Advertisement
E-Paper

বিমান সফরে দেদার ফাউ মশার কামড় আর কেত্তন

কষে বাঁধতে হয়েছে সিট বেল্ট। আচম্বিতে পায়ের পাতায় কুটুস! চপেটাঘাতে হত্যা সেরে খানিক চুলকে নেবেন, তার উপায় নেই। হাতটাই যে পৌঁছচ্ছে না। কারণ, একে তো বেল্ট-বাঁধনের বাধা। তার উপরে আসনটা দু’জনের মাঝখানে। অগত্যা আসনে বসে দাঁতে দাঁত চেপে কামড় সহ্য করতেই হল। সামনের আসনের যাত্রী তত ক্ষণে দু’হাত তুলে হাততালি দেওয়ার ভঙ্গি করে শব্দ করলেন চটাস। কিন্তু তাঁর হাতের ফাঁক গলে তত ক্ষণে উড়ে গিয়েছে শত্তুর!

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৮:৪০
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

কষে বাঁধতে হয়েছে সিট বেল্ট। আচম্বিতে পায়ের পাতায় কুটুস!

চপেটাঘাতে হত্যা সেরে খানিক চুলকে নেবেন, তার উপায় নেই। হাতটাই যে পৌঁছচ্ছে না। কারণ, একে তো বেল্ট-বাঁধনের বাধা। তার উপরে আসনটা দু’জনের মাঝখানে। অগত্যা আসনে বসে দাঁতে দাঁত চেপে কামড় সহ্য করতেই হল। সামনের আসনের যাত্রী তত ক্ষণে দু’হাত তুলে হাততালি দেওয়ার ভঙ্গি করে শব্দ করলেন চটাস। কিন্তু তাঁর হাতের ফাঁক গলে তত ক্ষণে উড়ে গিয়েছে শত্তুর!

ওই উড়ুক্কু শত্রুর পাল্লায় পড়লে ঈশ্বর গুপ্ত হয়তো নিজের প্রবাদপ্রতিম পঙ্ক্তি কিঞ্চিৎ বদলে নিয়ে বলতেন, রেতে মশা দিনে মাছি, কলকেতার বিমানে আছি। তিন-চার মাস ধরে যাঁরা কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেছেন, সেই সব যাত্রীর অধিকাংশই কোনও না-কোনও সময়ে এই দৃশ্যের সাক্ষী তো বটেই, ভুক্তভোগীও। ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, জেট বাএয়ার ইন্ডিয়া সব সংস্থার বিমানে একই দৃশ্য! কলকাতা থেকে ছাড়ার সময় যাত্রীরা দেখছেন, বিমানে তাঁদের থেকে মশাই বেশি। সুযোগ-সুবিধা মতো চলছে কুটুস-কাটুস। এবং চটাস চটাস!

মশার পোয়াবারো কেন? তাদের মোকাবিলার ব্যবস্থা হয়েছে কি?

বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, বিমান যেখানে দাঁড়ায়, মাস চারেক আগেও সেখানে মশা তাড়ানোর কামান দাগা হতো। যাত্রীরা টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে যে-পথে হেঁটে বিমানে উঠতেন, সেখানেও গর্জন করত মশা মারাার কামান। যেখানে যাত্রীদের বাস দাঁড়িয়ে থাকে, কামান গর্জাত সেখানেও। বিমানবন্দরের এক অফিসার জানান, একটি বেসরকারি সংস্থার জনা তিনেক কর্মী রোজ সন্ধ্যার মুখে কাঁধে মেশিন নিয়ে মশা মেরে বেড়াতেন। প্রায় তিন মাস তা বন্ধ। নতুন দরপত্র ডাকা হয়নি।

ফল ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের। তাঁদের ওঠার জন্য প্রায় ৪০ মিনিট বিমানের দরজা খোলা থাকে। উল্টো দিকের দরজা খুলে তোলা হয় খাবার এবং অন্যান্য জিনিস। আর সন্ধ্যার মুখে সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় মশকবাহিনী। দরজা জিয়ে হুহু করে ঢুকে পড়ে তারা। কামড় আর কেত্তনের অস্ত্র বাগিয়ে। এক বিমান সংস্থার অফিসারের কথায়, “যাত্রীরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা ওঠার আগেই মশা মারা হচ্ছে না কেন? আসলে খোলা দরজা দিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গেই তো ঢুকে আসছে মশা।”

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে ইন্ডিগোর উড়ানে দিল্লি যাচ্ছিলেন এক যুবক। আগেভাগে বিমানে উঠে দেখেন, চার দিকে পোঁ পোঁ রণতূর্য বাজিয়ে তাল ঠুকছে মশার দল। তাঁর কথায়, “সন্ধ্যায় শহরের রকের আড্ডায় মশা তাড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু বিমানে বসে হাত-পা চালিয়ে মশা তাড়ানো বা মারার অভিজ্ঞতা এই প্রথম।” যাত্রীরা বেজায় বিরক্ত। বিমানসেবিকাদের জানানো হল। বিমান ছাড়ার আগেই সেবিকারা এক প্রস্ত ওষুধ ছিটিয়েও দিলেন। কিন্তু থোড়াই কেয়ার! মশকবাহিনী খানিক জিরিয়ে নিয়ে নতুন উদ্যমে হামলার ছক কষে নেয়।

কলকাতা থেকে নিয়মিত বিমানে যাতায়াত করেন ব্যবসায়ী সৈকত বসু। তাঁর কথায়, “কয়েক দিন আগে ইন্ডিগোর উড়ানে চেন্নাই গেলাম। মাস তিনেক ধরে বারবার যাতায়াত করতে হচ্ছে অন্যান্য শহরেও। যতই দিন যাচ্ছে, দেখছি, বিমানে মশার উপদ্রব বেড়ে চলেছে।”

কিন্তু সব সময় যে মশা তাড়ানোর ওষুধটাও জুটছে না, অনুযোগ সৈকতবাবুর।

কলকাতার ব্যবসায়ী কাকলি মিত্রেরও বিমানে নিত্য যাতায়াত। তাঁর কথায়, “আজকাল বিমানে খুব বেশি মশা থাকছে। এত বিরক্ত লাগে! অনেকে নানা ধরনের উল্টোপাল্টা মন্তব্যও করেন। সে-দিন স্পাইসজেটে মুম্বই গেলাম মশার কামড় খেতে খেতেই। বিমানসেবিকাদের বলেও বিশেষ লাভ হয়নি।”

শুধু কি বিমানে? ইদানীং বিমানবন্দরে যাত্রীদের বাসেও দখলদারি কায়েম করছে মশকবাহিনী। যুবক যাত্রীর জবানি, “কলকাতায় নামার পরে ভিন্ রাজ্যের এক যাত্রী বিমানবন্দরের বাসে মশা দেখে টিপ্পনী কাটলেন, ‘আহ্! কলকাত্তা আ গিয়া!’ এমন লজ্জা করছিল!”

ক্ষোভ আছে বিমান সংস্থাগুলিরও। যেমন একটি বিমান সংস্থার এক অফিসার বলেন, “নতুন টার্মিনাল হওয়ার পরে এলাকা বেড়েছে। জঙ্গল, আগাছা ভাল করে পরিষ্কার হয় না। জল দাঁড়িয়ে থাকে। নালা-নর্দমায় মশা মারার তেল পড়ে না। তাই সন্ধ্যার পরে বিমান ঘিরে, বিমানের ভিতরে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা তাড়া করে বেড়ায়।”

মশা মারার কী ব্যবস্থা হচ্ছে?

জবাবের আশায় ফোন করেও বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মাকে ধরা যায়নি। তবে অবিলম্বে মশা তাড়াতে শুক্রবারেই বৈঠক হয়েছে বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর।

মশাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

mosquito airport
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy