কমিউনিটি হল থেকে সরিয়ে পুরসভার খেলার মাঠে পুজো করতে উদ্যোগী হয়েছেন বাসিন্দারা। মাঠের এই ‘দখলদারি’ নিয়ে পুরসভার সঙ্গে বিবাদ চরমে পৌঁছেছে। এমনকী পুরসভার অনুমতি না মেলা সত্ত্বেও রবিবার সেই মাঠেই খুঁটিপুজো করেছেন বাসিন্দারা। ঘটনাস্থল সল্টলেকের এফ সি ব্লক।
ব্লকের এই মাঠে পুজো এবং খুঁটিপুজো করতে চেয়ে কিছু দিন আগেই পুর-প্রশাসনের কাছে আবেদন করে ব্লক কমিটি। এমনকী, খুঁটিপুজোর দিন ঘোষণা করে পুর-কর্তাদের আমন্ত্রণও জানান বাসিন্দারা। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানের আগে শনিবার রাতেই খুঁটিপুজোর অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় পুর-প্রশাসন। তাই নিয়ে বিবাদ চরমে ওঠে। রাতেই ওই চিঠি পেয়ে বাসিন্দারা স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। সমস্যা মেটাতে স্থানীয় কাউন্সিলর বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় আলোচনায় বসলেও তা কার্যত ভেস্তে যায়। রবিবার ওই মাঠেই খুঁটিপুজোর আসরে অবশ্য হাজির হননি কোনও পুরকর্তাই। তবে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী জুন মালিয়া।
পুর-প্রশাসনের এক অংশের দাবি, বাম আমল থেকেই মাঠটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি হিসেবে ব্যবহার করে পুরসভা। ব্যয় বহনের স্বার্থে বছরভর মাঠটি ভাড়া দেওয়া হয় বিভিন্ন কর্পোরেট ও সিএবি-র ক্রিকেট প্রতিযোগিতার জন্য। সেই সূত্রেই মাঠটি ভাড়ার জন্য বুকিং হয়ে রয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, এখন পুজো হলে মাঠটির ক্ষতি হবে, সেটিকে আগের অবস্থায় ফেরাতে অন্তত ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। তা হলে যারা মাঠটি ইতিমধ্যে ভাড়া নিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা করা হবে?
বাসিন্দাদের পাল্টা অভিযোগ, পুজোর পরে মাঠটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার শর্তেই আবেদন জানানো হয়েছিল। তখন পুরসভা মাঠের বুকিং নিয়ে কিছু জানায়নি। আচমকা খুঁটিপুজোর আগের রাতে চিঠি পাঠিয়ে অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।
কিন্তু অনুমতি ছাড়াই বাসিন্দারা খুঁটিপুজো করলেন কেন? এফ সি ব্লকের পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম শুভাশিস ঘোষ বলেন, “এ বার বড় আকারে পুজো হচ্ছে। ফলে কমিউনিটি হলে পুজো করা সম্ভব নয়। তাই মাঠ ব্যবহার করতে চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। সমস্ত ব্লকেই খুঁটিপুজো ব্লকের মাঠেই হয়। সে ক্ষেত্রে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। তাই আমরাও আমাদের মাঠেই করেছি। পুরসভা ব্যবহার করলেও এফ সি ব্লকের মাঠ হিসেবেই এই মাঠটিকে চেনেন সকলে।”
বাসিন্দাদের দাবি, বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর সঙ্গে একদফা কথা হয়েছিল। তখন এত সমস্যার কথা বলা হয়নি। পুজোর জায়গা পরিবর্তন নতুন কিছু নয়। সেটা সমস্যা হলে পুরসভা জানাতে পারত। তা না করে সরাসরি অনুমোদন বাতিল করা হল কেন? জবাবে বিধাননগর পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক সঞ্জয় দাসের বক্তব্য, “ক্রিকেট ছাড়া ওই মাঠটি অন্য কোনও কারণে ব্যবহার করা হয় না। উপরন্তু দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটি হলে পুজো করছেন বাসিন্দারা। আচমকা জায়গা বদলাতে চাইলে আলোচনা করা দরকার। তবু অনুমতি ছাড়াই তাঁরা খুঁটিপুজোর ঘোষণাও করলেন। এ ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হয়নি।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সব ব্লকের ক্ষেত্রে এক নিয়ম হলে একটি ব্লকের ক্ষেত্রে পুর-প্রশাসন কেন চিন্তাভাবনা করছেন না? পুরসভা জানিয়েছে, সমস্ত মাঠগুলি কী ভাবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ব্লক কমিটিগুলির সঙ্গেও আলোচনা হবে।
অবশ্য এফ সি ব্লকের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা যুক্ত হয়ে পড়ায় এই কাজিয়ায় রাজনৈতিক রংও লেগেছে বলে অভিযোগ। তবে চেয়ারপার্সনের সাফ কথা, “উভয় পক্ষের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে আলোচনা করে সমস্যা মেটানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy