Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সাউথ পয়েন্টে ছাত্রের মৃত্যু

স্কুলে ন্যূনতম চিকিৎসাও মেলে না কেন, উঠছে প্রশ্ন

হাত ধরে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই যে ছেলের নিষ্প্রাণ মুখ দেখতে হবে, তা ভাবতেই পারেননি রুচিরাদেবী। রোজকার মতো বৃহস্পতিবারও সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ তিনি ছেলে রাজন্যকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন স্কুল ছুটির। তার আগেই মোবাইলে খবর এল, রাজন্য স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সাউথ পয়েন্ট স্কুল-কর্তৃপক্ষই তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন।

রাজন্য সরকার

রাজন্য সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০২:০৫
Share: Save:

হাত ধরে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই যে ছেলের নিষ্প্রাণ মুখ দেখতে হবে, তা ভাবতেই পারেননি রুচিরাদেবী।

রোজকার মতো বৃহস্পতিবারও সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ তিনি ছেলে রাজন্যকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন স্কুল ছুটির। তার আগেই মোবাইলে খবর এল, রাজন্য স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সাউথ পয়েন্ট স্কুল-কর্তৃপক্ষই তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি যেন অবিলম্বে সেখানে চলে আসেন। হাসপাতালে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ছেলে আর নেই।

কী ভাবে মারা গেল বছর ছয়েকের রাজন্য, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না রুচিরাদেবী। তাঁর প্রশ্ন, অসুস্থ হওয়ার পরে স্কুলের ভিতরে কি কোনও চিকিৎসক তাঁর ছেলেকে দেখেছিল? এ দিন তিনি বলেন, “স্কুলে কোনও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। আজ আমার কোল খালি হয়ে গেল। কিন্তু আর কোনও মায়ের সঙ্গে যেন এমন না ঘটে, তার জন্য প্রত্যেক স্কুলে অন্তত এক জন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ থাকা দরকার।” একই দাবি তুলেছেন স্কুলের অন্য অভিভাবকেরাও। ঘটনার পরেই আতঙ্কিত হয়ে স্কুলের সামনে ভিড় করেন তাঁরা। স্কুলে চিকিৎসক রাখার দাবি জানাতে থাকেন।

ওই স্কুলেরই তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর মা একই প্রসঙ্গ টেনে এ দিন বলেন, “জানুয়ারিতে আমার মেয়ে স্কুলে পড়ে গিয়ে হাতে চোট পেয়েছিল। ঘণ্টা তিনেক হাতে শুধু একটা বালিশ ঠেকিয়ে তাকে সিক রুমে বসিয়ে রাখা হয়। যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে ওঠায় আমাদের খবর দেওয়া হয়। তার পরে স্কুলে এসে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। এক্স-রেতে দেখা যায়, হাত ভেঙেছে ওর।” ওই মহিলারও দাবি, এই ধরনের ঘটনা এড়াতে স্কুলে অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকু থাকা উচিত।

মৃত ছাত্র রাজন্যের মা ও বাবা। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

এ দিকে, এ দিন রাজন্যের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই স্কুলের ভিতরে থাকা পড়ুয়াদের অবস্থা জানতে অস্থির হয়ে পড়েন বাইরে অপেক্ষারত অভিভাবকেরা। স্কুলের পরিস্থিতি জানানোর জন্য তাঁরা বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাতে থাকেন। স্কুলের পক্ষ থেকে সদুত্তর না পেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এক দল ক্ষুব্ধ অভিভাবক স্কুলের বন্ধ গেটে লাথি ও ধাক্কা মারতে শুরু করেন। এর পরেই স্কুল-কর্তৃপক্ষ মাইকে রাজন্যের মৃত্যুর কথা জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে জানানো হয়, স্কুলের ভিতরে থাকা পড়ুয়ারা ভাল আছে।

ঘটনাস্থলে পৌঁছন গড়িয়াহাট থানার পুলিশ-সহ ডিসি (দক্ষিণ-পূর্ব) দেবব্রত দাস। অভিভাবকেরা যাতে নির্বিঘ্নে তাঁদের বাচ্চাদের বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে মাইক হাতে ময়দানে নেমে পড়েন দেবব্রতবাবুই। একে একে ক্লাসের ছুটি ঘোষণা করে ও বারবার অভিভাবকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি সামলান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজন্য তার পরিবারের সঙ্গে বাঘাযতীনে থাকত। এ দিন তার বাড়ি গিয়ে পরিবারের কারও দেখা মেলেনি। প্রথমে হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে ছাত্রের মৃতদেহটি ময়না-তদন্তের জন্য কাটাপুকুর মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে বাড়ি হয়ে কেওড়াতলা শ্মশানে নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ছোট্ট রাজন্যের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

south point school student died rajyna sarkar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE