Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

লালদিঘির দক্ষিণে এই অঞ্চলের সব থেকে সুন্দর ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্য স্ট্যান্ডার্ড লাইফ অ্যাসুরেন্স-এর বাড়িটি এত দিন ছিল সব থেকে অবহেলিত। বাড়িটির নকশা করেছিলেন স্থপতি ফ্রেডেরিক উইলিয়াম স্টিভেনস, যার নকশায় আগেই তৈরি হয়েছিল মুম্বইয়ের ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস। আজকের টেলিফোন ভবনের বিপরীতে এই বাড়ির কাজ শুরু হয় ১৮৯৪-এ, তৈরি হতে লেগেছিল দু’বছর। এত ভাল রিলিফ-ভাস্কর্য খুব কম বাড়িতেই রয়েছে।

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০

লালদিঘির ঐতিহ্য

লালদিঘির দক্ষিণে এই অঞ্চলের সব থেকে সুন্দর ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্য স্ট্যান্ডার্ড লাইফ অ্যাসুরেন্স-এর বাড়িটি এত দিন ছিল সব থেকে অবহেলিত। বাড়িটির নকশা করেছিলেন স্থপতি ফ্রেডেরিক উইলিয়াম স্টিভেনস, যার নকশায় আগেই তৈরি হয়েছিল মুম্বইয়ের ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস। আজকের টেলিফোন ভবনের বিপরীতে এই বাড়ির কাজ শুরু হয় ১৮৯৪-এ, তৈরি হতে লেগেছিল দু’বছর। এত ভাল রিলিফ-ভাস্কর্য খুব কম বাড়িতেই রয়েছে।

ছাদের উপর রয়েছে চমত্‌কার গম্বুজ, আর তার উপর হাওয়া মোরগ। প্রধান ফটকের মাথায় স্ট্যান্ডার্ড লাইফ অ্যাসুরেন্সের লোগো-স্বরূপ ‘প্যারাবল অফ ওয়াইজ অ্যান্ড ফুলিশ ভার্জিনস’। দীর্ঘদিন গাছের ডাল ও শিকড়ে ঢেকে যাওয়া ও অবহেলায় শ্রীহীন বাড়িটি পূর্ত দফতরের সিটি ডিভিশনের চেষ্টায় সংস্কারের ফলে ক্রমশ শ্রী ফিরে পাচ্ছে। পাথরের মোটিফগুলো জীবন্ত হচ্ছে, সঙ্গে ফিরছে ঐতিহ্যের জৌলুস। মূলত রাজ্য যুব কল্যাণ দফতর ও পুলিশ বিভাগ (যারা এই বাড়ির বিভিন্ন অংশে রয়েছে) এ কাজের অর্থ সংস্থান করেছে।

বাড়ির মাঝে ভ্যান্সিটার্ট রো। তার পুবের অংশ ভিতরে-বাইরে সম্পূর্ণ হয়ে গেছে (সঙ্গের ছবি), পশ্চিমের অংশে কাজ চলছে, আশা করা যায় এই বছরের মধ্যেই তা সম্পূর্ণ হবে। নতুন বছরে অন্তত এই শহরের বিলীয়মান ঔপনিবেশিক স্থাপত্য-ঐতিহ্যের একটি চমত্‌কার নমুনা পুরোপুরি প্রাণ ফিরে পাবে।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

গ্রন্থচর্চা

বাংলায় শুধু বইকে কেন্দ্র করে পত্রিকার অভাব পূর্ণ করেছে ‘১৭৭৮ গ্রন্থচর্চা’ (সম্পা: অশোক উপাধ্যায়)। বই নিয়ে যে কত দিক থেকে আলোচনা হতে পারে, তুলে আনা যেতে পারে কত না দুর্লভ চিত্র-অলংকরণ, তা এই পত্রিকার পাতা না ওলটালে বোঝা যাবে না। দ্বিতীয় সংখ্যার (যদিও রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম মানতে গিয়ে এটি প্রথম সংখ্যা হিসেবেই চিহ্নিত) শুরুতেই বাংলা মুদ্রণ নিয়ে যোগেন্দ্রনাথ ঘোষের ১৮৭৮-এর দুর্লভ রচনা, আবার ‘পোলিশ রিপোর্টাজ’ নিয়ে সায়ম ঘোষের নিবন্ধ। এই দুই মেরুর মাঝে আছে আশীষ লাহিড়ীর ‘এক অনুবাদকের আত্মনির্মাণ’, পাখিচর্চার বিচিত্র বইয়ের কথা, উপেন্দ্রকিশোরের গ্রন্থচিত্রণ, বই-সংবাদ, বাংলা পুথির লিপিকাল, হরিহরমঙ্গল-এর খোদাইচিত্র, শরত্‌চন্দ্রের সঙ্গে বসুমতী-র বই ছাপার চুক্তি, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত ‘স্মরণ’, আর নিয়মিত আলোচনায় বিশ্বভারতীর বই, কিংবা লিখনশিল্পের কথা। অজস্র সুমুদ্রিত ছবি পত্রিকাটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক

সুদূর অতীতেই বৌদ্ধধর্ম তার সৃষ্টিকেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল দূর-দূরান্তরে। তাই শুধু ভারতে নয়, বৌদ্ধধর্মকে কেন্দ্র করে শিল্প সৃষ্টি হয়েছে এশিয়ার নানা প্রান্তে। এই শিল্পের বিপুল সম্ভার সংরক্ষিত রয়েছে কলকাতার ভারতীয় সংগ্রহশালায়। তাই নিয়েই এ বার আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন চিন আর জাপানে। পাথর, কাঠ ও ধাতুর ভাস্কর্য, পুথিচিত্র মিলিয়ে মোট ৯১টি নিদর্শন দেখানো হবে প্রথমে চিনের সাংহাই মিউজিয়াম, তার পর জাপানের টোকিয়ো ন্যাশনাল মিউজিয়ামে, ডিসেম্বর ২০১৪ থেকে মে ২০১৫ পর্যন্ত। ভারতীয় সংগ্রহশালার ক্যাপ্টেন সুমন্ত রায় ও অনসূয়া দাস এখন পরিকল্পনার সমন্বয়সাধনে ব্যস্ত। আজ সন্ধ্যা ৬টায় আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী হল-এ প্রদর্শনীর পোস্টারের আনুষ্ঠানিক প্রকাশে প্রধান অতিথি সুরঞ্জন দাস, থাকবেন চিন ও জাপানের কনসাল জেনারেলরাও। সঙ্গের ছবিতে নালন্দা থেকে পাওয়া ব্রোঞ্জের বুদ্ধমূর্তি।

সংঘাত ও নারী

নারী কেবল ‘অর্ধেক আকাশ’ই নয়, সংঘাতদীর্ণ এই দুনিয়ায় দ্বন্দ্বে জড়ানো গোষ্ঠীর মধ্যে আলোচনা চালিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, দর-কষাকষি করে শান্তি ফেরাতে তাদের জুড়ি নেই, এ কথা আজ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। আসলে, যুদ্ধ/হিংসা বিষয়ে নারীদের দৃষ্টি ও উপলব্ধি সম্পূর্ণ ভিন্ন। অথচ, বিশ্বের নানা প্রান্তে ক্রমবর্ধমান হিংসাত্মক ঘটনায় মেয়েরাই শারীরিক-মানসিক-আর্থিক-সামাজিক দিক থেকে সবচেয়ে আক্রান্ত, নিরাপত্তাহীন। যেমন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বা হিংসা-পর্বের নেপালে মেয়েরা সবচেয়ে আক্রান্ত, আবার তাঁরাই শান্তি প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে সক্রিয়। এই সব নিয়েই ক্যালকাটা রিসার্চ গ্রুপ আর অসলো-র পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ৬-৮ নভেম্বর কলকাতায় ‘জেন্ডার, ক্ষমতায়ন ও দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ভারত, নেপাল-সহ কলম্বিয়া, কানাডা, নরওয়ের গবেষক-কর্মীরা এখানে আসছেন। অনুষ্ঠিত হবে দু’টি আলোচনাচক্র: ৬ নভেম্বর অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ (সন্ধে ৬টা) এবং ৭ নভেম্বর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিকেল ৪টে)।

সাফল্য

চোখের প্লাস্টিক সার্জারি শুনতেই অবাক লাগে। চোখের পাতায় টিউমার বা ক্যানসার হলে এ হেন অস্ত্রোপচারের দরকার পড়ে। যদিও কলকাতা তথা সারা ভারতে এই চিকিত্‌সা করে থাকেন খুব কম চিকিত্‌সকই। কলকাতায় গত পনেরো বছর ধরে এই বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন চক্ষুচিকিত্‌সক অর্ণব বিশ্বাস। ইতিমধ্যে সাত হাজারের বেশি এমন অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি। সম্প্রতি প্রকাশিত আইলিড টিউমার (স্প্রিংগার ভেরলাগ) বইটিতে অর্ণব তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে প্রায় এক হাজার রোগীর ক্ষেত্রে এই চিকিত্‌সা সম্বন্ধে জানিয়েছেন। বিশিষ্ট এই জার্মান প্রকাশনা সংস্থা থেকে এই প্রথম কোনও ভারতীয় চিকিত্‌সকের চোখের অসুখ বিষয়ে বই প্রকাশিত হল।

সংস্কৃতের প্রসারে

সংস্কৃত শিক্ষাজগতের দুই পণ্ডিত অশোকনাথ ও গৌরীনাথ শাস্ত্রীর স্মরণে ২০১০-এ তৈরি হয় অশোকনাথ-গৌরীনাথ শাস্ত্রী স্মারক সমিতি। সংস্কৃতকে সাধারণের মধ্যে প্রচার ও প্রসারই লক্ষ্য এই সমিতির। রামকৃষ্ণ মিশনের তত্ত্বাবধানে যে সংস্কৃত শিক্ষার প্রবর্তন হয়েছে, তাতেও উদ্যোগী তারা। সংস্কৃত চর্চাকারীদের সহায়তার নানা পরিকল্পনা আছে, ইতিমধ্যেই সংস্কৃত শিক্ষার্থীদের পুরস্কারের ব্যবস্থা হয়েছে। সম্পাদক বিমানকুমার ভট্টাচার্য জানালেন, ৭ নভেম্বর বিকেল ৪টেয় শ্রীঅরবিন্দ ভবনে সমিতির চতুর্থ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। কবি রজনীকান্ত সেনকে নিয়ে আলোচনা, সংগীতশিল্পী নিশীথ সাধুর সংবর্ধনা, সঙ্গে তাঁর পরিচালিত কাকলি গোষ্ঠীর রজনীকান্তের সংগীত।

সাংস্কৃতিক

পঞ্চাশ বছর আগে খিদিরপুর কবিতীর্থ অঞ্চলে কুমারকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় নাচের স্কুল ‘পাঁয়জোর’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ছেলে-বউমা অপূর্ব-ইন্দ্রাণী শাস্ত্রীয় সংগীতের জগতে এই প্রজন্মের দু’টি পরিচিত নাম। দু’জনের প্রতিষ্ঠিত ‘মঙ্গলাচরণ’ সংস্থার প্রথম বার্ষিকী ও ‘পাঁয়জোর’-এর পঞ্চাশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৬ নভেম্বর রবীন্দ্রসদনে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, বিজয় কিচলু প্রমুখের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হবে ‘মঙ্গলাচরণ সংগীত সম্মেলন’ (দেড়টা থাকে ন’টা)। অন্য দিকে ৯ নভেম্বর উইভার্স স্টুডিয়োতে অনুষ্ঠিত হবে ‘রবিরাগে-অনুরাগে’। শুধু সরোদ (রাজীব চক্রবর্তী) ও কি-বোর্ড (রাণা সরকার) সহযোগে রবীন্দ্রগান গাইবেন সুদেষ্ণা সান্যাল রুদ্র। বসিরহাটের মৌসুমী রায় পনেরো বছর আগে একক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। মহিলা-পরিচালিত দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার সংস্থাটি অনেক দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছে। সংস্থার ১৫ তম জন্মদিনে, ১৫ নভেম্বর সন্ধে ৬টায় রোটারি সদনে এক অনুষ্ঠানে তিলোত্তমা মজুমদার শোনাবেন রবীন্দ্রগান। থাকবে অমিতা দত্তর নাচ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান।

বিস্মরণ

‘মানুষের জন্যে ছবি করি। মানুষ ছাড়া আর কিছু নেই। সর্বশিল্পের শেষ কথা হচ্ছে মানুষ। আমি আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় সেই মানুষকে ধরবার চেষ্টা করি।’ এমন বিশ্বাসকে যিনি নিজের শিল্পে প্রামাণ্য করে তুলতে পারেন তাঁর নাম ঋত্বিককুমার ঘটক। আগুনের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া এই চলচ্চিত্রকারকে কি আমরা ক্রমশই বিস্মৃত হচ্ছি, না হলে এ-শহর কী করে ভুলে গেল তিনি নব্বইতে পা দিচ্ছেন আগামী কাল! ১৯২৫-এ ৪ নভেম্বর তাঁর জন্ম। তবু ভাল, কাল নন্দনে সন্ধে ৬টায় তাঁর জন্মদিন উদ্যাপন করবে নন্দন এবং ঋত্বিক মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। দেখানো হবে তাঁর তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিগুলি, ‘ফিয়ার’ থেকে ‘আমার লেনিন’ অবধি। অন্য দিকে বিনোদিনী নাট্যচর্চার উদ্যোগে ৯-১৬ নভেম্বর ‘নাট্য তথ্যচিত্র উত্‌সব’, অ্যাকাডেমির সামনে রোজ সন্ধে ৬-৮টা, থাকবে বিভিন্ন নাট্যব্যক্তিত্বকে নিয়ে তথ্যচিত্র। মায়া ঘোষকে সেখানে বিনোদিনী-সম্মানে ভূষিত করা হবে।

শিশুর অধিকার

অবহেলিত শিশুদের উপর থেকে ‘অবাঞ্ছিত’ তক্মা তুলে ফেলে সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করে চলেছে ‘ক্রাই’ (চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ) পঁয়ত্রিশ বছর ধরে। এমন অভিপ্রায় থেকেই এক প্রদর্শনীর আয়োজন, ‘আর্ট ফর ক্রাই’ আইসিসিআর-এর যামিনী রায় গ্যালারি-তে, ৮-১৪ নভেম্বর। উদ্বোধন করবেন অপর্ণা সেন, আর শিশুদিবসেই শেষ হবে প্রদর্শনীটি। ছবির বিক্রয়লব্ধ অর্থ শিশুশ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় হবে। কিউরেটর শৌনক চক্রবর্তীর কথায়, ‘প্রবীণ-নবীন বিশিষ্ট বাঙালি চিত্রকর এবং ভাস্করদের সৃষ্টিকর্মের বিপুল সম্ভার দেখতে পাবেন দর্শক।’ সঙ্গে পরিতোষ সেনের আঁকা ছবি।

কলেজে নাট্যচর্চা

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ১৯৩১-এ জন্ম নেয় ‘জ্যাভেরিয়ান থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটি’। বিভিন্ন সময়ে শম্ভু মিত্র, উত্‌পল দত্ত, অনিল চট্টোপাধ্যায়, রমাপ্রসাদ বণিক প্রমুখ এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিগত তিন দশক সোসাইটির নাট্যচর্চাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন রসায়নের বিভাগীয় প্রধান আশিস সিদ্ধান্ত। আজ কলেজের ফাদার দেপেলচিন অডিটোরিয়ামে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় অ্যান্টন চেকভ-এর ‘দ্য ডেথ অব এ ক্লার্ক’ অবলম্বনে বাংলা নাটক ‘হাচ্ছো’ মঞ্চস্থ হবে আশিস সিদ্ধান্তের অনুবাদ পরিচালনা ও অভিনয়ে। দেখানো হবে কলকাতা আমেরিকান সেন্টারের সৌজন্যে প্রাপ্ত ছায়াছবি ‘নাইট জার্নি’।

শর্মিলাকে নিয়ে

শর্মিলা চানুকে তত দিনে অনেকটাই জানা-দেখা-পড়া হয়েছে সীমা মুখোপাধ্যায়ের। দীপ্তিপ্রিয়া মেহরোত্রার বই দ্য বার্নিং ব্রাইট বা কবিতা জোশীর তথ্যচিত্র। এমনকী শর্মিলাকে নিয়ে তীর্থঙ্কর চন্দের নাটক ‘ছায়াপথ’ (প্রযোজনা: রঙরূপ) পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে। এ মাসেই পনেরো বছরে পড়বে শর্মিলার অনশন, ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৫৮’-র প্রতিবাদে যার শুরু। তবু কোথাও একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে মনে হচ্ছিল সীমার, ছুটলেন মণিপুরে। মানবাধিকারকর্মী-সহ শর্মিলার মা ও দাদার সঙ্গে কথা বললেন। কথা হল শর্মিলার সঙ্গে, হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায়। তাঁর অসহায়তা, অনুভব, অদম্য সাহস, রাজনৈতিক আদর্শ, অবিচল ধৈর্য মুগ্ধ করল সীমাকে। ‘শুনতে-শুনতে মনে হচ্ছিল তাঁর এই শান্তিপূর্ণ অনশন আন্দোলন শুধু তাঁর রাজ্যের নয়, গোটা দেশের অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমরাও তো একই রকম রাজনৈতিক অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার ভিতর দিয়ে চলেছি। হ্যঁা, ঘোষিত মিলিটারি শাসন নেই বটে, কিন্তু...’ বলছিলেন সীমা। ডাকসাইটে অভিনেত্রী সীমার প্রথম পরিচালনা ‘যে জন আছে মাঝখানে’, এর পর একে একে... আবর্ত, শূন্যপট, মুখোশ নৃত্য, জলছবি, মায়ের মতো, অধরা মাধুরী, নীল রঙের ঘোড়া, বোম্বাগড়ের রাজা, কবিকাহিনী। বেশ কিছু নাটকও লিখেছেন। অভিনয়ের হাতেখড়ি পিতা অজিতকুমার ঘোষের কাছে, তারপর শিখেছেন কুমার রায় অসিত মুখোপাধ্যায় বিভাস চক্রবর্তী এবং শাঁওলী মিত্রের কাছে। ‘ছায়াপথ’ প্রথম অভিনয় ১৫ নভেম্বর দুপুর ৩টেয় অ্যাকাডেমিতে, সেখানে পরের অভিনয় ১৪ ডিসেম্বর সন্ধে ৬-৩০-এ।

নব্বইয়ে নারায়ণ

শুকতারা অফিসে সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করতে এলেন বছর পঁচিশের এক তরুণ। সালটা ১৯৫০। উদ্দেশ্য ফ্রিলান্স অলংকরণ-শিল্পী হিসেবে কাজের সুযোগ পাওয়া। ভাদ্র ১৩৫৭-র শুকতারায় প্রথম প্রকাশিত হল শিল্পীর আঁকা। ৬৫ বছর অতিক্রম করে আজও ছবি এঁকে চলেছেন সেই চিরতরুণ শিল্পী, নারায়ণ দেবনাথ। সকলের কাছে তাঁর পরিচয় অর্ধশতাব্দী অতিক্রম করা হাঁদাভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেটের স্রষ্টা হিসেবে। ১৯২৫ সালের অক্টোবরে হাওড়া শিবপুরের পৈতৃক বাড়িতে জন্ম। বাবা হেমচন্দ্র ছিলেন পেশায় স্বর্ণকার। মুখচোরা ও লাজুক স্বভাবের নারায়ণ-এর ছেলেবেলার আইকন ছিলেন হলিউডি সিনেমার ‘টারজান’। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে বডিবিল্ডার, নয় গায়ক হবেন। শেষে ১৯৪০-এর দশকে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজ থেকে ফাইন আর্টস-এ প্রশিক্ষণ নেওয়া নারায়ণ দেবনাথ বেছে নিয়েছিলেন বাণিজ্যিক অলংকরণ শিল্পীর জীবিকা। প্রথম কমিক্স আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত বিমল ঘোষের কাহিনি অবলম্বনে রবীন্দ্রজীবনী ‘রবি ছবি’ (মে ১৯৬১)। এরপর একে একে হাঁদাভোঁদা (’৬২), বাঁটুল দি গ্রেট (’৬৫), শুঁটকি আর মুটকি (’৬৪), পটলচাঁদ (’৬৯), নন্টে-ফন্টে (’৬৯), কৌশিক রায় (’৭৫), বাহাদুর বেড়াল (’৮২), ডানপিটে খাঁদু (’৮৩), বটুকলাল (’৮৪)-এর মতো জনপ্রিয় কমিক্স চরিত্র। ২০১৩-য় ‘সাহিত্য অকাদেমি’ তাঁকে শিশুসাহিত্য পুরস্কার দেয়। নব্বই বছরে পা দিয়েও অক্লান্ত ‘নারায়ণী’ তুলি-কলম! এই উপলক্ষে বছরভর বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছেন তাঁর অনুরাগী ভক্ত ও কমিক্স সংকলক শান্তনু ঘোষ। প্রকাশিত হবে দুষ্প্রাপ্য ছবিতে গল্প, আছে জন্মদিন পালন, প্রদর্শনী, সেমিনার, নতুন কমিক্স শিল্পীদের জন্য পুরস্কার, ওয়েবসাইট চালু ইত্যাদি। তৈরি হচ্ছে চন্দন দাস পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘৯০-তে নারায়ণ দেবনাথ’।

karcha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy