Advertisement
E-Paper

নিয়ম ভাঙাই এখন ‘নিয়ম’ বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে

এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ‘এক্সপ্রেস-গতিতে’ গাড়ি চালানো মানেই পদে পদে বিপদের সম্ভাবনা। কোথাও রাস্তার ধারে স্তূপ করে রাখা ইট, বালি। কোথাও আবার ডিভাইডারের উপর দিয়েই তৈরি হয়ে গিয়েছে রাস্তা। ফলে রাস্তা ভেঙে যখন-তখন অন্য লেনে ঢুকে পড়ছে গাড়ি। কোথাও আবার রাস্তা জুড়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ট্রাক। আলোকস্তম্ভ থাকলেও রাতে অধিকাংশ আলোই জ্বলে না। রাস্তার নাম বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৩:১০
এ ভাবেই চলছে পারাপার। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের মাঠকল এলাকায়। ছবি: শৌভিক দে।

এ ভাবেই চলছে পারাপার। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের মাঠকল এলাকায়। ছবি: শৌভিক দে।

এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ‘এক্সপ্রেস-গতিতে’ গাড়ি চালানো মানেই পদে পদে বিপদের সম্ভাবনা। কোথাও রাস্তার ধারে স্তূপ করে রাখা ইট, বালি। কোথাও আবার ডিভাইডারের উপর দিয়েই তৈরি হয়ে গিয়েছে রাস্তা। ফলে রাস্তা ভেঙে যখন-তখন অন্য লেনে ঢুকে পড়ছে গাড়ি। কোথাও আবার রাস্তা জুড়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ট্রাক। আলোকস্তম্ভ থাকলেও রাতে অধিকাংশ আলোই জ্বলে না। রাস্তার নাম বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে।

অভিযোগ শহরতলিতে এই রাস্তা নামেই এক্সপ্রেসওয়ে। রাজ্যের অধিকাংশ এক্সপ্রেসওয়ে যেমন, দুর্গাপুর বা কল্যাণী যখন দেশের যে কোনও ভাল মানের রাস্তার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে সেখানে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে যেন পাড়ার আর পাঁচটা সাধারণ রাস্তার মতোই দুয়োরানি। অভিযোগ মাসের পর মাস খারাপ থাকার পরে অবশেষে রাস্তা ভাল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ার জন্য যে সব নিয়ম মানা উচিত তার কিছুই কার্যত মানা হয় না এখানে।

দমদমের মাঠকল এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, উঁচু শান বাঁধানো ডিভাইডার ভাঙা। সেই ভাঙা অংশই হয়ে গিয়েছে যাতায়াতের পথ। নিয়ম ভেঙে মানুষ থেকে গাড়ি সকলেই ডিভাইডার পেরিয়ে অন্য প্রান্তে পৌঁছচ্ছে। অভিযোগ এমন কাটা ডিভাইডারে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। শুধু মাঠকলই নয়, পুরো এক্সপ্রেসওয়ের ধারে যেখানেই জনবহুল এলাকা সেখানেই এ ভাবে ডিভাইডার ভেঙে নিজস্ব পারপারের রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। যেহেতু স্থানীয়দের নিজেদের তৈরি করা পথ এগুলি তাই এ সব জায়গায় সিগন্যাল থাকারও প্রশ্ন ওঠে না। রাতে সমস্যা আরও বাড়ে। অন্ধকারে এই রাস্তা দিয়ে তীব্র গতিতে চলা গাড়ির সামনে হঠাৎ করে চলে আসে সাইকেল, মোটরবাইক বা ছোট গাড়ি। তখন গতি নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল হয়ে যায় বলে জানালেন চালকেরা। গাড়িচালকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে যেখানে হাঁটাও নিষেধ, সেখানে কাটা ডিভাইডার দিয়ে গাড়ি আসে কী ভাবে?

শুধু ডিভাইডার ভেঙে যাতায়াতই নয় রাস্তার দু’ধারে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকও অনেক সময়ে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। এক্সপ্রেসওয়ের ধারে তৈরি হচ্ছে বেশ কিছু আবাসন। অভিযোগ এই আবাসনগুলির দরজার সামনেই রাস্তার উপরে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় কখন গাড়ি আসছে তা দেখা যায় না। ফলে আবাসনের গলিরাস্তা থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সময়ে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। এক্সপ্রেসওয়ের ধারের এক আবাসনের বাসিন্দা সমীরবরণ সাহা বলেন, “ট্রাকগুলো এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে যে আবাসন থেকে বেরোনোর সময়ে কিছু দেখা যায় না। তীব্র গতিতে আসা গাড়ির অনেক সময়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাককে ধাক্কা মারার ঘটনাও ঘটেছে।” এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া এক আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত বারোটার পরে এক্সপ্রেসওয়ের বেশির ভাগ আলোই নিভে যায়।

শুধু ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকাই নয় বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধার কার্যত ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গিয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারেই যেখানে সেখান ফেলা থাকে ইট বালি। বালি বা ইট অনেক সময়ে চলে আসে রাস্তার মাঝখানেও। দিন কয়েক আগেই পড়ে থাকা বালিতে একটি মোটরবাইক পিছ্লে যায়। পিছনে কোনও গাড়ি না থাকায় সে যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যায় বাইকচালক। রাস্তার দু’দিকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তায় কার্যত একই দৃশ্যই দেখা যায়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, নিউ টাউনে যে সব ইমারতি দ্রব্য বোঝাই ট্রাক যায় সেগুলোই রাতের অন্ধকারে কিছু ইমারতি দ্রব্য এখানকার স্থানীয় ইট বালির ব্যবসায়ীদের বিক্রি করে। এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে প্রচুর আবাসন তৈরি হচ্ছে। সেগুলিতে এই ইট বালি সরবরাহ করে ওই ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারের তুলনায় কিছুটা কমে মেলে এই সব ইমারতি সামগ্রী। স্থানীয়েরা জানালেন, ১ হাজার ইটের দাম বাজারে প্রায় ৭ হাজার টাকা। এখান থেকে কিনলে মেলে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে তা মেলে। বালির দামও বস্তা পিছু ৫ থেকে ৭ টাকা কম।

প্রশ্ন উঠেছে এ ভাবে এক্সপ্রেসওয়ের উপরে অবাধে ইমারতি দ্রব্য বিক্রির ব্যবসা কী ভাবে হচ্ছে? পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে পুলিশি টহলদারি নিয়েও।

ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (কলকাতা বিভাগের) কর্তারা অবশ্য জানালেন, রাস্তার ট্রাফিক নিয়ম ঠিক মতো মানা হচ্ছে কি না তা দেখা রাজ্য পুলিশের কাজ। এই ব্যাপারে সচেতন করে তারা রাজ্য সরকারকে অনেক বার চিঠি দিয়েছেন। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পদস্থ কর্তারা জানিয়েছেন, নিয়মিত পুলিশি টহল চলে। মাঝেমধ্যে পুলিশ ইমারতি সামগ্রী বোঝাই ট্রাকও ধরে। বেআইনি পার্কিং-এর ট্রাকের জরিমানাও নেওয়া হয়।

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এডিসিপি সুরেশ চাটভি বলেন, “নিয়মিত টহল চলে ওই রাস্তায়। নির্দিষ্ট অভিযোগ এলেই পুলিশ তদন্ত করে।”

aryabhatta khan belgharia expressway
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy