কাজ চলছে। ছবি:স্বাতী চক্রবর্তী
রাত ন’টা। আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই খবর দিয়েছিলেন দমকল কেন্দ্রে। বরাহনগর জুট মিলের গুদামের সেই আগুন পরে ১৭টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় আড়াই ঘণ্টায় নেভানো সম্ভব হয়েছিল। ২০১২-র ফেব্রুয়ারির শেষ দিনের সেই ঘটনার পরেও বরাহনগর এলাকায় ঘটে গিয়েছে বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড। কখনও বরাহনগর জুট মিলে, কখনও আবার গোকুলবাবুর বাজার, শীতলা মাতা লেন, এ কে মুখার্জি রোডের বোর্ড মিলে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং বরাহনগর পুর প্রশাসনের মতে, প্রতি ক্ষেত্রেই দমকলে খবর দেওয়ার দীর্ঘ ক্ষণ পরে বা বেশ কিছুটা পরে ইঞ্জিন পৌঁছেছে ঘটনাস্থলে। এই প্রসঙ্গে দমকলের এক অফিসার জানাচ্ছেন, প্রাথমিক ভাবে দূরত্ব, এলাকা এবং যানজটের উপরে ঘটনাস্থলে ইঞ্জিন পৌঁছনোর বিষয়টি নির্ভর করে।
এ বার সেই দূরত্ব ঘোচাতে বরাহনগর পুর এলাকার মধ্যেই হচ্ছে দমকল কেন্দ্র। ডানলপের মোড় থেকে কিছু দূরে অশোকগড় পুর বাজারের গা ঘেঁষে হচ্ছে এই কেন্দ্র। এটি তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে পিডব্লিউডি-র নর্থ ডিভিশন। এই প্রকল্পের জন্য দু’কোটি টাকার অনুমোদনও মিলেছে। পিডব্লিউডি-র নর্থ ডিভিশন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এ বছরের শেষেই তৈরি হয়ে যাবে কেন্দ্রটি। ৬০,০০০ লিটার জলধারণের ক্ষমতা সম্পন্ন একটি জলাধারও হচ্ছে কেন্দ্রটিতে। দমকল সূত্রের খবর, দু’টি পাম্পের দমকল কেন্দ্র এটি। অর্থাৎ কেন্দ্রে দু’টি ইঞ্জিন থাকবে।
দূরত্বের কারণে ইঞ্জিন পৌঁছতে দেরির বিষয়টি মানছেন বরাহনগর পুরসভার পুরপ্রধান অপর্ণা মৌলিকও। তিনি বলেন, “এই দিকগুলো বিবেচনা করেই দীর্ঘ দিন ধরে পুরসভার পরিকল্পনা ছিল বরাহনগর এলাকায় দমকল কেন্দ্র তৈরির। কয়েক বছর আগে আরআইসি-র কাছে জমি দেখানো হয়েছিল রাজ্যের দমকল বিভাগকে। কিন্তু দমকলের গাড়ি ঢোকা-বেরনোতে অসুবিধার কথা ভেবেই সেটি চূড়ান্ত হয়নি। অবশেষে অশোকগড় পুর বাজার সংলগ্ন এই চার কাঠার জমিটি চূড়ান্ত করে দমকল। বরাহনগর পুরসভা নির্দিষ্ট নিয়মে জমি হস্তান্তর করার পরেই ধাপে ধাপে কাজ এগোচ্ছে।”
দমকল কেন্দ্র তৈরির খবরে কার্যত স্বস্তিতে বরাহনগরবাসী। বাসিন্দা সমর সেনগুপ্ত জানান, প্রায় প্রতি বছরই জুট মিলে আগুন লাগে। এ ছাড়াও গত পাঁচ বছরে অনেকগুলো বড় আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে এই পুর এলাকায়। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তো আছেই। বাসিন্দাদের মতে, এত দিন এলাকায় আগুন লাগলে কামারহাটি দমকল কেন্দ্রের চারটি ইঞ্জিন অথবা কাশীপুর দমকল কেন্দ্রের তিনটি ইঞ্জিনের উপরে নির্ভর করতে হত। এই কেন্দ্রটি তৈরি হলে সেই নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমবে। বরাহনগর পুর এলাকার বিরোধীদের কথায়, এটি হলে বরাহনগরের পাশাপাশি কামারহাটি, উত্তরপাড়া এলাকার বিস্তীর্ণ অংশের মানুষও উপকৃত হবেন। কারণ ইঞ্জিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy