Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মফসসল থেকে এসে কলকাতা জয়ের এমন দৃষ্টান্ত বেশি নেই

পবিত্র সরকার
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৩:২৩
Share: Save:

শম্ভু মিত্র এবং উৎপল দত্ত, দু’জনেই কলকাতার থিয়েটার এবং গণনাট্যের সমর্থনে একটা নাগরিক সমাজে দীর্ঘ দিন ধরে তাঁদের শিল্পচর্চার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই তুলনায় অজিতেশ মফস্সল থেকে এসে অল্প দিনের মধ্যেই ওই দু’জনের প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ের কাজ এবং খ্যাতি অর্জন করেন। এটা আমার কাছে খুব আশ্চর্যের মনে হয়। অবশ্যই অজিতেশ গণনাট্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এবং তার সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু যে নাটক নিয়ে তিনি প্রথম বাঙালির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তা কোনও ভাবেই গণনাট্যের দর্শনকে প্রতিফলিত করেনি। যৌথ মানুষের সমস্যার বদলে তিনি ব্যক্তির সঙ্কটকে তুলে ধরলেন। বাকি দু’জনের তুলনায় তাঁর হাতে খ্যাতনামা অভিনেতা-অভিনেত্রীর সম্ভার ছিল কম। প্রযোজনার কলাকৌশলও তাঁর হাতে তত বেশি ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি নিজের নাম এই দু’জনের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছিলেন। মফস্সল থেকে এসে কলকাতা জয়ের এমন দৃষ্টান্ত বেশি নেই।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ‘দাও ফিরে সে অরণ্য’ নাটক দিয়েই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। অভিনয় দেখে খুশি হয়ে নান্দীকারে যোগ দিতে বলেন। ১৯৬৪ সালে আমি সেখানে যাই। খানিকটা কমিউনিস্ট পার্টির মতো শৃঙ্খলা ছিল ওই দলে। যাওয়া মাত্রই অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া যেত না। দলের সদস্য হিসেবে অধ্যাপক, ডাকপিওন, দরজি বা লেদ মেশিনের কারিগরের কোনও ফারাক ছিল না। ফলে আমাকে থিয়েটারের সমস্ত রকম কাজে হাত লাগাতে হত। দলের সংহতির জন্য তার নানা রকম পরিকল্পনা ছিল। সকলের এক রকমের ফোল্ডিং বেড, এক রকমের স্যুটকেশ তিনি কিনে দিয়েছিলেন। যাতে কোথাও গেলে মনে হয়, আমরা এক দলের লোক। আমাকে দিয়ে কয়েকটি বিদেশি নাটক পড়িয়েছিলেন। হ্যরল্ড পিন্টারের ‘দ্য বার্থ ডে পার্টি’ আমাকে অনুবাদ করতে বলেন এই সময়ে। তা ছাড়া ‘তিন পয়সার পালা’র নাট্যরূপ দিতেও আমি তাঁকে সাহায্য করি। ওঁর নির্দেশনায় ‘শের আফগান’ আমার প্রথম বড় নাটক। ডাক্তারের চরিত্রটি আমাকে খুব বিখ্যাত করেছিল। ২০০-২৫০ শো করেছিলাম। সারা বাংলা জুড়েই শো হয়েছিল।
আমি তখন বিদেশে, শুনলাম স্ত্রী লিলিকে ত্যাগ করে আমাদের অন্য এক বন্ধুর স্ত্রীকে বিবাহ করেছেন অজিতেশ। তখন আমার সঙ্গে কিছুটা দুরত্ব বাড়ে তাঁর। তত দিনে ‘নান্দীকার’ ভেঙে গিয়েছে। ১৯৭৮-’৭৯ নাগাদ তিনি আমাকে ‘নান্দীমুখ’-এর নাটক দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। দেখা হওয়ার পর আন্তরিক কথাবার্তায় ‘ক্ষোভ’ ভুলিয়ে দিয়ে পিন্টারের অনুবাদ করা সেই পুরনো খাতা আমার কাছ থেকে চেয়ে নেন। নাটকটি করবেন বলেন। এবং সত্যি সত্যি সম্পূর্ণ নতুন অভিনেতাদের দিয়ে ‘৩৩তম জন্মদিন’ নামে একটি অসাধারণ প্রযোজনা মঞ্চস্থ করেন।

এই স্মৃতি ম্লান হওয়ার আগেই এক দিন ফোন এল, তিনি আর নেই!

ভ্রান্তিমূলক তথ্য

আনন্দবাজার পত্রিকার ‘কলeকাতা’য় ‘অতীতের তাঁরা’ বিভাগে অজিতেশের সন্ধানে (২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৪) পড়ে অভিভূত হলাম।

লেখা, ছবি ও সাক্ষাৎকারে অজিতেশের বিচিত্র প্রতিভা পাঠকদের কাছে জীবন্ত করে ফুটিয়ে তোলার এই প্রয়াস প্রশংসনীয়। অজিতেশের সংস্পর্শে আসা নাট্যব্যক্তিত্বদের বিশ্লেষণে এই লেখা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এমনকী, ব্রাত্য বসু সরাসরি ব্যক্তি অজিতেশের সংস্পর্শে না-এসেও অজিতেশের নাট্যদর্শনে প্রভাবিত হয়ে তাঁকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন। একই ভাবে অজিতেশের অবদান আজকের নাট্যপ্রেমীদের মধ্যেও বিশেষ স্থান পেয়েছে। আনন্দবাজার এই লেখা প্রকাশ করে নিশ্চয়ই কৃতিত্বের ভাগিদার। কিন্তু মাননীয় শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের লেখায় অজিতেশের ব্যক্তি জীবনের বর্ণনায় একটি ভুল চোখে পড়ল। উনি লিখেছেন, “আমি তখন বিদেশে, শুনলাম স্ত্রী লিলিকে ত্যাগ করে আমাদের অন্য এক বন্ধুর স্ত্রীকে বিবাহ করেছেন অজিতেশ।” এই তথ্য ঠিক নয়। কারণ, অজিতেশ দ্বিতীয় বার বিবাহ করেননি। লিলি বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তাঁর অন্য কোনও স্ত্রী ছিল না।

ইতা চট্টোপাধ্যায় ঘোষ

মালয়েশিয়া

পবিত্র সরকারের উত্তর: আমি লিখেছি যে অজিতেশের দ্বিতীয় বিবাহ আমার ‘শোনা’ কথা, আমি ‘শুনলাম’ ক্রিয়াপদটি ব্যবহার করেছি। তাই অজিতেশ বিবাহ করেছেন কি করেননি, এ সম্বন্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ আমার হাতে আছে— এমন ঘোষণা আমার করার সুযোগ ছিল না। ইভা ‘শুনলাম’ কথাটা লক্ষ করেননি কেন বুঝলাম না। ‘অজিতেশ বিবাহ না করে অন্য এক জনের স্ত্রীর সঙ্গে, নিজের স্ত্রীকে ত্যাগ করে, সংসার পেতেছেন’—এটাই সত্য বলে ঘোষণা করলে অজিতেশের গৌরব বাড়ে না। আমার অগ্রজ নাট্যগুরু সম্বন্ধে, শুধু ব্যক্তিগত নয়, যে সামাজিক শ্রদ্ধার পরিসর থাকা উচিত ছিল, তা কি অক্ষত থাকে? ঠিক আছে, ‘বিবাহ করেছিলেন’ কথাটা আমি ফিরিয়ে নিচ্ছি।

অনিচ্ছাকৃত ভাবে এই লেখা কাউকে ব্যথিত করে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE