Advertisement
১৭ মে ২০২৪

দুষ্টু গরু সামাল দিতে রয়েছে পৃথক দফতর, নেই শুধু কাজ

এমন একটি পদ যে রয়েছে, সে সম্পর্কে সম্যক ধারণাই নেই লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের অনেকের। খাতায়-কলমে অবশ্য ওই পদাধিকারীর কাজও নেই তেমন। তবু তিনি রয়েছেন। পদটির নাম ওসি (ক্যাট্ল)। আর তাঁর বিভাগটির নাম ক্যাট্ল লাইসেন্সিং সেকশন। কী কাজ এই বিভাগের?

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ০০:২৩
Share: Save:

এমন একটি পদ যে রয়েছে, সে সম্পর্কে সম্যক ধারণাই নেই লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের অনেকের। খাতায়-কলমে অবশ্য ওই পদাধিকারীর কাজও নেই তেমন। তবু তিনি রয়েছেন।

পদটির নাম ওসি (ক্যাট্ল)। আর তাঁর বিভাগটির নাম ক্যাট্ল লাইসেন্সিং সেকশন।

কী কাজ এই বিভাগের?

ব্রিটিশ আমলে কলকাতার পথেঘাটে গরুর উপদ্রব সামলাতে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যেত পুলিশের। সে সময়ে রাজপথে দুষ্টু গরুর উপদ্রব সামলাতে তৈরি হয়েছিল এই বিভাগটি। কিন্তু সময় পাল্টেছে। এখন আগেকার মতো যত্রতত্র খাটালও নেই, আর রাস্তাঘাটে সেই দুষ্টু গরুর উপদ্রবও নেই। এক কথায়, কলকাতার পথঘাটে এখন আর সে সমস্ত সমস্যা নেই, যা ওই দফতরের সামলানোর কথা।

এক সময়ে শহরের সব খাটালের নথিভুক্তিকরণের কাজও করত এই বিভাগ। লোকে তাই দফতরটিকে বলত ওসি (ক্যাট্ল)-এর বিভাগ। খাটাল কিংবা খাটালের আশ্রয় ছেড়ে পথেঘাটে বেরোনো গরুদের হিসেব-নিকেশও ওসি (ক্যাট্ল)-র কাজ ছিল। বহু দিন হল খাটালই বেআইনি ঘোষিত হয়ে গিয়েছে। বেআইনি ভাবে যে সব খাটাল এখনও থেকে গিয়েছে, তা দেখার দায়িত্বও বর্তেছে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের উপরে। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, “আজকের কলকাতায় এই শাখাটির কাজ এখন নামমাত্র। ব্রিটিশ আমলের এমন কিছু কিছু পদ উঠে গেলেও ওসি (ক্যাট্ল) এখনও রয়েছেন।”

তা হলে কী করছেন এখন এই দফতরের কর্মীরা?

ঠিকানা অফিসপাড়ায় স্টিফেন হাউসের ছ’তলার ১১৫ নম্বর ঘর। ঘুপচি খোলা ছাদ পেরোলে মিলবে কলকাতা পুলিশের ক্যাট্ল লাইসেন্সিং সেকশনের অফিস। দরজায় গরুর ছবি। বর্তমানে এই বিভাগের ওসি পদে রয়েছেন দীপিকা মিত্র। তিনি অবশ্য সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেই রাজি হননি। কিন্তু লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, খাতায়-কলমে পুলিশের এই বিভাগটি রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কলকাতার গরু-মোষ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করে। এক পুলিশকর্তার আবার বক্তব্য, “আসলে কোনও কাজই নেই দফতরটির। পালাপার্বণে এই দফতরের কর্মীদের তাই অন্য কাজে পাঠানো হয়।”

কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের কোনও এলাকা থেকে ভবঘুরে বা বেওয়ারিশ গরু-মোষের খবর পাওয়া গেলে তা সামলানোর কথা এই দফতরের। কিন্তু সেই অভিযোগ আজকাল ক্রমশ বিরল হয়ে পড়েছে। যদি এ রকম কোনও অভিযোগ কালেভদ্রে আসে, তখন নড়েচড়ে বসতে হয় এই বিভাগের পুলিশকর্মীদের।

রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরকে জানিয়ে এই বিভাগ ভবঘুরে বা উপেক্ষিত গরু পৌঁছে দিয়ে আসে হরিণঘাটার সরকারি হোমে। তবে পুলিশের মধ্যেই কারও কারও মত, সে কালের কলকাতার স্মৃতিমেদুরতা ছাড়া এই বিভাগটি হোমে-যজ্ঞ কিছুতেই লাগে না।

এ ব্যাপারে কী বলছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা?

ডিসি (আরএফ) অশোক বিশ্বাস বলেন, “বিভিন্ন পালাপার্বণে প্রচুর গবাদি পশু শহরে নিয়ে আসা হয়। ওই সমস্ত গবাদি পশুর বৈধতা যাচাই করার ব্যাপারে ওসি (ক্যাট্ল) ও তাঁর দফতরকে কাজে লাগে। এ ছাড়া কলকাতা পুরসভার সংযোজিত এলাকায় খাটাল উচ্ছেদের ব্যাপারেও পুরসভার ওসি (ক্যাট্ল)-এর সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন হয়।”

তবে, লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তাকে ওই বিভাগটির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এ রকম একটি পদ যে রয়েছে, তা-ই তো জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cattle Licensing Section avik bondhopadhay cattle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE