Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফের নেট-জালিয়াতি, অসহযোগিতায় অভিযুক্ত সাইবার থানা

বিমার টাকা অনলাইনে জমা দিতে গিয়েছিলেন টালিগঞ্জের এক মহিলা। কিন্তু টাকা জমা দিতে পারেননি। উল্টে ডেবিট কার্ড সাময়িক ভাবে বন্ধ (ব্লক) হয়ে গিয়েছিল। কার্ড ফের চালু করতে ব্যাঙ্কে দৌড়োদৌড়ির মাঝেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও প্রায় ৫৬ হাজার টাকা। মহিলার অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে প্রথমে লালবাজারের সাইবার থানায় গেলেও সাহায্য মেলেনি। তাঁরা তাঁকে এলাকার থানায় বিষয়টি জানাতে বলেন। পরে অবশ্য এক উচ্চকর্তার হস্তক্ষেপে এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে লালবাজার।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

বিমার টাকা অনলাইনে জমা দিতে গিয়েছিলেন টালিগঞ্জের এক মহিলা। কিন্তু টাকা জমা দিতে পারেননি। উল্টে ডেবিট কার্ড সাময়িক ভাবে বন্ধ (ব্লক) হয়ে গিয়েছিল। কার্ড ফের চালু করতে ব্যাঙ্কে দৌড়োদৌড়ির মাঝেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও প্রায় ৫৬ হাজার টাকা। মহিলার অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে প্রথমে লালবাজারের সাইবার থানায় গেলেও সাহায্য মেলেনি। তাঁরা তাঁকে এলাকার থানায় বিষয়টি জানাতে বলেন। পরে অবশ্য এক উচ্চকর্তার হস্তক্ষেপে এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে লালবাজার।

শুক্রবারই ক্রাইম কনফারেন্সে কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে বলেন অফিসারদের। তার ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না-পেরোতেই খোদ লালবাজারের ভিতরে এক থানার অফিসারদের এই ব্যবহার সিপি-র নির্দেশকে কার্যত অমান্য করেছে বলেই পুলিশের একাংশের বক্তব্য। লালবাজারের একাংশ বলছেন, এ ধরনের মামলা সাইবার থানাতেই দায়ের করা উচিত। স্থানীয় থানার অফিসারদের এ ব্যাপারে পারদর্শিতা ততটা থাকে না। কিন্তু সেই সাইবার থানাই কেন মহিলাকে ফিরিয়ে দিল, তা নিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দা বিভাগের শীর্ষকর্তারাও।

শনিবার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে লালবাজারের সাইবার পুলিশ থানায় গিয়েছিলেন ওই মহিলা। অভিযোগ, সেখানকার অফিসারেরা ঘটনা শোনার পরে বিষয়টি তাঁদের এক্তিয়ারভুক্ত নয় বলে জানান। মহিলার বাড়ির কাছের কোনও থানায় অভিযোগ দায়েরের পরামর্শও দেন তিনি। মহিলা এর পরে লালবাজারের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখায় যান। কিন্তু অভিযোগ, সেখানেও এক সাব-ইনস্পেক্টর তাঁকে জানান, শনিবার অভিযোগ জমা নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তিনি যেন সোমবার আসেন। তার আগে ঘটনাটি স্থানীয় থানায় জানিয়ে রাখারও পরামর্শ দেন।

মহিলা জানিয়েছেন, গোয়েন্দা বিভাগ থেকে বেরিয়ে তিনি এক পরিচিতের মারফত কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পল্লববাবু তাঁর অভিযোগপত্র নিয়ে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার অতিরিক্ত ওসি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, কেন অভিযোগ দায়ের করাতে গেলে খোদ গোয়েন্দাপ্রধানের দ্বারস্থ হতে হবে? অনেকে বলছেন, মহিলা যদি গোয়েন্দাপ্রধানের কাছে পৌঁছতে না পারতেন, তা হলে তাঁর অভিযোগ নিয়ে থানায়-থানায় ঘুরতে হত। সে ক্ষেত্রে মহিলার এই হেনস্থার দায় কে নিত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি যে ঘোরতর অন্যায় হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন লালবাজারের কর্তাদের একাংশও।

ওই মহিলা জানান, ২৬ জুন রাতে তিনি একটি চিকিৎসা বিমার প্রিমিয়াম জমা দিচ্ছিলেন। সেখানে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ডের পিন দেওয়া মাত্রই তা ভুল বলে দেখায়। তিন বার চেষ্টা করার পরে কার্ডটি ব্লক হয়ে যায়। সেখানেই ভেসে ওঠে একটি অভিযোগ জানানোর ঠিকানা। সেই ঠিকানায় নিজের অ্যাকাউন্ট নম্বর, ডেবিট র্কা নম্বর ও ফোন নম্বর দিয়ে অভিযোগ জানান ওই মহিলা। ২৭ জুন সকালে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় যোগাযোগ করেন তিনি। ব্যাঙ্ক থেকে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কার্ডটি ফের চালু করে দেওয়া হবে। মহিলা ব্যাঙ্কে একটি ফর্ম পূরণ করে নেট ব্যাঙ্কিং চালু করার আবেদনও জানান।

মহিলা জানান, ২৭ জুন বিকেলে তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। সেখানে ওমপ্রকাশ যাদব নামে এক ব্যক্তি নিজেকে ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী পরিচয় দিয়ে ওই মহিলার নাম-ঠিকানা-অ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে চান। মহিলা বলেন, “এক-এক বার ফোন করে এক এক রকম তথ্য জানতে চাইছিলেন। আর বলছিলেন, কোনও এসএমএস পেয়েছি কি না?” ইতিমধ্যে ওই মহিলার মোবাইলে বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে নেট ব্যাঙ্কিং চালু করার পাসওয়ার্ডও পাঠানো হয়। সেটিও ফোনে জেনে নেন ওমপ্রকাশ নামে ওই ব্যক্তি।

মহিলা জানান, ২৮ জুন বিকেলে ফের তাঁকে ফোন করেন ওই ব্যক্তি। নেট ব্যাঙ্কিং ও কার্ড চালুর কথা জানানোর সময়েই পরপর দু’টো এসএমএস পান ওই মহিলা। তাতে দেখেন, দু’দফায় ৬ হাজার ও ৫০ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন করতেই ওমপ্রকাশ নামে ওই ব্যক্তি ফোন কেটে দেন বলে অভিযোগ। তার পর থেকেই ওই নম্বরটি বন্ধ।

পুলিশের একাংশ মনে করছেন, অনলাইনে বিমার প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার সময়েই জালিয়াতদের খপ্পরে পড়েন। সেখান থেকেই তাঁর নেট ব্যাঙ্কিং ও ডেবিট কার্ডের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তার পরে নেট ব্যাঙ্কিং মারফত টাকা হাতানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই টাকা চেন্নাইয়ে আর একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় রবি কুমার নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। সেখান থেকে ৩০ হাজার টাকা তুলেও নেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলা যে বেসরকারি ব্যাঙ্কের গ্রাহক, সেখানেও জানানো হয়েছে। ব্যাঙ্কের এক কর্তা আজ, সোমবার মহিলার সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cyber crime hacking kuntak chattopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE