Advertisement
E-Paper

নবীনবরণ নাকি নাইট ক্লাব, সেই ট্র্যাডিশন চলছেই

পেশোয়ারে শিশুমেধের ধাক্কায় শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনভর থমথমে পরিবেশ। কোথাও নীরবতা পালনে সামিল ছাত্র-শিক্ষকেরা। কোথাও বা মোমবাতি জ্বেলে চলছে স্মরণ-অনুষ্ঠান। শুধু ছন্দপতন নেই শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে। চটুল নাচগান মোচ্ছবে যা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৫
নবীনবরণে নাচ। —নিজস্ব চিত্র

নবীনবরণে নাচ। —নিজস্ব চিত্র

পেশোয়ারে শিশুমেধের ধাক্কায় শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনভর থমথমে পরিবেশ। কোথাও নীরবতা পালনে সামিল ছাত্র-শিক্ষকেরা। কোথাও বা মোমবাতি জ্বেলে চলছে স্মরণ-অনুষ্ঠান। শুধু ছন্দপতন নেই শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে। চটুল নাচগান মোচ্ছবে যা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

বুধবার দুপুরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী হলের অনুষ্ঠানটি উদ্বোধনের কথা ছিল উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের। কিন্তু অন্য ব্যস্ততার জন্য তিনি সেখানে যাননি। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ক্যাম্পাসে পেশোয়ারের নিহতদের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পরেই টের পান নবীনবরণে কী হচ্ছে। উপাচার্যের কথায়, “ফিরেই গানবাজনার গমগম শব্দ পাই। পরে টিভিতে যা ছবি দেখেছি, তাতেও হতবাক হয়ে যাই! মনে হয় না, বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনবরণে কখনও এমন অনুষ্ঠান হয়েছে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদ-চালিত ইউনিয়নের নবীনবরণে কী হয়েছিল? ‘ফ্রেস্কো ২কে১৪’ লেখা ব্যানারে মোড়া শতবার্ষিকী হলে ঢোকা বা বেরোনোর পথেই কড়া প্রহরা। দরজায় ছিটকিনি। তবু কয়েক জন পড়ুয়ার সঙ্গে ঢুকে দেখা গেল, ভেতরে পুরোপুরি নাইট ক্লাবের পরিবেশ। চোখধাঁধানো সাইকেডেলিক আলো ও ধোঁয়ার জালে নেমে এসেছে অদ্ভূত আঁধার! সাউন্ডবক্সের গাঁকগাঁক শব্দে কানে তালা লাগার জোগাড়। মঞ্চ কাঁপিয়ে চটুল গানের সুরে চলছে উদ্দাম নৃত্য।

এমন অনুষ্ঠানের খবর পেয়ে তখনই ফোন করে এক ছাত্রনেতাকে বকাবকি করেন উপাচার্য। নবীনবরণের অনুষ্ঠানটি পূর্ব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সুরঞ্জনবাবুর বক্তব্য, “সাধারণ ভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অনুষ্ঠান হজম করা শক্ত। আর এমন একটা মর্মান্তিক ঘটনার ঠিক পরেই এমন চটুল অনুষ্ঠান মেনে নেওয়া যায় না। আশা করব, ছাত্ররা ভবিষ্যতে কখনও এমন কাজ করবে না।” বিষয়টি শুনে অস্বস্তিতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “বারবার বলছি যে ছাত্রছাত্রীদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যা সংস্কৃতির পরিপন্থী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হয়েছে, সে ব্যাপারে উপাচার্য ও ছাত্র সংসদের সঙ্গে কথা বলব।”

উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে নবীনবরণের অনুষ্ঠানটি এ দিন উদ্বোধন করেন সহ-উপাচার্য (অর্থ) সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “কী অনুষ্ঠান হবে, জানতাম না। উপাচার্য ছিলেন না বলেই আমি উদ্বোধন করি। মিনিট পাঁচেক থেকে আমি চলে আসি।” পরে অনুষ্ঠানে হুল্লোড় নিয়ে বিতর্কের কথা জেনে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কুণাল সামন্তকে ডেকে তিনিও বকাবকি করেন বলে জানিয়েছেন সোনালিদেবী। কুণাল অবশ্য কোথাও কোনও ভুল হয়েছে বলে মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, “নবীনবরণে আপত্তিকর কিছুই করা হয়নি।” কিন্তু নবীনবরণের আবহে ‘নিষিদ্ধ আমেজ’টুকু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে উদ্যোক্তাদের কারও কারও আচরণেই। স্মার্টফোনে অনুষ্ঠানের ভিডিও করা নিয়ে অনুষ্ঠান চলাকালীনই ছাত্রনেতারা কেউ কেউ তীব্র আপত্তি জানান। কাউকে কাউকে অনুষ্ঠানের ভিডিও মুছে ফেলতেও বাধ্য করা হয়।

ছাত্রসমাজের মধ্যেও কিন্তু এমন অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি আছে। এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি মধুজা সেনরায়ের কথায়, “আগে দোলকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কুৎসিত নাচগান চলেছে। এ তো তৃণমূলেরই ট্র্যাডিশন! যা হয়েছে তার সঙ্গে সংস্কৃতির কী সম্পর্ক, মাথায় ঢুকছে না!” রাজ্যে ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কৌস্তুভ বাগচী বলেন, “এটা তো নতুন কিছু নয়। এর আগে ভাঙড় কলেজেও তো টিএমসিপি এ সবই করিয়েছে। এটাই তৃণমূলী কালচার। মোটেও অবাক হচ্ছি না।”

তৃণমূলের ছাত্রনেতারা অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা যুক্তি শানাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, “নবীনবরণেও পেশোয়ারে নিহতদের স্মরণে দু’মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে।” আজ, বৃহস্পতিবার পেশোয়ার-কাণ্ডের প্রতিবাদে কলেজ স্ট্রিটে মিছিলও বের করা হবে বলে জানিয়েছে টিএমসিপি।

tmcp freshers welcome dance calcutta university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy