Advertisement
০৪ মে ২০২৪

‘হচ্ছে-হবে’ যুক্তির আড়ালে ঢাকছে না নিকাশির সমস্যা

মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হলেই দু’-তিন দিন জলমগ্ন হয়ে থাকে উত্তর কলকাতার পাইকপাড়ায় রানি দেবেন্দ্রবালা রোড সংলগ্ন এলাকা। এলাকাটি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিতবাবুর (অভিযোগের চিঠিতে পদবী লেখেননি) বক্তব্য, “এখানকার বহুতলগুলিতে অনেক বয়স্ক মানুষ থাকেন। পুরো জায়গা জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় বহুতলের নীচেও জল জমে। বন্ধ হয়ে যায় লিফ্‌টও। পুরসভার এ ব্যাপারে কোনও হুঁঁশ নেই।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হলেই দু’-তিন দিন জলমগ্ন হয়ে থাকে উত্তর কলকাতার পাইকপাড়ায় রানি দেবেন্দ্রবালা রোড সংলগ্ন এলাকা। এলাকাটি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিতবাবুর (অভিযোগের চিঠিতে পদবী লেখেননি) বক্তব্য, “এখানকার বহুতলগুলিতে অনেক বয়স্ক মানুষ থাকেন। পুরো জায়গা জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় বহুতলের নীচেও জল জমে। বন্ধ হয়ে যায় লিফ্‌টও। পুরসভার এ ব্যাপারে কোনও হুঁঁশ নেই।”

ওই এলাকার কাউন্সিলর পুষ্পালি সিংহ শাসক তৃণমূলেরই। তাঁর বক্তব্য, “ওই অসুবিধার কথা জানি। নিকাশির পাইপলাইন না থাকায় সমস্যা হয়। বর্ষার আগেই সেখানে পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হবে। আশা করি স্থানীয় মানুষের সমস্যাও মিটবে।”

ওই ওয়ার্ডেরই ইন্দ্রলোক হাউসিং এস্টেটের দেওয়াল সংলগ্ন খোলা নর্দমা পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। সংক্রামক ব্যাধির আঁতুরঘর হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ দাসের। পুর-প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। পুষ্পালিদেবী অবশ্য জানিয়েছেন, ওই নর্দমার অনেকটা অংশই এখন ঢাকা হয়েছে। যে পরিমাণ কাজ বাকি রয়েছে, তা নির্বাচনের পরে শেষ করা হবে।

২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিবনারায়ণ দাস জানিয়েছেন, তাঁদের এলাকায় ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা অসম্পূর্ণ থাকায় চরম সমস্যা হচ্ছে। পরিবেশ নোংরা হয়ে থাকছে। প্রতিকার চেয়ে পুরসভায় দরবারও করেছেন। সমস্যাটি নিয়ে নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “এই অঞ্চলে কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ চলছে। সেই কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হয়। গত ৩৪ বছরে বামফ্রন্টের সময়ে কোনও কাজই হয়নি। ফলে এখন করতে গিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হচ্ছে।”

কংগ্রেস ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর সুমন সিংহ নিজেই এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত না হওয়া নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এলাকায় অনেক জায়গায় এখনও খোলা কাঁচা নর্দমা। তাতে অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে। যা শুনে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “কাজ শুরু হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই তা সম্পূর্ণ হবে।” সুমনদেবী অবশ্য যে দিন ওই অভিযোগ করেছিলেন, তখন তিনি কংগ্রেস দলেই ছিলেন।

৬ নম্বরের মতো বেলেঘাটায় ৩৫ নম্বরের কাউন্সিলর সমীর চক্রবর্তী জানান, নিকাশির জন্য ভূগর্ভস্থ নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ফলে জল জমে থাকার প্রবণতাও বাড়ে। বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে এলাকা। পুর-অধিবেশনে বিষয়টি বারবার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে জানান সমীরবাবু। ‘পুর-প্রশ্নের পুরো জবাব’-এ দেবাশিস কুমার বলেন, “যে কোনও পুর-প্রতিনিধির অভিযোগের অবশ্যই মূল্য রয়েছে। বিভাগীয় অফিসারদের খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।”

মধ্য কলকাতার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুকিয়া স্ট্রিটে জল জমলে তা সরতে অনেক সময় লাগে। প্রায় সব বর্ষণেই দেখা যায় দীর্ঘক্ষণ জলমগ্ন হয়ে থাকে সুকিয়া স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া এলাকা। ওই এলাকার এক বাসিন্দা এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন, কিন্তু চিঠিতে নিজের নাম লেখেননি। তাঁর এই সমস্যার বিষয়ে উত্তর দিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ঠনঠনিয়া, সুকিয়া স্ট্রিট, রাজা রামমোহন সরণি বৃষ্টি হলেই যে জলমগ্ন হয়ে পড়ে তা বহু দিন ধরেই দেখছে কলকাতার মানুষ। তবে তৃণমূল বোর্ড ২০১০ সালে ক্ষমতায় আসার পরে জল জমে থাকার সময়টা কমেছে।

মেয়র বলেন, “নিকাশির জল টানার জন্য ওখানে পাম্প বসানোর জায়গা খুঁজছি। মিলছে না।” বর্তমানে পামারবাজারের পাম্পিং স্টেশন দিয়েই ওই এলাকার নিকাশি জল বার করা হয়ে থাকে। ঠনঠনিয়ায় পাম্পিং স্টেশন হলে আরও দ্রুত জল বার করা যেত বলে মনে করেন শোভনবাবু।

দক্ষিণ এবং সংযোজিত কলকাতার কিছু ওয়ার্ডেও রয়েছে নিকাশির সমস্যা। ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অসিত চক্রবর্তী জানিয়েছেন শকুন্তলা পার্কে রবীন্দ্রভবনের পাশে কাঁচা নর্দমা এখনও পাকা হয়নি। ভুগতে হচ্ছে তাঁদের। ১২৫ এবং ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা জানান, বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে যায় তাঁদের এলাকা। তা বেরোতে দিন দুয়েকও লেগে যায়। মেয়র মেনে নিয়েছেন, বেহালার কিছু এলাকায় ওই সমস্যা রয়েছে। অঞ্চলটি পুরোপুরি সমস্যা মুক্ত করতে ২০০ কোটি টাকা খরচ করে নিকাশির উন্নয়নে হাত দেওয়া হবে। তিনি জানান, বেহালা চৌরাস্তা থেকে জোকা ট্রাম ডিপো পর্যন্ত নিকাশি নালা হবে। কেইআইআইপি প্রকল্পে কাজ হবে সেখানে। পাম্পিং স্টেশনও তৈরি হবে। তখন আর সমস্যা থাকবে না বলে আশ্বাস মেয়রের।

৮১ নম্বরের বাসিন্দা মিহির দাসের বক্তব্য, ভূগর্ভস্থ নিকাশির জল চুঁইয়ে পড়ার ফলে তা জমে গিয়ে মশার আঁতুড়ঘর তৈরি করছে এলাকায়। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না হলে মশাবাহিত রোগ ছড়াবে। জবাবে দেবাশিস কুমারের বক্তব্য, স্বাস্থ্য দফতরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

যদিও পুরসভার নিকাশি দফতরের এক পদস্থ অফিসার জানান, শহরের কিছু কিছু নিকাশি পাম্প বিদেশি। কেনার সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। খারাপ হলে সারাতে অসুবিধা হচ্ছে। ভবিষ্যতে পাম্প কেনার সময়ে পুর-প্রশাসনকে সজাগ হতে হবে বলে জানান তিনি। মেয়র অবশ্য জানান, কলকাতার এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক থেকে ইতিমধ্যেই ৩৭০০ কোটি টাকা পাচ্ছে পুর-প্রশাসন। কেইআইআইপি-র মাধ্যমে ওই টাকা খরচ হবে। এ বার ওই টাকার একটি বড় অংশ শহরের নিকাশির জন্য ব্যবহৃত হবে। তাতেই আগামী দিনে ভোল বদলে যাবে শহরের নিকাশির, দাবি মেয়রের।

তথ্য: অনুপ চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক ঘোষ ও দেবাশিস দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE