Advertisement
E-Paper

বেআইনি নির্মাণকে উৎসাহ দিতে নিয়ম তৈরি পুরসভার

জরিমানা নিয়ে অবৈধ নির্মাণকে বৈধ করতে পারবে না কলকাতা পুরসভা— সাত মাস আগে এমনই রায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের সেই ফরমানে রীতিমতো ফাঁপরে পড়ে যায় পুরসভা। পরে তা থেকে নিষ্কৃতি পেতে গত নভেম্বরে পুর-আইন সংশোধন করে পুরনো ‘প্রথা’কেই সরকারি শিলমোহর দেয় রাজ্য সরকার। বিধানসভায় আনা বিলে বলা হয়, পুর-এলাকায় কোনও নির্মাণে ‘মাইনর ডেভিয়েশন’ হলে জরিমানা বা রিটেনশন দিয়ে তা বৈধ করা যাবে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৫ ০০:৪২

জরিমানা নিয়ে অবৈধ নির্মাণকে বৈধ করতে পারবে না কলকাতা পুরসভা— সাত মাস আগে এমনই রায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের সেই ফরমানে রীতিমতো ফাঁপরে পড়ে যায় পুরসভা। পরে তা থেকে নিষ্কৃতি পেতে গত নভেম্বরে পুর-আইন সংশোধন করে পুরনো ‘প্রথা’কেই সরকারি শিলমোহর দেয় রাজ্য সরকার। বিধানসভায় আনা বিলে বলা হয়, পুর-এলাকায় কোনও নির্মাণে ‘মাইনর ডেভিয়েশন’ হলে জরিমানা বা রিটেনশন দিয়ে তা বৈধ করা যাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে যা পাশ হয়ে যায় রাজ্য বিধানসভায়। এ বার তা হাতেকলমে প্রয়োগ করতে যে নিয়ম তৈরি করছে পুরসভা, তাতে অবশ্য ‘মাইনর ডেভিয়েশন’ কথাটার কোনও মূল্যই দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ, রিটেনশন চার্জ দিয়ে ‘যে কোনও’ অবৈধ নির্মাণকে বৈধতা দিয়ে দেবেন পুর-কর্তৃপক্ষ। অতীতে যে ভাবে হয়েছে, সেই ভাবেই।

তা হলে বিলে মাইনর ডেভিয়েশন কথাটা দেওয়া হয়েছে কেন?

বিল্ডিং দফতরের এক পদস্থ অফিসারের উল্টো প্রশ্ন, “বেআইনির আবার মাইনর-মেজর হয় নাকি?” তাঁর কথায়, “অবৈধ নির্মাণের মাইনর বা মেজর হয় না। ও সব তো আপেক্ষিক শব্দ। সংশোধনীতে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র।” তিনি জানান, এ ব্যাপারে একটি কমিটি গড়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। সেই কমিটি যে নিয়ম তৈরি করেছে, তাতেও পরিষ্কার যে, মাইনর কথাটির ব্যবহার কেবল আইন বাঁচানোর জন্যই। ওই বিধি আবার অনুমোদনও পেয়েছে পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে। যা দেখে পুরমহলের অন্দরে বলাবলি হচ্ছে, কার্যক্ষেত্রে এই ফাঁক গলে বেশি সুবিধা পাবেন এক শ্রেণির প্রোমোটারেরাই, যাঁরা ‘মেজর ডেভিয়েশন’ করতে অভ্যস্ত। আর তাতে পুলিশ বা প্রশাসনের কিছু কর্তাদের পকেট ভারী হওয়ার সম্ভাবনাই প্রশস্ত হবে বলে মত একাধিক পুরকর্তার। সেই সঙ্গে যত্রতত্র ঘরবাড়ি উঠে নষ্ট হবে শহরের স্বাভাবিক পরিবেশও।

পুরসভার বিল্ডিং আইন অনুযায়ী অবশ্য অনুমোদিত নির্মাণের বাইরে ‘সহনশীল’ পরিবর্তনকেই বলা হয়েছে ‘মাইনর ডেভিয়েশন’। যার অর্থ, অনুমোদন ছাড়া বা অনুমোদিত নকশা না মেনে ছোটখাটো (মাইনর) নির্মাণ। তবে মাইনর শব্দের ফাঁক গলে যে মেজর ডেভিয়েশনও পার পেয়ে যাবে, তা স্পষ্ট মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও। কারণ এ বিষয়ে তাঁরও মত, “মেজর-মাইনর একেবারেই আপেক্ষিক ব্যাপার”।

পুরসভায় বেআইনি নির্মাণকে আইনি করার রেওয়াজ দীর্ঘকালের। এবং তা থেকে ফি বছর কোটি কোটি টাকাও ঢোকে পুরসভার কোষাগারে। তবে যে ভাবে বেআইনি বাড়ি গড়ে ওঠে, তার মান নিয়েও পুরসভায় নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে বারংবার। ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের এক অফিসার জানান, শহরের অধিকাংশ বহুতল রিটেনশন দিয়ে গড়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনওটা আবার ‘শিবালিক’ হলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এ রকমই কয়েকটি বেআইনি নির্মাণ টাকা নিয়ে আইনি করার চেষ্টা হতেই আদালতে ওঠে বিষয়টি। গত জুলাইয়ে কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেয়, টাকা নিয়ে অবৈধ নির্মাণকে বৈধ করতে পারবেন না পুর-কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই টনক নড়ে পুরবোর্ডের। তখনই পুরসভার বিল্ডিং দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই প্রথা বন্ধ হলে পুরসভার আর্থিক ক্ষতি হবে। ওই দফতরের এক আধিকারিক জানান, রিটেনশন চার্জ বাবদ গত ২০১৩-’১৪ সালে পুরসভার আয় হয়েছিল প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের পর থেকে জরিমানা দিয়ে অবৈধ নির্মাণকে আইনি করার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়। বিল্ডিং দফতরের এক অফিসারের কথায়, “এতে শহরে বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা যে কমছে তা কিন্তু নয়, বরং তা যে ভাবে চলছিল সে ভাবেই চলছে। উল্টে পুরসভার আয় কমেছে।” আর পুরভোটের কারণে পুরবোর্ডের ওই সব বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলারও কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি।

পুরসভা সূত্রে খবর, হাইকোর্টের রায়ের পরেই পুরবোর্ডের প্রশাসক মহল এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় নির্মাণকাজে ছোটখাটো রদবদলের জন্য পুরসভার হাতে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার কথা তুলেছিলেন।

পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তখন জানিয়েছিলেন, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পৌর সংস্থার হাতে অতিরিক্ত কিছুটা অনুমোদন (এক্সট্রা স্যাংশন) দেওয়ার ক্ষমতা থাকা দরকার। এ জন্য পুর-আইনের সংশোধন করার কথাও বলেছিলেন তিনি। মূলত মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই পুর-আইনে সংশোধন আনা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। বিল পাশ হওয়ার পরে যে নিয়মবিধি অনুমোদন করেছে পুরবোর্ড, তা নিয়ে সম্প্রতি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় দেখা করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে। ভোটের আগেই ওই বিধি বলবৎ করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে কলকাতা পুরবোর্ড।

সংশোধনীতে কী কী সুবিধা হতে পারে?

পুরসভার ওই বিধি অনুসারে বেআইনি ভাবে গড়া পুরো একটি ফ্লোর টাকা দিয়ে আইনি করা যাবে। তা ছাড়া, অন্য কয়েকটি শর্ত মানা হলে প্রায় ৪০০ বর্গমিটার পর্যন্ত জমিতে বেআইনি নির্মাণও আইনি করা যাবে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য আগেই বলেছেন, “এত কাল এটা কনভেনশন ছিল। এ বার পুর-আইনে সংশোধন হওয়ায় ছোটখোটো অনেক বাড়ির মালিকের সুবিধা হবে।” তবে মাইনর বা ছোটর নামে এ বার বড় বড় অবৈধ নির্মাণও পার পেয়ে যাওয়ার পথ পেল বলে মত পুরকর্তাদের একাংশের।

kolkata municipality sobhan chatterjee illegal construction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy