Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভবানীপুরে নিজের বাড়িতে খুন বৃদ্ধা, উধাও টাকা-গয়না

সন্ধ্যার পরে অফিস থেকে ফিরে মেয়ে দেখেছিলেন, বাড়ির দরজা ভেজানো। শোওয়ার ঘরের মেঝেতে খাটের পাশে বৃদ্ধা মা পড়ে রয়েছেন। দেহে কোনও সাড় নেই। মাথায় হাল্কা চোটের দাগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

সন্ধ্যার পরে অফিস থেকে ফিরে মেয়ে দেখেছিলেন, বাড়ির দরজা ভেজানো। শোওয়ার ঘরের মেঝেতে খাটের পাশে বৃদ্ধা মা পড়ে রয়েছেন। দেহে কোনও সাড় নেই। মাথায় হাল্কা চোটের দাগ। কিন্তু পরে মেয়ে পুলিশকে জানালেন, ঘরের আলমারিতে তাঁর বিয়ের জন্য রাখা ৬ লক্ষ টাকাও উধাও। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই বুধবার রাতে পুলিশ জানাল, ভবানীপুরের বাসিন্দা দীপালি সরকার নামে ওই প্রৌঢ়াকে (৬৭) খুন করা হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, টাকা হাতানোর জন্য ওই বৃদ্ধার কোনও আত্মীয় তাঁকে খুন করে থাকতে পারেন। তল্লাশি শুরু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১/৩এ, জাস্টিস দ্বারকানাথ রোডের বাসিন্দা নিহত দীপালিদেবীর মেয়ে গৌরীর বিয়ে ঠিক হয়েছে সম্প্রতি। গৌরী পার্ক স্ট্রিটের একটি সংস্থার সচিব। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে অফিস বেরোনোর সময়ে দীপালিদেবী সুস্থই ছিলেন। সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে গৌরী প্রথমে ভেবেছিলেন, উচ্চ রক্তচাপের রোগী তাঁর মা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছেন। তাতেই মাথায় আঘাতের চিহ্ন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিকিৎসককে ডাকেন। চিকিৎসক জানান, দীপালিদেবী মারা গিয়েছেন। তবে তাঁর মাথার চোট পড়ে যাওয়ার মতো নয় বলে তাঁর সন্দেহ হয়। এর পরেই গৌরী পুলিশে খবর দেন। পুলিশ জানায়, দীপালিদেবীর গলাতেও আঘাতের চিহ্ন ছিল।

পুলিশ ওই রাতে গৌরীকে আরও জানায়, দীপালিদেবীর ঘরের আলমারি থেকে তাঁর বিয়ের জন্য রাখা ৬ লক্ষ টাকা, গয়না-সহ ব্যাঙ্কের লকারের চাবি এবং পাসবই উধাও। গৌরীর দাবি, আলমারির চাবি কোথায় থাকত, তা জানতেন শুধু তিনি ও তাঁর মা।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার এমন কেউ ওই ঘরে ঢুকেছিল, যাকে দীপালিদেবী চিনতেন। গৌরীর কাছ থেকে কয়েক জন আত্মীয়ের নাম জোগাড় করে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, এক আত্মীয়ের কথায় বিস্তর অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, দীপালিদেবীর স্বামী কলকাতা পুরসভার কর্মী ছিলেন। ছ’বছর আগে তিনি মারা যান। মেয়ে গৌরীকে নিয়ে বাড়ির দোতলায় থাকতেন দীপালিদেবী। মেয়ে অফিসে যাওয়ার পরে একাই থাকতেন তিনি। বাড়ির একতলায় এক ব্যক্তি ভাড়া থাকেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

বুধবার সন্ধ্যায় ভবানীপুরের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মায়ের মৃত্যুর পরে বেশ আতঙ্কে রয়েছেন গৌরী। তবে মায়ের খুনের বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি তিনি। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ অন্য এক মহিলাকে নিয়ে তিনি থানায় যান। সেখানে থানার অফিসারদের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা কথা বলে বেরিয়ে আসার পরেও তিনি মুখ খোলেননি। এমনকী, দীপালিদেবীর খুনের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি এলাকার বাসিন্দা কিংবা ভাড়াটে ওই ব্যক্তিও। খুনের দিন সন্ধ্যায় তাঁরা কাউকে দেখেছিলেন কি না, তা-ও জানাতে চাননি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মৃতার আত্মীয়দের পাশাপাশি যাঁরা দীপালিদেবীদের বাড়িতে আসতেন, তাঁদের সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মা বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, টাকা ও সোনার গয়না হাতানোর জন্যই এই খুন। তবে অন্য কয়েকটি দিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bhavanipur murder old lady
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE