Advertisement
E-Paper

তিন সিন্দুকে প্রাপ্তি কিছু সুচ এবং কুড়ি টাকা এক পয়সা

থানার পাঁচিল দিয়ে উঁকি দিচ্ছেন কেউ। কেউ উঠেছেন লাগোয়া বাড়ির ছাদে! শুধু নিজে এলেই হবে না, ডাকতে হবে বন্ধুদেরও। তাই ভিড়ের মধ্যে থেকে এক যুবক চেঁচিয়ে উঠলেন, “অ্যাই গোবিন্দ! আয় আয়। দেখবি না?” সোমবার সকাল থেকে গড়িয়াহাট থানায় যেন ‘উৎসবের’ মেজাজ। উঠোনে চেয়ার-টেবিল পাতা। ছুটোছুটি করে ফ্যান লাগানোর তদারকি করছেন দুই অফিসার। গোপনীয়তা বজায় রাখতে সাদা-নীল কাপড়ে মোড়া থানার গ্রিলও!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০১:৫৯
চলছে সিন্দুক কাটা। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে সিন্দুক কাটা। —নিজস্ব চিত্র।

থানার পাঁচিল দিয়ে উঁকি দিচ্ছেন কেউ। কেউ উঠেছেন লাগোয়া বাড়ির ছাদে! শুধু নিজে এলেই হবে না, ডাকতে হবে বন্ধুদেরও। তাই ভিড়ের মধ্যে থেকে এক যুবক চেঁচিয়ে উঠলেন, “অ্যাই গোবিন্দ! আয় আয়। দেখবি না?”

সোমবার সকাল থেকে গড়িয়াহাট থানায় যেন ‘উৎসবের’ মেজাজ। উঠোনে চেয়ার-টেবিল পাতা। ছুটোছুটি করে ফ্যান লাগানোর তদারকি করছেন দুই অফিসার। গোপনীয়তা বজায় রাখতে সাদা-নীল কাপড়ে মোড়া থানার গ্রিলও!

এই আয়োজন অবশ্য ঠিক উৎসবের নয়। বরং সিন্দুক-রহস্য উন্মোচনের জন্য! ২০০৮ থেকে গড়িয়াহাট থানার মালখানায় পড়ে ছিল তিনটি সিন্দুক। আদালতের নির্দেশে এ দিন তা খোলার ব্যবস্থা করে পুলিশ। ছিলেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার লোকজনও। সিন্দুক ঘিরে প্রায় পদিপিসির বর্মি বাক্স বা প্যান্ডোরার বাক্সের মতোই উৎসাহ ছিল পুলিশ, দমকল ও আমজনতার। থানার বাইরে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ বললেন, “মনে হয়, হিরে-পান্না বেরোবে।” কেউ বা কড়া রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে সিন্দুক ভরা গোছা গোছা টাকার খোয়াব দেখেছেন।

সিন্দুক খুললেই কি গুপ্তধন? অপেক্ষায় কৌতূহলী জনতা।
সোমবার, গড়িয়াহাট থানার সামনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

২০০৮-এ রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে নির্মাণ চলছিল। মাটি খোঁড়ার সময় হঠাৎই ‘ঠং’ করে শব্দ। শ্রমিকেরা দেখেন, মাটির ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সিন্দুক। খবর যায় জমির মালিকের কাছে। পুলিশকে না জানিয়েই রাতের আঁধারে মাটি থেকে তোলা হয় সিন্দুক। তা নিয়ে যাওয়ার সময়ে দেখে ফেলে টহলদার পুলিশ। পরে পুলিশের নজরদারিতেই আবার মাটি খুঁড়ে আরও দু’টি সিন্দুক মেলে। খবর পেয়ে হাজির হন জমিটির পুরনো মালিক। সিন্দুকের মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা গড়ায়। সিন্দুক পড়ে থাকে থানার মালখানাতেই।

সম্প্রতি সিন্দুক খোলা নিয়ে আদালতের নির্দেশ চাউর হতেই রাতারাতি ভিআইপি হয়ে যায় সিন্দুক তিনটি। থানার কর্মীরাই কয়েক জন গিয়ে রোজ দেখে আসতেন। ব্যাপারটা নিয়ে এ দিন একটা উদ্দীপনাও ছিল দমকল-পুলিশে। পাঁচিলের পাশে চিত্র-সাংবাদিকদের এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তাঁদেরই দেখা গেল, পাঁচিলের উপর দিয়ে মোবাইলে সিন্দুক খোলা ক্যামেরাবন্দি করতে।

বেলা সাড়ে বারোটা। থানার উঠোনে গোঁ-গোঁ আওয়াজ করে উঠল মেশিন-করাত। বাইরের ভিড়টাও নড়েচড়ে উঠল। ভিড়ের চাপে থানার গেট প্রায় খুলে পড়ে-পড়ে। সেন্ট্রির বগলের তলা দিয়ে মাথা গলিয়ে দিলেন এক যুবক!

প্রথম সিন্দুক কাটা শেষ। সঙ্গে সঙ্গে সেটি ঘিরে ধরল পুলিশ-দমকল-মালিক পক্ষ। হাতে খাতা-পেন নিয়ে রীতিমতো নোট নিচ্ছেন তাঁরা। কী হল, কী হল ব্যাপারটা এ বার সংবাদমাধ্যমের মধ্যেও। কিন্তু মুখ খুলছেন না কেউই।

কয়েক মিনিট পর। আবার ‘গোঁ..ও...গোঁ..ও’। একটু দূরে শাবল হাতে দাঁড়িয়ে এক দমকল অফিসার। সিন্দুক কাটা হতেই শাবল দিয়ে চাড় দিয়ে ঢাকনা খুললেন। এ বার অবশ্য তেমন উদ্দীপনা ছড়াল না।

এ বার পালা তিন নম্বরের। ধরে-বেঁধে এনে দমকলকর্মীরা করাত চালালেন। ফের চাড় দিয়ে ঢাকনা খোলা। হুড়মুড়িয়ে ভিড় জমল সিন্দুকের চার পাশে। গুপ্তধন মিলল?

আবহাওয়াটা কেমন যেন মুষড়ে পড়া। বাদী-বিবাদী কারও মুখেই আনন্দ নেই। গুপ্তধনের কথা শুনে মুচকি হাসলেন এক দমকল অফিসারও। বললেন, “দাঁড়ান, দাঁড়ান। সব জানতে পারবেন।”

গেটের ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখা গেল, গম্ভীর মুখে কী যেন সব নিয়ে থানার ভিতরে যাচ্ছে পুলিশ। পিছু পিছু আরও অনেকে। মিনিট দশেক পরে বেরিয়ে এলেন এক অফিসার।

কী মিলল? অফিসার বললেন, ৮ বাক্স সুচ, চারটে পাঁচ টাকার নোট, একটা এক পয়সার কয়েন আর কিছু ব্যবসায়িক কাগজ। কয়েনটি ১৯৫৩ সালের। একটি ব্যবসায়িক কাগজে ১৯৬৯ সালের তারিখ মিলেছে। এক পুলিশ অফিসার বললেন, “সুচগুলি কানাডার এক সংস্থার তৈরি।” সব আপাতত পুলিশের হেফাজতে থাকবে। আদালতকে রিপোর্ট দেবে তারা।

খবরটা ছড়াতেই বাইরে জড়ো হওয়া উৎসাহের আগুনে যেন এক ঘটি জল পড়ে গেল। কেউ কেউ বললেন, “এত করে শুধু কুড়ি টাকা এক পয়সা!” কেউ বললেন, “সকাল থেকে দাঁড়িয়ে শুধু সময় নষ্ট হল।”

কী বলছেন সিন্দুকের মালিকানা নিয়ে মামলাকারী দু’পক্ষ? বর্তমানে জমির মালিক একটি জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থা। তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে আগের মালিক মহামায়া পাল ও তাঁর স্বামী মদনমোহন পাল সকাল থেকেই থানায় চেয়ার পেতে বসেছিলেন। সিন্দুক-ভাণ্ডার দেখে মদনমোহন বাবুর প্রতিক্রিয়া, “ভেবেছিলাম, হিরে-সোনা থাকবে। কিন্তু কিছুই মিলল না।”

kuntak chattopadhyay gariahat treasure treasure box
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy