Advertisement
E-Paper

জেলে সুরক্ষা না থাকার অজুহাত কর্মীর অভাব

থাকার কথা ছ’জন বন্দি পিছু এক জন করে কারারক্ষী। রয়েছেন ৩৫ জন পিছু এক জন। নিরাপত্তার এই হাল রাজ্যের সব চেয়ে বড় এবং ‘হাই প্রোফাইল’ কেন্দ্রীয় সংশোনাগারেই শুধু নয়, কলকাতার প্রেসিডেন্সি, দমদম জেল থেকে শুরু করে কমবেশি রাজ্যের সব জেলেই। শুক্রবার ভোরে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি পালানোর প্রেক্ষিতে এক কারাকর্তার বক্তব্য, “এর পরেও যে প্রতিদিন আমাদের জেল থেকে বন্দি পালায় না, সেটা কারা দফতরের কৃতিত্ব নয়, বন্দিদের বদান্যতা।”

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০১:০৯

থাকার কথা ছ’জন বন্দি পিছু এক জন করে কারারক্ষী। রয়েছেন ৩৫ জন পিছু এক জন। নিরাপত্তার এই হাল রাজ্যের সব চেয়ে বড় এবং ‘হাই প্রোফাইল’ কেন্দ্রীয় সংশোনাগারেই শুধু নয়, কলকাতার প্রেসিডেন্সি, দমদম জেল থেকে শুরু করে কমবেশি রাজ্যের সব জেলেই। শুক্রবার ভোরে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি পালানোর প্রেক্ষিতে এক কারাকর্তার বক্তব্য, “এর পরেও যে প্রতিদিন আমাদের জেল থেকে বন্দি পালায় না, সেটা কারা দফতরের কৃতিত্ব নয়, বন্দিদের বদান্যতা।”

বাস্তবিকই তাই। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলেই রয়েছেন আফতাব আনসারি থেকে শুরু করে সুদীপ্ত সেন, ছত্রধর মাহাতো, শম্ভুনাথ কাওয়ের মতো ‘হাই-প্রোফাইল’ বন্দিরা। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আফতাবকে জেলের বাইরে বার করা হয় না। অথচ, সেই জেল থেকে কোনও সুড়ঙ্গ কেটে নয়, নিশ্চিন্তে এক ঘণ্টা ধরে ‘অপারেশন’ চালিয়ে চম্পট দিল তিন অপরাধী।

শুধু এই ঘটনাই নয়, গত তিন মাসে এই জেলেই বন্দিদের কাছ থেকে দু’শোরও বেশি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। আলিপুর জেলে বসেই গত জুলাইয়ে শম্ভুনাথ কাও ফোন করেছিলেন শাসকদলের এক জনপ্রতিনিধিকে। এই জেলে বসেই জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছেন খাদিম-কর্তা অপহরণ মামলায় অন্যতম অভিযুক্তেরা।

১৯৮৭ সালে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে ছ’জন নকশালপন্থী বন্দি পালিয়েছিল। ২০০৩ সালে সেই দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকেই পালিয়েছিল শেখ বিনোদ-সহ ছয় বন্দি। তার পরে আলিপুর জেলের এ দিনের ঘটনাই কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে সব চেয়ে বড় বন্দি পালানোর ঘটনা বলে জানাচ্ছেন এ রাজ্যের জেলকর্তারা।

এমন হাল কেন? এর পিছনে তিনটি কারণ রয়েছে বলে দাবি রাজ্য কারাকর্তাদের। এক, জেলে অধিক মাত্রায় বন্দিদের ভিড় এবং সে তুলনায় কারারক্ষীর সংখ্যা অনেক কম। দুই, জেলকর্মীদের একাংশের বন্দিদের সঙ্গে যোগসাজশ এবং তিন, সঠিক ভাবে নজরদারির অভাব।

কারা দফতরের হিসেব বলছে, আলিপুর জেলে বন্দি রয়েছেন আঠারোশো। হিসেবমতো কারারক্ষী থাকার কথা অন্তত তিনশো জন। সে জায়গায় রয়েছেন মাত্র দেড়শো। একসঙ্গে পাহারায় থাকতে পারেন মাত্র ৫০ জন। এর মধ্যে আবার কারারক্ষীদের একাংশের সঙ্গে বন্দিদের যোগসাজশ গড়ে উঠেছে বলে জানাচ্ছেন কারাকর্তারাই। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “কারারক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া বন্দিদের কাছে মোবাইল পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে আমরা জেনেছি, কারারক্ষীরাই বন্দিদের মোবাইল সরবরাহ করেন।” এমনকী, তিন বন্দি পালানোর এই ঘটনাতেও জেলকর্মীরা যুক্ত রয়েছেন বলে প্রাথমিক সন্দেহ পুলিশের। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, “বৃহস্পতিবার রাতে যে ওই এলাকায় কারারক্ষী অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম রয়েছে, তা পলাতক বন্দিরা জানল কী করে!”

বন্দি পালানোর পিছনে জেলের নজরদারি এবং পরিকাঠামোগত ত্রুটি যে রয়েছে, তা-ও মেনে নিচ্ছেন কারা দফতরের কর্তারা। যে সেল থেকে তিন বন্দি পালিয়েছে, ওই সেলের গরাদগুলি জং ধরে ক্ষয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা দীর্ঘদিন ধরে সারানো হয়নি। এমনকী, ভিতরের নিরাপত্তা পাঁচিলে কাঁটাতারের বেড়াও অনেক জায়গাতেই জং ধরে খুলে গিয়েছে। সারানো হয়নি তা-ও। সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, আলিপুর জেলের যে পানিশমেন্ট সেল থেকে তিন বন্দি পালিয়েছে, সেখানে ক্লোজড সার্কিট টিভিও দীর্ঘদিন ধরে খারাপ। কিন্তু সব কিছু জানা সত্ত্বেও তা সারানোর ব্যবস্থা করা হয়নি।

কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, “ঠিকমতো নজরদারি হলেই জেলের ভিতরের এই সব ত্রুটি সময়ে সংশোধন করা সম্ভব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়নি। ফলে, ক্রমশ আলিপুর জেলের পরিকাঠামো নষ্ট হয়েছে।” সম্প্রতি আলিপুর জেলে বসে জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরির অভিযোগ উঠেছে। জেল থেকে পাকিস্তানে ফোন করার কথা দিল্লি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে খাদিমকর্তা অপহরণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত শওকতও। এই সব অভিযোগ ওঠার পরে সম্প্রতি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আলিপুর জেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত আইজি বিচিত্রা ভট্টাচার্যকে।

তা সত্ত্বেও অবশ্য এড়ানো গেল না তিন বন্দি পালানোর মতো ঘটনা। এর পিছনে আরও একটি কারণকে দায়ী করেছেন কারাকর্মীদের একাংশ। আলিপুর জেলের এক কারাকর্মীর বক্তব্য, “আগে রাতে দু’ঘণ্টা করে এক-এক জন রক্ষী পাহারা দিতেন। তার পরে ডিউটি পরিবর্তন হত। তাতে কর্মীরাও রাতে অবসর নেওয়ার সুযোগ পেতেন। এখন রাত দশটা থেকে টানা সকাল ছ’টা অবধি ডিউটি দিতে হয়। এতে মাঝরাতের পর থেকে নিরাপত্তা অনেকটাই শিথিল হয়ে যায়। তার সুযোগই নিয়েছে পলাতক বন্দিরা।”

alipore central jail prisoner atri mitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy