Advertisement
E-Paper

বিধিই সার, দৃশ্যদূষণের হরেক সমারোহে মলিন মহানগরের মুখ

উল্টোডাঙা মোড়ে গোল করে ঘেরা জায়গাটাতেই শুধু রয়েছে সবুজের ছোঁয়া। পার্কের মতো করে সাজানো রয়েছে চারদিক। উল্টোডাঙা মোড়ে কংক্রিটের মধ্যে ওই রেলিং দিয়ে ঘেরা সবুজের দিকে তাকালেই হয়তো কিছুটা চোখের আরাম পাওয়া যায়। কিন্তু রেলিংয়ের ভিতরের সবুজে চোখ রাখার উপায় নেই। কারণ সেই রেলিংয়ের এক দিক ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট সব বিজ্ঞাপনের কাট আউট। পার্কের সবুজের দিকে তাকাতে গিয়ে চোখ আটকে যায় হোর্ডিংয়ে।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২০
রবীন্দ্র সদন চত্বর

রবীন্দ্র সদন চত্বর

উল্টোডাঙা মোড়ে গোল করে ঘেরা জায়গাটাতেই শুধু রয়েছে সবুজের ছোঁয়া। পার্কের মতো করে সাজানো রয়েছে চারদিক। উল্টোডাঙা মোড়ে কংক্রিটের মধ্যে ওই রেলিং দিয়ে ঘেরা সবুজের দিকে তাকালেই হয়তো কিছুটা চোখের আরাম পাওয়া যায়। কিন্তু রেলিংয়ের ভিতরের সবুজে চোখ রাখার উপায় নেই। কারণ সেই রেলিংয়ের এক দিক ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট সব বিজ্ঞাপনের কাট আউট। পার্কের সবুজের দিকে তাকাতে গিয়ে চোখ আটকে যায় হোর্ডিংয়ে।

শ্যামবাজার পাঁচ মাথার বিখ্যাত গোলবাড়ি বলতে কোনটা বোঝায়, তা বোধহয় এখন অনেকেই বলতে পারবেন না। কারণ, গোলবাড়ির অনেকটা অংশই ঢাকা পড়ে গিয়েছে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ও ব্যানারে। শুধু ওই গোলবাড়িই নয়, উত্তর কলকাতার পুরনো দিনের অনেক বাড়ি যার বাইরের নকশাও ছিল দেখার মতো, তার কিছু অংশও ঢাকা পড়েছে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ে। ওই মোড়েই দাঁড়িয়ে আছে এক অভিনেত্রীর ভাঙা কাটআউট। শুধু দেখতেই খারাপ লাগছে এমন নয়, পথচলতি মানুষের আশঙ্কা ওই বিশাল কাটআউট যে কোনও দিন ভেঙে পড়তে পারে কারও মাথায়।

শুধু উত্তর কলকাতাই নয়, দক্ষিণের রাসবিহারী মোড়ের অবস্থাও অনেকটা এক রকম। দেখা গেল, বিশাল হোর্ডিং খুলে নিয়ে যাওয়ার পরে খোলা হয়নি পিছনের কাপড়টা। একটু হাওয়া দিলেই উড়ে চলেছে সে কাপড়।

হাজরা মোড়

গড়িয়াহাট মোড়ে আবার ডিভাইডারে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের কাঠামো। সেখানে আটকানো বিজ্ঞাপনের কাটআউট। ফ্লেক্সে এমন কিছু রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলের কথা লেখা রয়েছে, যা হয়ে গিয়েছে অন্তত মাস কয়েক আগে।

শুধু এই ক’টি জায়গাই নয়, শহরে দৃশ্যদূষণের নানা উদাহরণ চোখে পড়বে যে কোনও অঞ্চলে চলতে চলতে। কোথাও পার্কের রেলিংয়ে মেলা হয়েছে নানা রকমের জামাকাপড়, কোথাও ফুটপাথের রেলিং ঢাকা পড়েছে প্লাস্টিকে। কোথাও আবার নির্মম ভাবে গাছের ডালপালা ছাঁটা হয়েছে হোর্ডিংয়ের স্বার্থে। মধ্য কলকাতার ধর্মতলা এলাকা হোর্ডিং ফ্রি জোন হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পরে সব হোর্ডিং খুলে ফেলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু খোলা হয়নি হোর্ডিং বসানোর লোহার কাঠামো। পুরনো দিনের বাড়িগুলিতে এ রকম লোহার কাঠামো দেখে এক পথচারীর বক্তব্য, “মনে হচ্ছে বাড়িগুলির টি বি রোগ হয়েছে।”

শুধু দৃশ্য দূষণই নয়, রাস্তার যেখানে সেখানে হোর্ডিং অনেক সময়ে পথদুর্ঘটনার কারণও হয়ে দাঁড়ায় বলে মনে করে প্রশাসনের একাংশ। গিরিশ পার্কের কর্তব্যরত এক ট্রাফিক পুলিশকর্মী ওই মোড়ের চারদিকে লাগানো হোর্ডিংগুলি দেখিয়ে বলেন, “ওই সব বিজ্ঞাপনের দিকে দৃষ্টি চলে গিয়ে অন্যমনষ্ক হয়ে বড়সড় দুর্ঘটনাও ঘটে যায় অনেক সময়ে।” তাই হোর্ডিং লাগানোর ক্ষেত্রে শুধু দৃশ্যদূষণ কমানোই নয়, পথ-নিরাপত্তার কথাও বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন ওই সার্জেন্ট।

পরিকল্পনাহীন ভাবে হোর্ডিং লাগলে শহর অসুন্দর হয়ে যায়, শহরের নিজস্ব সত্ত্বা, নিজস্ব পরিচয় হারিয়ে যায় বলে মনে করেন চিত্রশিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পরিকল্পনাহীন ভাবে যেখানে সেখানে হোর্ডিং লাগানোয় ক্রমশই অসুন্দর হচ্ছে শহর। কলকাতা শহরের কোনও কোনও জায়গার চরিত্রটাই হারিয়ে যাচ্ছে অপরিকল্পিত ভাবে হোর্ডিং লাগানোর জন্য। তিনি আরও বলেন, ‘‘বিদেশে বড়বড় শহরে ঘুরে দেখেছি, সর্বত্রই হোর্ডিং লাগানো হয়েছে বিজ্ঞানসন্মত ও পরিকল্পিত ভাবে। এমনকী, বিদেশে বাড়ির বারান্দায় ভিজে জামাকাপড়ও মেলা নিষেধ। কলকাতা শহরে অপরিকল্পিত ভাবে হোর্ডিং-ব্যানার দৃশ্যদূষণ তো করেই সঙ্গে আমাদের মানসিক পীড়াও দেয়।’’

রাসবিহারী মোড়।

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত আবার মনে করেন, ‘‘হোর্ডিং লাগানোর জন্য বন দফতরের অনুমতি না নিয়ে গাছ কেটে বা গাছের ডাল এমন ভাবে ছাঁটা হচ্ছে যে, বহু গাছ মরে যাচ্ছে।”

তাঁর অভিযোগ, ভি আই পি রোডে এ রকম বহু গাছ হোর্ডিংয়ের জন্য মেরে ফেলা হয়েছিল। এই বিষয়ে তাঁরা থানায় ও বন দফতরে অভিযোগও দায়ের করেছিলেন।

যদিও আগের থেকে শহরে অপরিকল্পিত ভাবে লাগানো হোর্ডিংয়ের সংখ্যা অনেক কমেছে বলে দাবি মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমারের। তিনি বলেন, ‘‘আগে ধর্মতলা ও বিবাদী বাগ অঞ্চলে অনেক বেশি হোর্ডিং ছিল। এই জায়গাগুলি হোর্ডিং ফ্রি জোন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ও হোর্ডিং খুলে ফেলা হয়েছে। হেরিটেজ এলাকায় যেন কোনও হোর্ডিং না থাকে, সে বিষয়ে নজর দেওয়া হচ্ছে সব সময়ে।’’

কলকাতায় হোর্ডিং লাগানো নিয়ে আগের থেকে অনেক বেশি বিধি-নিষেধ এসেছে বলে মনে করছেন হোর্ডিং সংস্থার আধিকারিকেরাও। তাঁরা জানান, পুর-বিধি মেনেই এখন কাজ হয়। হেরিটেজ জোনে এখন আর হোর্ডিং লাগানো হচ্ছে না। তাঁদের দাবি, অনেক সময়ে রাস্তার মোড়ে পুলিশের কিয়স্ক, সিগন্যালের আশপাশে সৌন্দর্যায়ন তাঁরাই করে দেন। তার বিনিময়ে তাঁদের হোর্ডিং লাগানোর নির্দিষ্ট জায়গা দেওয়া হয়। সেখানেই তাঁরা হোর্ডিং লাগান।

বুধবার ছবি তুলেছেন সুদীপ্ত ভৌমিক।

aryabhatta khan rabindrasadan hazra crossing rashbihari
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy