—ফাইল চিত্র।
শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেলেন কুণাল ঘোষ। সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কুণালের জামিন-মামলায় বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি মলয়মরুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ আজ এই রায় দিয়েছে।
দু’লক্ষ টাকার বন্ডে এই জামিন দেওয়া হয়েছে। আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত এই জামিন বৈধ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে তিনি নারকেলডাঙা থানা এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না। সিবিআইয়ের কাছে পাসপোর্ট জমা রাখার পাশাপাশি সপ্তাহে এক দিন কেন্দ্রীয় ওই গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হাজিরা দিতে হবে।
আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কুণাল ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে কুণালকে কাগজে-কলমে গ্রেফতার করে সিবিআই নিজেদের হেফাজতে নেয় ২০১৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। সারদা মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। যখনই নামী কেউ জামিন পেয়েছেন, নিজের মুক্তি দাবি জানিয়েছেন কুণাল। জেলের মধ্যেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, তাঁর জামিন মেলেনি। বরাবরই তাঁর জামিনের বিরোধিতা করে এসেছেন সিবিআই। প্রায় বছর দুয়েক পর তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করল কলকাতা হাইকোর্ট।
এ দিন বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি মলয়মরুত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে বেঞ্চ জানায়, অনেকগুলি মামলাকে একত্রিত করে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলাগুলির মধ্যে দু’টিতে কুণালের নাম ছিল। একটি টিটাগড় থানার করা অন্যটি রায়না থানার। এর মধ্যে টিটাগড় থানার করা মামলায় কুণালকে গ্রেফতার করা হয়। এবং পরে সেই মামলায় জামিনও মেলে অভিযুক্তের। আর রায়না থানার মামলায় তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়নি। কাজেই কী ভাবে এই অভিযুক্তকে আটকে রাখা যাবে। এর পর সিবিআই নানা যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির আগে বিচারপতি অসীম রায় জানিয়ে দেন, অভিযুক্তকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হবে। এবং বিরতি শেষেই সেই রায় ঘোষণা করা হবে। পরে সেই মতোই জামিনের রায় শোনানো হয়।
আরও পড়ুন: কুণাল জামিন পেলে ক্ষতি কী, প্রশ্ন কোর্টেরই
মঙ্গলবার ওই একই বেঞ্চ সিবিআই আইনজীবীকে জানিয়ে দেন, কোনও আইনেই আর অভিযুক্তকে আটকে রাখা যাবে না। কারণ হিসাবে তিনি জানান, এই মামলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে চলছে। যেখানে বিচারপতি সর্বোচ্চ তিন বছরের সাজা হতে পারে। পাশাপাশি ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, কোনও অপরাধে যদি সর্বোচ্চ তিন বছর সাজার বিধান থাকে, তা হলে বিচারাধীন অবস্থায় বন্দিকে দেড় বছরের বেশি আটকে রাখা যায় না। বিচারপতি জানিয়ে দেন, দেশের আইন অনুযায়ী কুণাল ঘোষকে আর জেলে রাখা সম্ভব নয়, কারণ তিনি ইতিমধ্যেই দু’বছরেরও বেশি সময় জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন।
বিচারপতি অসীম রায় সিবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এই মামলার বিচার হচ্ছে। ফৌজদারি বিধিতে ম্যাজিস্ট্রেটকে তিন বছরের বেশি সাজা দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অভিযুক্ত ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে জেলে রয়েছেন। কবে তারা সেই ‘আরও তদন্ত’ শেষ করবে, সিবিআই সেটা জানাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আপনিই বলুন। অভিযুক্তকে যদি অন্তর্বর্তী কালীন জামিন দিই, তাতে কতটা কী ক্ষতি হতে পারে।’’
সিবিআই আইনজীবী রাঘবচারিলু যুক্তি দেন, অভিযুক্ত প্রভাবশালী। জামিন দিলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। তখন বিচারপতি পাল্টা জানিয়ে দেন, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় জামিন পেয়েছিলেন। তিনি যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন। কিন্তু তার জন্য জামিন আটকায়নি। বিচারপতি অসীম রায় টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির কথাও উল্লেখ করেন। সেই মামলাতেও প্রভাবশালী ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝিকে জামিন দেওয়া হয়েছিল।
এর পর দুই বিচারপতির বেঞ্চে সিবিআই অনুরোধ জানায়, শুনানির দিন আর এক দিন বাড়ানো হোক। সেই মতো এ দিন শুনানির দিন ধার্য করেছিল আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy