নির্মীয়মাণ পরমা আইল্যান্ড-পার্ক সার্কাস উড়ালপুল। —নিজস্ব চিত্র।
কাজ চলছে প্রায় পাঁচ বছর ধরে। এত দিনে শেষ হয়েছে বড়জোর অর্ধেক অংশ। ই এম বাইপাসের উপরে থমকে থাকা পরমা আইল্যান্ড-পার্ক সার্কাস উড়ালপুলের কাজ শেষ করার সময়সীমা এ বার বেঁধে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের নির্দেশ, পার্ক সার্কাস থেকে পরমা আইল্যান্ড অবধি উড়ালপুলটির কাজ ২০১৬ সালের ৩১ মে-র মধ্যে শেষ করতে হবে। বাকি থাকা কাজ ধাপে ধাপে ভাগ করে প্রতিটি ধাপ শেষ করার মেয়াদও বেঁধে দিয়েছে আদালত। বুধবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এই নির্দেশ দিয়েছেন। পার্ক সার্কাস থেকে পরমা আইল্যান্ড পর্যন্ত আট কিলোমিটারের এই উড়ালপুল তৈরি হলে তা শহরবাসীর গর্বের প্রতীক হবে বলে এ দিন মন্তব্য করেন বিচারপতি। শহরের যান চলাচলও অনেক মসৃণ হবে।
পাঁচ বছর আগে কাজটি শুরু করেছিল যে সংস্থা, তাদের সঙ্গে কলকাতা মেট্রোপলিটন উন্নয়ন নিগমের মতবিরোধের জেরে কয়েক মাস ধরে উড়ালপুলটির কাজ থমকে আছে। তবে বিচারপতি এ দিন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাটিই (হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড বা এইচসিসিসি) কাজ শেষ করার জন্য যোগ্যতম বলে জানিয়ে তাদেরই কাজ শেষ করার ভার দিয়েছেন। এর আগে মুনাফা বাড়াতে সংস্থাটি অযথা দেরি করছে বলে কেএমডিএ অভিযোগ তুলেছিল। সংস্থার পাল্টা বক্তব্য ছিল, সরকারই কাজ সারার জন্য ফাঁকা জমির সংস্থান করতে পারেনি, যার ফলে বারবার মেয়াদ অনুযায়ী কাজ সারতে তারা ব্যর্থ হয়। হাইকোর্ট এ দিন এই বিতর্কে ঢুকতে চায়নি। বিচারপতির মন্তব্য, “কাজ শেষ না-হওয়ায় নাগরিকদের ভুগতে হচ্ছে। জনস্বার্থেই বিরোধ মেটানো উচিত।”
এই কাজ সম্পন্ন করতে সরকারের বিভিন্ন দফতর ও নাগরিক পরিকাঠামো গড়ার সঙ্গে যুক্ত আরও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সমন্বয় যে দরকার, তা মাথায় রেখেছে হাইকোর্ট। বাধা-বিপত্তি ছাড়া সময়মতো কাজ শেষ করার জন্য রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয় কমিটিও গড়ে দিয়েছে আদালত। কমিটিতে রয়েছেন নগরোন্নয়ন সচিব, কেএমডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক (আহ্বায়ক-সদস্য), কলকাতার পুলিশ কমিশনার, পুর কমিশনার, সিইএসসি-র এমডি, এইচআরবিসি-র সহ-সভাপতি, ডিসি (ট্রাফিক), বিএসএনএল-এর এমডি, ঠিকাদার সংস্থাটির মুখপাত্র প্রমুখ। দরকারে ঠিকাদার সংস্থা ও কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়ারদেরও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রত্যেক মাসে অন্তত এক বার এই সমন্বয় কমিটির নিজেদের মধ্যে বৈঠক হওয়াটা অভিপ্রেত।
পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “হাইকোর্টের রায় আমরা মাথা পেতে নিচ্ছি। সময় মতো কাজ শেষ করতে প্রশাসন সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে।” গত ডিসেম্বরে কেএমডিএ পুরনো চুক্তি বাতিল করে এ বছরের ২১ জানুয়ারি উড়ালপুলের অসমাপ্ত অংশের জন্য ফের দরপত্র বিলি করেছিল। তাতে এত দিন যারা কাজ করছিল, সেই এইচসিসি-ই সব থেকে কম টাকার (২৯৩ কোটি) আবেদন জমা দেয়। কিন্তু কেএমডিএ সেই দরপত্রের নোটিসটিই বাতিল করে দেয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তারা নতুন করে দরপত্রের নোটিস দিয়েছে। তাতে কাজটির জন্য সম্ভাব্য খরচ ২৫৭ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বার দরপত্র বিলি করার বিরোধিতা করেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল এইচসিসি। ওই দরপত্রের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে আদালত।
শুনানিতে অবশ্য এইচসিসি কেএমডিএ-র প্রস্তাবিত বাজেটেই কাজ শেষ করতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
শেষ পর্যন্ত ওই প্রস্তাবটি যুক্তিসঙ্গত বলে মন্তব্য করে বিচারপতি বলেন, “নতুন কোনও ঠিকাদারকে কাজে লাগালে আরও বেশি সময় লেগে যাবে, যা জনস্বার্থ-বিরোধী। তবে কোনও অবস্থাতেই খরচ বৃদ্ধি বরদাস্ত করা হবে না।”
উড়ালপুলের কাজ চলাকালীন যানজটের সমস্যা এড়াতে ডিসি (ট্রাফিক)-কেও আগাম ব্যবস্থা নিতে বলেছে হাইকোর্ট। কাজ কত দূর এগোলো, তা ঠিকাদার সংস্থাটিকে তিন মাস অন্তর জানানোর নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy