ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডের পাঁচিলের ধারে ‘গণ-প্রস্রাবাগার’।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। ধর্মতলার সরকারি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলেন কোচবিহারের বাসিন্দা অসীম দত্ত। সঙ্গে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছেলে। সন্ধ্যা ছ’টা থেকে এ ভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে। যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে বসে অপেক্ষা করছেন না কেন? বিরক্ত জবাব এল, “যাত্রী প্রতীক্ষালয় কোথায় যে সেখানে বসব!”
খুঁজে পেতে একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয় পাওয়া গেল ঠিকই, কিন্তু তা না থাকারই সামিল। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গগামী বাসের টিকিট কাউন্টারের সামনে একটু খোলা জায়গায় সাকুল্যে চারটে প্লাস্টিকের চেয়ার। তার সামনে দুটো কুকুর কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে। মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে ঢিমেতালে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছেঁড়া কাগজের টুকরো থেকে শুরু করে খাবারের খালি প্যাকেট।
ভোর পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গার সরকারি বাস ছাড়ে এই স্ট্যান্ড থেকে। উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সূত্রে জানা গেল, ধর্মতলা থেকে সারা দিনে ২৫ থেকে ৩০টি বাস ছাড়ে। দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ জানায়, সারা দিনে তাদের বাস ছাড়ে ৩০ টির মতো। শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, এই স্ট্যান্ড থেকেই ভূটান পরিবহণের বাসও ছাড়ে রোজ। এ ছাড়া ছাড়ে কলকাতা শহর ও শহরতলির এসি ভলভো বাসও। ফলে ধর্মতলার বাসস্ট্যান্ডে সারা দিনে কয়েক হাজার যাত্রীর আনাগোনা। আর তাঁদের বসার জায়গা বলতে সেই চারটে প্লাস্টিকের চেয়ার।
ব্যবসার কাজে প্রতি সপ্তাহে বাঁকুড়া যেতে হয় গড়িয়াহাটের দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যকে। শনিবার দুপুরে বাসের অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন তিনিও। বললেন, “বসার জায়গা দূরে থাক, পর্যাপ্ত শেডও নেই। অগত্যা গরমকালে কড়া রোদের মধ্যেই অপেক্ষা করতে হয়। বাস ধরতে এসে ভিজতে হয় বর্ষার বৃষ্টিতে। নোংরা জলে পা ডুবিয়েই টিকিট কাটতে হয়।”
যাত্রী-প্রতীক্ষালয়ে নেই বসার জায়গা।
বাসস্ট্যান্ড জুড়ে চারপাশে আবর্জনায় ভরা। সেই জঞ্জাল পায়ে পায়ে ছড়িয়ে পড়ছে আরও। পাঁচিল ঘেঁষে লম্বা জায়গা পরিণত হয়েছে গণ প্রস্রাবাগারে। এক কর্মী বলেন, “পুরো বাসস্ট্যান্ড সপ্তাহে এক দিন সাফ হয়। ফলে কতটা পরিষ্কার থাকে, বুঝতেই পারছেন। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সব সময়ে কাজ করতে হয়। ফলে অসুস্থও হয়ে পড়ি মাঝেমধ্যে।” কর্মীরা জানালেন, গোটা বাসস্ট্যান্ডে কোনও পানীয় জলের ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। জল কিনে খেতে হয়।
গোটা বাসস্ট্যান্ডে একটামাত্র উঁচু বাতিস্তম্ভ। তবে তার কোনও আলোই জ্বলে না। রাতের স্ট্যান্ডে আলো বলতে বাইরের বাতিস্তুম্ভের আলো। রাত ন’টা নাগাদ শেষ ভলভো বাস ছাড়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে। তারই লাইনে দাঁড়ানো এক যাত্রী বললেন, “রাতে এই স্ট্যান্ডটা যথেষ্টই নির্জন হয়ে যায়। তার উপরে এমন আধো অন্ধকার। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে বেশ ভয়ই লাগে। পুলিশই টহলও তো চোখে পড়ে না।”
ধর্মতলা সরকারি বাসস্ট্যান্ডের এই জমিটি সেনাবাহিনীর। ফলে স্ট্যান্ডে স্থায়ী নির্মাণকাজ নিয়ে বাধা রয়েছে। কিন্তু নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে বাসকর্মী, সকলেই বলছেন, স্থায়ী নির্মাণ না হোক অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করে যাত্রী প্রতীক্ষালয় করা যেতেই পারে। পাঁচিলের পাশে গণ প্রস্রাবাগার হয়ে ওঠা জায়গাটার হাল ফিরিয়ে সেখানেই বসার ব্যবস্থা করা যায়। তাঁদের প্রশ্ন, কেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা হবে না? কেনই বা রোজ হবে না সাফাইয়ের কাজ?
যদিও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “এই বাসস্ট্যান্ডের হাল ফেরাতে ও সৌর্ন্দযায়নে নানা পরিকল্পনা রয়েছে। বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী প্রতীক্ষালয়টির হাল ফেরানো হবে। লোকসভা ভোট ঘোষণার আগেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল। ভোটের পরেই কাজে হাত দেওয়া হবে।”
ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy