Advertisement
E-Paper

শিক্ষিকাদের নিয়োগ ও বদলি নিজেরই জেলায়

একশো-দেড়শো মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে, কাকভোরে উঠে অটো-বাস-ট্রেন সফর করে, ক্ষেত্রবিশেষে নৌকা পেরিয়ে আর যা-ই হোক, ভাল ভাবে পড়ানো যে সম্ভব নয়, এত দিনে সেটা উপলব্ধি করেছে রাজ্য সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:১০
শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী। সোমবার নজরুল মঞ্চে বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী। সোমবার নজরুল মঞ্চে বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

একশো-দেড়শো মাইল রাস্তা ঠেঙিয়ে, কাকভোরে উঠে অটো-বাস-ট্রেন সফর করে, ক্ষেত্রবিশেষে নৌকা পেরিয়ে আর যা-ই হোক, ভাল ভাবে পড়ানো যে সম্ভব নয়, এত দিনে সেটা উপলব্ধি করেছে রাজ্য সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাই জানিয়ে দিয়েছেন, আর দূরে নয়। স্কুল-কলেজে শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বার প্রার্থীর নিজের জেলার কথাই ভাবা হবে। শুধু নিয়োগ নয়, বদলিও হবে নিজের জেলার মধ্যে। সোমবার, শিক্ষক দিবসে খোদ শিক্ষামন্ত্রীর এই আশ্বাসকেই পুরস্কার হিসেবে দেখছেন অনেক শিক্ষিকা।

স্কুল-কলেজে ভাল পঠনপাঠনের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজের জেলার মধ্যেই রাখা দরকার বলে এ দিন নজরুল মঞ্চে শিক্ষক দিবসের এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানান, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, বর্ধমান জেলার বাসিন্দা কোনও শিক্ষিকাকে পড়াতে যেতে হচ্ছে সুন্দরবনের কোনও স্কুলে বা কলেজে। প্রায় সারাটা দিনই যদি হাঁটা আর যানবাহনের ধকলে কেটে যায়, স্কুলে পৌঁছে পড়ানো মুশকিল। ‘‘আমরা দেখছি, ১০০-১৫০ মাইল দূরে বাড়ি হলে দিনের বেশির ভাগ অংশটাই যাতায়াতে বেরিয়ে যায়। এর পরে কী করে শিক্ষিকারা আরও উত্সাহী হয়ে পড়াতে পারবেন,’’ প্রশ্ন তুলেছেন পার্থবাবু। জবাবও দিয়েছেন নিজেই। বলেছেন, এটা অসম্ভব বুঝেই সরকার চায়, শিক্ষিকারা যে-জেলা থেকে (পরীক্ষা দিয়ে) মনোনীত হচ্ছেন, সেখানকারই স্কুল বা কলেজে তাঁদের নিয়োগ করা হবে। এই নিয়ম বলবত্ হতে চলেছে বদলির ক্ষেত্রেও।

শুধু কি শিক্ষিকাদেরই যাতায়াতের ঝক্কি পোহাতে হয়? শিক্ষকদের এই সুবিধে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে কি?

শিক্ষামন্ত্রী পরে জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকা নির্বিশেষেই এই সুবিধে পাবেন। তবে ধীরে ধীরে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্কুল-কলেজে পৌঁছতে বেশি সমস্যা হয় শিক্ষিকাদেরই। তাই নিয়োগ আর বদলির ব্যাপারে নিজেদের জেলার কথা প্রথমে ভাবা হয়েছে শিক্ষিকাদের জন্যই। সুষ্ঠু শিক্ষার জন্য শিক্ষকদেরও এই ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। ঠিক সময়ে হাজির হয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে পড়াতে পারেন, সেটাই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। সেই জন্যই বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব যথাসম্ভব কমানোর চেষ্টা চলছে।

‘‘শুধু এক জেলায় স্কুল-কলেজ হলেই সমস্যা মিটবে না। বাড়ি থেকে একটা নির্দিষ্ট কিলোমিটারের মধ্যে নিয়োগ বা বদলি হলেই ভাল। নইলে অধিকাংশ সময় যাতায়াতে নষ্ট হয়ে যায়,’’ বলছেন বারাসতের ছোট জাগুলিয়া হাইস্কুলের শিক্ষিকা কস্তুরী চক্রবর্তী। কাকদ্বীপের বাসিন্দা এক শিক্ষিকা জানাচ্ছেন, তাঁকে কলকাতার একটি স্কুলে পড়াতে আসতে হয়। বাড়ির কাছাকাছি বদলি চেয়ে বহু বার শিক্ষা দফতরে আবেদন করেও সুরাহা হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই আশাহত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে শিক্ষামন্ত্রীর এ দিনের আশ্বাসে আবার বাড়ির কাছের স্কুলে পড়ানোর স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখছেন ওই শিক্ষিকা।

যদিও শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে কিছু শিক্ষক সংগঠন। শিক্ষক নিয়োগ বিলম্বিত করাই সরকারের অভিসন্ধি বলে অভিযোগ অনেকের। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল জানান, শিক্ষার অধিকার আইন বা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশনের নিয়মে কোথাও কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা নেই। ‘‘সরকারের এই চেষ্টা আসলে শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতিকেই দীর্ঘায়িত করার ফন্দি,’’ বলেন তিনি।

বিরুদ্ধ স্বরের মধ্যে শিক্ষিকারা অবশ্য মন্ত্রীর ঘোষণায় অনেকটাই আশ্বস্ত। শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এ দিন সারা রাজ্যের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৭ জন শিক্ষক-অধ্যাপককে শিক্ষারত্ন সম্মান দেয় শিক্ষা দফতর। প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক মিলিয়ে মোট ৪২টি স্কুলকে দেওয়া হয় সেরা বিদ্যালয়ের সম্মান।

Teachers day Partha Chattopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy