবিসাহেবের মুন্সি। কবির সব থেকে নির্ভরযোগ্য লিপিকর। সেই সূত্রে তাঁর লেখা নানা রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি নিয়ে ১৯৫১-য় প্রকাশিত হয় কবিকথা। বইটি নতুন করে প্রকাশিত হল সিগনেট প্রেস থেকে, সায়ন্তন মজুমদারের ভূমিকা-সহ। সিগনেটই প্রকাশ করল সুধীর চক্রবর্তীর রবীন্দ্রসংগীত বিষয়ে লেখার সংকলন রবিকররেখা।
বাংলা কার্টুন
শুরুটা ১৮৭২-এ। অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশ পেল একটি কার্টুন। বিষয়: ব্রিটিশ আমলের দেশি আমলা। ১৮৭৪-এ ‘হরবোলা ভাঁড়’ হইচই ফেলে দিল। শুরু হল কাগজের পাতায় ব্যঙ্গচিত্রের তীব্র আঘাত। এ বার মায়া আর্ট স্পেস-এ ৮-১৬ অগস্ট প্রদর্শনী ‘বাংলা কার্টুন’ (২-৮টা)। অবনীন্দ্রনাথ, অসিত হালদার, দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী, প্রিয়গোপাল দাসের কার্টুন চর্চার দিকটিও উঠে আসবে প্রদর্শনীতে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুনের সঙ্গে থাকবে গগনেন্দ্রনাথের দুর্লভ কার্টুনের বই বিরূপ বজ্র (১৯১৭) ও নবহুল্লোড় (১৯২১) এবং বসন্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের ইন্ডিয়ান কার্টুন (১৯২১)। ১০ অগস্ট সাড়ে ৬ টায় দেবাশীষ দেবের তথ্যচিত্র, ১৫-য় আলোচনায় থাকবেন সমকালীন কার্টুনিস্টরা। শুভেন্দু দাশগুপ্তের সাহায্যে প্রদর্শনীর পরিকল্পনা ও বিন্যাসে দেবদত্ত গুপ্ত।
ছবি ও গান
সারা জীবনে বেশ কয়েক বার ছবির সঙ্গে গানের এক সংলাপ তৈরি করতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সেই ঝোঁকেই অবন ঠাকুর, নন্দলাল বা অসিতকুমার হালদারের আঁকা ছবি দেখে সুরের আগুন ছড়িয়েছে তাঁর মনে। আবার তাঁর গানের সঙ্গেও ছবি এঁকেছেন বিশিষ্ট শিল্পীরা। রবীন্দ্রনাথের গান আর শিল্পীদের ছবি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন শর্মিষ্ঠা দত্ত পাঠক। এই নিয়েই তাঁর একক গানের অনুষ্ঠান শিশির মঞ্চে, ৯ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ছটায়। ভাষ্যপাঠে সুরজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রত মজুমদারের আলোক পরিকল্পনায় পর্দায় গানের সঙ্গে দেখানো হবে ছবিগুলিও। পরিচিত গানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ছবির গল্পও শোনা যাবে অনুষ্ঠানে। আয়োজনে ইউডি এন্টারটেনমেন্ট।
রবিবাবুর গান
রবীন্দ্রনাথের গান প্রথম তাঁরই নিজের কণ্ঠে শোনা যায় ফোনোগ্রাফ যন্ত্রে। পরে মানদাসুন্দরী, পূর্ণকুমারী, বেদানা দাসী, নীহারবালার মতো মহিলা শিল্পীরা নিজস্ব গায়ন রীতিতে রবিবাবুর গান গাইতে শুরু করেন। রেকর্ডে শুধু ‘রবীন্দ্র-গীতি’, কি ‘কথা ও সুর রবীন্দ্রনাথ’ আবার কখনও বন্ধনীর মধ্যে শুধু ‘রবীন্দ্রনাথ’ লেখা থাকত। কনক দাসের একটি রেকর্ড পরিচিতিতে সম্ভবত প্রথম ‘রবীন্দ্রসংগীত’ লেখা হয়। ১৯০৮-১৯৪১ পর্যন্ত যে মহিলা শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথের গান রেকর্ড করেন, তাঁদের অধিকাংশের ছবি, সংক্ষিপ্ত জীবনী, রেকর্ড পরিচিতি সহ ৮ অগস্ট থেকে নিউটাউনের ‘রবীন্দ্রতীর্থ’-য় শুরু হচ্ছে প্রদর্শনী ‘নারী কণ্ঠে রবিবাবুর গান’। অরিন্দম সাহা সরদারের সংগ্রহ ও তথ্য সংকলনে প্রদর্শনীটি চলবে ২৩ অগস্ট (১২-৭টা) পর্যন্ত।
হে একা সখা
আত্মজনের মৃত্যুর মিছিলে শোকাহত রবীন্দ্রনাথ তাঁর একলা পথ চলাকে রমণীয় করতে চেয়েছেন তাঁরই অন্তরের আলোয়। যখন আত্মহত্যার কথা ভেবেছেন তখন নিজেই সেই ইচ্ছামূলকে ছিন্ন করবেন বলে স্থিতধী থেকেছেন। পুত্র রথীন্দ্রনাথকে চিঠিতে লিখছেন, “এর ওষুধ আমার অন্তরেই আছে... মৃত্যুর যে গুহার দিকে নেমে যাচ্ছিলুম তার থেকে আবার আলোকে উঠে আসবো সন্দেহ নেই।” এমনই মৃত্যু-সুর আর একাকীত্বে ঘেরা রবীন্দ্রনাথের ছবি উঠে আসবে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাবনায় ‘শিল্পীমন’-এর নিবেদন ‘হে একা সখা’ অনুষ্ঠানে। পাঠে দেবশঙ্কর হালদার এবং সুকৃতি লহরী। গানে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়। আলো চন্দন সেন। ৯ অগস্ট জি ডি বিড়লা সভাগারে, সাড়ে ৬টায়।
ঐতিহ্য
ঊনসত্তর ছুঁই ছুঁই শীতলকুমার দাস কাঠখোদাইয়ে রূপ দিচ্ছেন পুরনো ছবি। হাতেখড়ি পিতৃবন্ধু বৈদ্যনাথ দাসের কাছে। সন্দেশের ছাঁচে মাছ ময়ূর প্রজাপতি পালকি বরকনে বুড়োবুড়ি গলদা চিংড়ি কী নেই তাঁর সৃষ্টির ঝুলিতে।
শীতলবাবু আজও সক্রিয় রবীন্দ্র সরণির নিজস্ব ‘ওরিয়েন্টাল আর্ট কনসার্ন’-এ, সঙ্গে এখন কাজে নেমেছেন দুই ছেলে। ললিতকলা অ্যাকাডেমির কলকাতা আঞ্চলিক কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য নাটক সঙ্গীত দৃশ্যকলা অ্যাকাডেমি, রবীন্দ্রভারতী-র সহযোগিতায় আয়োজন করেছে ‘ক্রস-রোড আর্ট ওয়ার্কশপ/ হেরিটেজ ইন কনটেমপোরারি পার্সপেক্টিভ’ নামে কর্মশালা, চলবে ৯ অগস্ট পর্যন্ত। এখানে চিত্পুরের ঐতিহ্যবাহী কাঠখোদাই, লিথো-সহ নানা শিল্পের কাজ হচ্ছে, যা দেশবিদেশে প্রদর্শিত হবে, রাখা হবে স্থায়ী সংগ্রহেও, জানালেন কর্মশালার কোঅর্ডিনেটর শিল্পী অসিত পাল। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
সুকন্যা
কিছু মানুষ অন্যদের ভালবেসে নিজেরা তাড়াতাড়ি চলে যান। সুকন্যার চলে যাওয়াটাও যেন তেমনই। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ভাইঝি, গোখেল স্কুলের এই কৃতী ছাত্রীটি প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার পর হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে এম এসসি-তে ফার্স্ট ক্লাস। পরে শ্রী শিক্ষায়তন কলেজে অঙ্কের বিভাগীয় প্রধান হন। বিয়ে হয়েছিল খিদিরপুর বাকুলিয়া হাউসের মুখোপাধ্যায় পরিবারে। নব্বইয়ের দশকে সুকন্যা আক্রান্ত হন ক্যানসারে। অসম্ভব মনের জোরে লিখেছিলেন আমিই জিতেছি। বইটি আজও ক্যানসার রোগীদের প্রেরণা জোগায়। লেখালেখি, আঁকার পাশাপাশি সুকন্যা ছিলেন ‘হিতৈষিণী’র সঙ্গে, যে সংস্থা ক্যানসার আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ায়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি চলে গেলেন সুকন্যা। মাত্র ৫২ বছরে। সাংস্কৃতিক সংস্থা কলাভৃত্ তাঁর স্মৃতিতে প্রতি বছর গোখেলের মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারীকে বৃত্তি দেবে।
হেমচন্দ্রের বাড়ি
ন’বছর বয়সে খিদিরপুরে পা রেখেছিলেন দেশপ্রেমিক কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৯০৩)। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় আসেন ১৮৪৩-এ, আর মধুসূদন আরও আগে, ১৮৩১-এ। এই ত্রয়ীকে নিয়েই তো ‘কবিতীর্থ’। নামটিই সার, তিন কবির স্মৃতি এখন মুছে যেতে বসেছে। ঐতিহ্যবাহী বাড়ির তালিকায় তিন জনের বাড়িই আছে, কিন্তু সংরক্ষণ কোথায়? সদ্য ভেঙে পড়ল হেমচন্দ্রের বাড়ির একাংশ (সঙ্গের ছবি)। বাকি অংশের অবস্থা সঙ্গিন।
বিস্মৃত ইতিহাস
বাংলার তফশিলিদের বিরাট অংশ, নমশূদ্র কৃষক সম্প্রদায়, বাস করতেন পূর্ববঙ্গের ছয়-সাতটি জেলায়। ১৯৪৭-এর পরেই তাঁদের অধিকাংশ কিন্তু দেশ ছাড়েননি। বরং ১৯৫০-এর শুরু থেকে তাঁরা দলে দলে সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসতে শুরু করেন—এটা চলল এক দশকেরও বেশি। এই মূলত কৃষক দলিত বাস্তুহারাদের কথাই ৫ অগস্ট সাড়ে ছ’টায় বাংলা আকাদেমিতে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতায় বলবেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব ভারতে দেশভাগের ইতিহাসে দলিতদের স্থান নিয়ে একটি গবেষণা প্রকল্পে এখন যুক্ত রয়েছেন তিনি।
স্মৃতিমেদুর
আমি এক সময় ওডোনিল বিক্রি করতাম জানেন? পশ্চিম পুটিয়ারিতে যেখানে থাকতাম, বাথরুমটা ছিল অনেকটা দূরে। ক্লাস সিক্স থেকেই নেশা করা শুরু, সেই অভাবী জীবনে এক জন প্রস্তাব দিয়েছিল, একটা ব্যাগ কোথাও পৌঁছে দিতে। ধরা পড়লে জেল, নইলে এক লাখ টাকা। তখন সচ্ছলতা ও দারিদ্র পাশাপাশি। একটা সময় বাড়িতে দুটো গাড়ি ছিল, আর একটা সময় রেশনের চাল খেতে হত। তাই জীবনের ধূসরতাগুলোকে চিনেছিলাম। সেই জীবনটাই আরও এক বার দেখার সুযোগ হল।” ফোনের ওপারে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘বুনো হাঁস’ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পরিচালক স্মৃতিমেদুর। ঢাকুরিয়া ব্রিজে রাত কাটানো, বাসে যাওয়ার সময় সরল সাঁওতাল মেয়েটিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে স্পন্ডিলাইটিস হওয়া—অমলের সঙ্গে বড্ড মিল। “গল্পটা পড়ে তাই আর এক মুহূর্ত ভাবিনি।” ভাল করে বাঁচার সাধ ছাপোষা অমলকে কোথায় নিয়ে ফেলে—ছবির মূল গল্প সেটাই। অমলের চরিত্রটির জন্য দেবকে নিয়ে শ্যুটিং করেছেন চিত্পুরের ব্যস্ত রাস্তায়। অনিরুদ্ধর কথায়, ‘‘ছবির সব চরিত্রগুলোই আমার দেখা। ক্লাস সেভেনে উঁচু ক্লাসের বন্ধুদের সঙ্গে নিছক কৌতূহলে নিষিদ্ধ পল্লিতে যাওয়ার পর এক অপরূপ সুন্দরী বয়স্ক মহিলা ফ্যান্টা খাইয়ে বলেছিলেন, তুমি বাবা এখানে কেন? ছবিতে অমলও এমন ঘটনার মুখোমুখি! সমরেশ মজুমদারের গল্প ইন্ধন জুগিয়েছিল আর শ্যামল সেনগুপ্তের চিত্রনাট্যে আশির দশকের আমাকে মাঝে মাঝেই খঁুজে পেয়েছি। জিন্দেগি কভি থামতি নেহি...।’’ আবেগপ্রবণ অনিরুদ্ধ। ১৫ অগস্ট মুক্তি পাচ্ছে ‘বুনো হাঁস’।
গাঁধীর আদর্শে
নব্বইয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেও তাঁর কলম আজও সচল। সম্প্রতি প্রকাশিত শতাব্দীর ভাবনা বইটিতে পাওয়া গেল তাঁর বিবিধ চিন্তার ফসল। শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় গাঁধীর আদর্শে একনিষ্ঠ, খাদির উন্নতিতে নিবেদিত প্রাণ। বিহারের সিংভূম জেলায় জন্ম ১৯২৬-এর ১০ মার্চ। বাবা নিশিকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্বদেশপ্রেমে দীক্ষিত ছিলেন। স্কুলেই শৈলেশকুমার গাঁধীজির আদর্শে আকৃষ্ট হন। ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে জেল খাটেন। যোগ দেন ভূদান আন্দোলনে । সেবাগ্রাম সর্বসেবা সংঘের সক্রিয় কর্মী হিসেবে বহু কাজে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬১-’৮৪ খাদি কমিশনে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। পশ্চিমবঙ্গে গাঁধীজির শতবর্ষ উদ্যাপনে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ১৯৮৪-২০০২ নয়াদিল্লির ‘গাঁধী স্মারক নিধি’র সম্পাদক ছিলেন, বছর দেড়েক ‘গাঁধী পিস ফাউন্ডেশন’-এর সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক ‘গাঁধী হেরিটেজ মিশন’ গঠন করে শৈলেশবাবুকেই প্রথম প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মনোনীত করে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এবং দিল্লিতে দীর্ঘ কাল থাকার পর ২০০২ থেকে কলকাতার বাসিন্দা। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় গাঁধী, মৌলানা আজাদ, নেহরু, সুভাষের চিন্তাভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। রাজনীতি, সমাজনীতি ও ঐতিহাসিক বিষয়ে তাঁর প্রায় চল্লিশটি বই আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সর্বোদয় ও শাসনমুক্ত সমাজ, গান্ধিজির গঠনকর্ম, জিন্না: পাকিস্তান, বাংলা ও বাঙালি, দাঙ্গার ইতিহাস, ভারত ভাগ ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি। পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার, বাংলা আকাদেমির অন্নদাশঙ্কর পুরস্কার। ভারত সরকার তাঁকে সম্মানিত করেছে পদ্মভূষণ-এ। গাঁধীবাদী মানুষটি আজও সক্রিয় রয়েছেন লেখাপড়ার মধ্যেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy