Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সংখ্যালঘু মুখ কমছে, ক্ষোভের মুখে আলিমুদ্দিন

দলের পলিটব্যুরোয় তিন মুসলিম-সহ চার জন সংখ্যালঘু মুখ। দল প্রতিষ্ঠার পরে যা সর্বাধিক। কিন্তু রাজ্য কমিটি তো বটেই, জেলা নেতৃত্বেও তার প্রতিফলন নেই। এই নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। সদ্যসমাপ্ত রাজ্য কমিটির বৈঠকে প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান-সহ একাধিক নেতা এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রসূন আচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০৪:৩৯
Share: Save:

দলের পলিটব্যুরোয় তিন মুসলিম-সহ চার জন সংখ্যালঘু মুখ। দল প্রতিষ্ঠার পরে যা সর্বাধিক। কিন্তু রাজ্য কমিটি তো বটেই, জেলা নেতৃত্বেও তার প্রতিফলন নেই। এই নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। সদ্যসমাপ্ত রাজ্য কমিটির বৈঠকে প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান-সহ একাধিক নেতা এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যে রিপোর্ট পেশ করেছেন, তাতেও সংখ্যালঘু নেতৃত্ব তুলে আনার ক্ষেত্রে দলের ব্যর্থতা স্বীকার করা হয়েছে। গত এক মাস ধরে বিভিন্ন জেলায় সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হচ্ছে। সেখানেও দেখা যাচ্ছে, দু-একটি জেলা ছাড়া সর্বত্রই সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব কমছে!

বিগত বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোট থেকে স্পষ্ট, রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটের সিংহ ভাগ পাচ্ছে তৃণমূল। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির লক্ষ্য, এই ভোটে ফাটল ধরানো। সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাও যৌথ মঞ্চ গড়ে সেই চেষ্টাই করছেন। এই পরিস্থিতিতে দলে নেতৃত্বের প্রশ্নে মুসলিমদের গুরুত্ব দেওয়া না হলে কী করে মুসলিম ভোট ফিরে পাওয়া যাবে— এই প্রশ্নই উঠেছে সিপিএমের অন্দরে।

রেজ্জাক দলে থাকার সময়ে এ নিয়ে হামেশাই সরব হতেন। কিন্তু শুধু সংখ্যালঘু বলেই ‘কোটা’ মেনে তাঁদের নেতৃত্বে জায়গা দিতে হবে, এমন নীতিতে বামপন্থী দল চলে না। বরাবর এই সওয়ালই করে এসেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তাঁদের আরও
যুক্তি, সংখ্যালঘু বা তফসিলি, এই পরিচয়ের দৌলতে নেতৃত্বে জায়গা দিতে গেলে আসলে পরিচিতিসত্তার রাজনীতিকেই আঁকড়ে ধরা হয়! বামপন্থী দলে এমন রেওয়াজ চালু না থাকলেও নেতৃত্বে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব কমে যাওয়ায় সিপিএমের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ফের সরব হয়েছেন নেতাদের একাংশ।

এ ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু চেনা যুক্তি দেখিয়েই বলেছেন, ‘‘আমরা অন্য দলগুলির মতো সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবেও দেখি না। সামগ্রিক ভাবে মুসলিম, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের কী করে আরও বেশি করে দলে আনা যায়, আমরা তা নিয়ে আলোচনা করেছি।’’ সূর্যবাবুর দাবি, মইনুল বা অন্য কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেননি।

সূর্যবাবু রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে জেলায় জেলায় যে নোট পাঠানো হয়েছিল, তাতে সম্পাদকমণ্ডলী গঠনের প্রশ্নে সব শ্রেণির প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর বা কলকাতা জেলার সম্পাদকমণ্ডলীতে মুসলিম প্রতিনিধির সংখ্যা আগের থেকে হ্রাস পেয়েছে। যা নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে দলের মধ্যে। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে মুসলিম প্রতিনিধি বেড়েছে শুধু নদিয়ায়।

রাজ্য কমিটিতেও একই ছবি। মালদহ, উত্তর দিনাজপুরের মতো সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত জেলা থেকে এক জন মুসলিমও রাজ্য কমিটিতে নেই। হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর বা বাঁকুড়াতেও একই ছবি। রাজ্য কমিটির এ বারের বৈঠকে নতুন করে দু’জন স্থায়ী ও তিন জন আমন্ত্রিত সদস্য নেওয়া হলেও কোনও নতুন মুসলিম মুখ নেই। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করতে গিয়ে এ ব্যাপারে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল সূর্যবাবুকে। ঠিক একই ভাবে
উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেবও দলের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়েন।

রেজ্জাকের কথায়, ‘‘সিপিএমে মুসলিমরা উপেক্ষিত বলে আমি যে অভিযোগ তুলেছিলাম, তা কতটা সত্যি তা বার বার বোঝা যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Muslim face congre Biman Basu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE