Advertisement
১৯ মে ২০২৪

লাইনে ফাটল, ব্যস্ত সময়ে বিগড়ে ফের ভোগাল মেট্রো রেল

নতুন রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া শপথ নিয়েই রেল ভবনে এসে বলেছিলেন, ‘‘প্রথম কাজ হবে যাত্রী-পরিষেবা সুনিশ্চিত করা।’’ ওই নির্দেশ কলকাতা মেট্রো-সহ ভারতের ১৭টি জোনেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজেই কলকাতায় এসে তিনটি জোনকে ফের ওই নির্দেশের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু কোথায় কী! সেই ট্র্যাডিশন চলছেই। যাত্রীদের ভোগান্তি লেগেই রয়েছে।

মেট্রোর পরিষেবা বন্ধ। বাস-ট্যাক্সির অপেক্ষায় যাত্রীরা। মঙ্গলবার, সেন্ট্রাল স্টেশনের সামনে। —নিজস্ব চিত্র

মেট্রোর পরিষেবা বন্ধ। বাস-ট্যাক্সির অপেক্ষায় যাত্রীরা। মঙ্গলবার, সেন্ট্রাল স্টেশনের সামনে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

নতুন রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া শপথ নিয়েই রেল ভবনে এসে বলেছিলেন, ‘‘প্রথম কাজ হবে যাত্রী-পরিষেবা সুনিশ্চিত করা।’’ ওই নির্দেশ কলকাতা মেট্রো-সহ ভারতের ১৭টি জোনেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজেই কলকাতায় এসে তিনটি জোনকে ফের ওই নির্দেশের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু কোথায় কী! সেই ট্র্যাডিশন চলছেই। যাত্রীদের ভোগান্তি লেগেই রয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেও মেট্রো বিপর্যস্ত হয়েছে এই শহরে। আর তারই সঙ্গে রাস্তায় দেখা গিয়েছে সেই চেনা ছবি। হাজার হাজার মানুষ এই পচা গরমে বাস বা ট্যাক্সি ধরার জন্য ক্রমাগত হেঁটে চলেছেন। কোথায় বাস, কোথায় ট্যাক্সি! সবই তো এখন হাতে গোনা। যাঁরা কোনও মতে উঠতে পারছেন, তাঁরা নিজেকে ধন্য মনে করছেন। বাকিরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন ঘামে ভিজে জবজবে অবস্থায়।

মেট্রো সূত্রে খবর, এ দিন মেট্রো গোলমাল শুরু হয় সন্ধ্যা সওয়া ৬টা থেকে। মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক জানান, শ্যামবাজার থেকে শোভাবাজার স্টেশনের মাঝে আপ লাইনে ফাটল ধরায় আটকে পড়ে মেট্রো। এর পরে ডাউন লাইনেও পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে গিরিশ পার্ক স্টেশন থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত ট্রেন চালানো শুরু হয়। মেট্রো বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে যে সব যাত্রী স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা আবারও ট্রেনের আশায় ফিরে আসেন মেট্রো স্টেশনগুলিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গিরিশ পার্ক থেকে প্রতিটি স্টেশনেই ভিড়ের ঢল নামে। যাত্রীদের অভিযোগ, মেট্রো কর্তৃপক্ষ মাইকে কোনও ঘোষণাই করেননি। ফলে ট্রেন চলবে কি না, সেটা বুঝতেও তাঁদের হিমশিম খেতে হয়েছে। পরে সে পরিষেবাও আবার কমিয়ে সেন্ট্রাল পর্যন্ত করে দেওয়া হয়। ফলে আরও ভিড় বাড়ে রাস্তায়। বিভিন্ন স্টেশনে একটার পর একটা ট্রেন আটকে পড়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে। অবশেষে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় সাড়ে আটটা নাগাদ।

চাঁদনি চকে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন চঞ্চল মিত্র। কালীঘাট স্টেশন থেকে সাড়ে ছ’টায় মেট্রোয় ওঠেন। এসপ্ল্যানেডে নেমে যেতে বাধ্য হন তিনি। তখনই বেজে গিয়েছে সাতটা কুড়ি। অর্থাৎ, ১২ মিনিটের পথ আসতে লেগে গিয়েছে পাকা ৫০ মিনিট। বাকি পথ হেঁটেই যান তিনি। চঞ্চলবাবুর কথায়, “কালীঘাট থেকেই মেট্রো ছাড়ে দেরি করে। তার পরে দু’টি স্টেশন পরপর দাঁড়িয়ে পড়ছিল মেট্রো। আর স্টেশনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ক্রমাগত বাড়ছিল ভিড়। ফলে ভিতরে প্রায় দমবন্ধ করা অবস্থা সৃষ্টি হয়। দরজাও বন্ধ হচ্ছিল না। আরও দেরি হয়।” যাত্রীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও ঘোষণা না করায় মেট্রোটি কত দূর যাবে, আদৌ যাবে কি না, তা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

নেতাজি ভবন স্টেশনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে মেট্রোটি খালি করে দেওয়ার জন্য ঘোষণা করা হয়। অনেকেই মেট্রো থেকে নেমে পড়েন। কিন্তু তার পরেই আবার ঘোষণা করা হয়, মেট্রোটি যাবে। যাত্রীরা আবার ছুটে এসে হুড়মুড়িয়ে মেট্রোয় উঠতে থাকেন। চঞ্চলবাবু বলেন, “তখন মনে হচ্ছিল, কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে যায়।”

কিন্তু মেট্রোর কথামতো রোজ যদি রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকঠাক হয়ে থাকে, তবে লাইনে ফাটল হল কেন? মেট্রোর কর্তারা ব্যাখ্যা দেননি। তবে তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, তাপমাত্রার হেরফেরে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে মেট্রোর সুড়ঙ্গে তাপমাত্রার পরিবর্তন না হওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তাপমাত্রার হেরফের কেন হল, তা নিয়ে অবশ্য মন্তব্য করেননি মেট্রোর কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

metro railway line crack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE