Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
রুখে দিল পুলিশ-প্রশাসন

নাবালিকার সঙ্গে ছেলের বিয়ে ঠিক শিক্ষিকার

ক’দিন আগেই নাবালিকা বিয়ে বন্ধের জন্য স্কুলে সচেতনতা শিবিরে গালভরা ভাষণ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, বাড়ির লোক জোর করে বিয়ে দিতে চাইলে মেয়েরা যেন শিক্ষিকাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

ক’দিন আগেই নাবালিকা বিয়ে বন্ধের জন্য স্কুলে সচেতনতা শিবিরে গালভরা ভাষণ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, বাড়ির লোক জোর করে বিয়ে দিতে চাইলে মেয়েরা যেন শিক্ষিকাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

কিন্তু সে সব যাবতীয় ‘বাণী’ যে তাঁর নিজের পরিবারের জন্য নয়, বুঝিয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষিকা নিজেই। ওই স্কুলেরই সতেরো বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে চব্বিশ বছরের ছেলের বিয়ের ঠিক করে বসেছিলেন তিনি। শেষ মুহূর্তে খবর পেয়ে আটকেছে পুলিশ-প্রশাসন।

ঘটনাটি উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে আঠারো বছর বয়সের আগে নাবালিকা বিয়ে বন্ধের জন্য একের পর এক শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। দরিদ্র, অশিক্ষিত পরিবারগুলিকে এ ব্যাপারে সচেতন করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। কিন্তু কোনও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিজেই যদি এমন সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে আর বলার কী থাকতে পারে! ঘটনাচক্রে, পাত্রের বাবাও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। যে মেয়েটির সঙ্গে নিজেদের ছেলের বিয়ের ঠিক করেছিলেন তাঁরা, সেই মেয়েটির বাবা আবার পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। এমন দুই পরিবারের এ হেন সিদ্ধান্তে একই সঙ্গে স্তম্ভিত এবং হতাশ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘নাবালিকার বিয়ে বন্ধের ব্যাপারটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখি। দু’টো শিক্ষিত পরিবার এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’

চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির অনুমতি নিয়ে মেয়েটিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বুধবার তাকে কমিটির সামনে হাজির করানো হবে বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল শুক্রবার। প্যান্ডেলের কাজ হয়ে গিয়েছিল। রান্নাবান্নার তোড়জোড় চলছিল। আত্মীয়-স্বজনে ভরা মেয়ের বাড়ি। স্থানীয় সূত্রে সেই খবর পৌঁছে যায় বনগাঁ মহকুমার চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর স্বপ্না মণ্ডলের কাছে। স্বপ্নাদেবী যোগাযোগ করেন বাগদা থানার ওসি ও বাগদার বিডিও-র সঙ্গে। বিকেলের দিকে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা হাজির হন মেয়ের বাড়িতে।

পুলিশ দেখে ঘাবড়ে যান সকলেই। আঠারো বছর হতে মেয়েটির আরও মাস ছ’য়েক বাকি। কেন তাঁরা বিয়ের তোড়জোড় করছেন, প্রশ্ন করা হয় মেয়ের বাড়ির লোকজনকে। পুলিশ জানায়, উত্তরে সকলেই আমতা আমতা করেছেন। কারণ, আইন-কানুন তাঁদের অজানা নয়। আঠারো বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, বিলক্ষণ জানেন সকলেই। মেয়ের বাবা পুলিশকে বলেছেন, ভাল পাত্র হাতছাড়া করতে চাননি বলেই এমন সিদ্ধান্ত। মেয়ের আত্মীয়-স্বজন অবশ্য পরে থানায় মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছেন, সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না তাঁরা।

আর কী বলছেন প্রধান শিক্ষিকা?

তিনি পুলিশকে বারবার জানিয়েছেন, খুবই লজ্জিত।

মেয়েটিকে স্কুলে দেখে পছন্দ হওয়ায় বৌমা করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবেন ভেবেছিলেন। মেয়েরও তাতে আপত্তি ছিল না।

কিন্তু আর কয়েকটা মাস কি অপেক্ষা করা যেত না? পুলিশ কর্তাদের কাছে প্রধান শিক্ষিকা দাবি করেছেন, মেয়েটির বয়স যে আঠারো পেরোয়নি, তা জানা ছিল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child marriage Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE