কাঠাপিছু বছরে ছ’শো টাকায় ৬০ একর জমি লিজ দিতে রাজি রাজ্য সরকার। শিল্পোদ্যোগীরা দিতে চাইছেন কাঠাপিছু ৮ টাকা। রাজ্য রাজি না হওয়ায় ভেস্তে যেতে বসেছে হাওড়ার ডোমজুড়ে রবার পার্ক তৈরির পরিকল্পনা। কিন্তু প্রশ্ন হল, বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকে কেন এত ভর্তুকি দেবে সরকার? তার পরেও যে জমি নিয়ে ফেলে রাখা হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
রাজ্যে শিল্প হচ্ছে না কেন, সে প্রশ্নে সরকার আর শিল্পোদ্যোগীরা ভিন্নমত। শিল্পোদ্যোগীদের অভিযোগ, সরকার জমি পেতে সহায়তা করে না। আর সরকারের বক্তব্য, শিল্প করার নামে সহজ শর্তে জমি নিয়ে ফেলে রাখে বহু সংস্থা। এই তরজার আরও একটি উদাহরণ ডোমজুড়ের রবার পার্ক। পার্কটি গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ‘অল ইন্ডিয়া রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’। এ জন্য তারা স্থানীয়দের থেকে সরাসরি জমি কিনে তার কিছুটা অংশে রাস্তা, আলো ইত্যাদি বসানোর কাজ করে। কিন্তু জমিসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ৬০ একর জমি বাম আমলে সরকার ফের খাস করে দেয়। পরে সেই জমি সরকারি নিয়ম মেনে লিজ নেওয়ার জন্য অ্যাসোসিয়েশনকে প্রস্তাব দেয় রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর।
অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের যুক্তি—ওই জমি কিনে পরিকাঠামো তৈরি করতে ইতিমধ্যেই অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছেন তাঁরা। অতএব সরকার নির্ধারিত লিজের হার— বছরে একরপ্রতি ৪২ হাজার টাকা বা কাঠাপ্রতি ৬০০ টাকা দাবি করা অনুচিত। তাঁরা কাঠাপিছু বড়জোর ৮ টাকা দিতে পারেন!
অন্য দিকে জেলা প্রশাসন বলছে— যে হারে অন্য সব সংস্থা সরকারি জমি লিজ নিচ্ছে, রবার পার্কের কাছেও তা-ই চাওয়া হয়েছে। হাওড়াতেই রানিহাটির ফাউন্ড্রি পার্ক তাদের কেনা জমি খাস হয়ে যাওয়ার পর, সরকারের কাছ থেকে সেই জমি ফের লিজ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। সরকার-নির্দিষ্ট দামেই জমি লিজ নিচ্ছেন তাঁরা। তা হলে রবার পার্কই বা তা পারবে না কেন?
সরকারের পক্ষে আরও যুক্তি, সুযোগ-সুবিধে ইতিমধ্যে কম পায়নি রবার পার্ক। জমি কেনার ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটিতে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান, রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের তরফ থেকে জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়া, ঋণ দিয়ে সহায়তা— সবই করা হয়েছে। কোনও আগাম টাকা না নিয়েই গত বছর জুলাইয়ে ৬০ একর জমি সরকার রবার পার্ক কর্তৃপক্ষকে ব্যবহারের জন্য দিয়ে রেখেছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। কিন্তু জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, বার বার চিঠি দেওয়ার পরেও এখনও পর্যন্ত লিজ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না অ্যাসোসিয়েশন।
জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, ‘‘আমরা শিল্পের স্বার্থে জমি লিজ নেওয়ার জন্য অ্যাসোসিয়েশনকে আগাম অনুমোদন দিই। তার পরে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমি লিজ নিতে হয়। রবার পার্ক-এর ক্ষেত্রে সেই সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে।’’
এর পর তাঁরা লিজের অনুমোদন বাতিল করতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক।
রবার পার্কটি গড়ার উদ্যোগ শুরু হয় ২০০৫ সালে। ডোমজুড় এবং সাঁকরাইল এই দু’টি ব্লকে মোট ৯০ একর জমি কেনা হয়। তার মধ্যে শিল্পোন্নয়ন নিগম ১৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে দেয়। বাকি জমি সরাসরি কেনে অ্যাসোসিয়েশন। তার মধ্যে ৬০ একর জমি পরে খাস করে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই পার্কের পরিকাঠামো তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য দফতর ১৫ কোটি টাকা অনুদানও দিয়েছে। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম ঋণ দিয়েছে ৯০ লক্ষ টাকা। কিন্তু অ্যাসোসিয়েশন তাতেও সন্তুষ্ট নয়।
পার্কটি তৈরি হলে এখানে ছোট ছোট প্লটে জমি কিনে রবারভিত্তিক কারখানা তৈরি করতেন শিল্পোদ্যোগীরা। বিনিয়োগ হওয়ার কথা ১০ হাজার কোটি টাকার। প্রায় ৩৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা।
কিন্তু সরকার জমির লিজের হার কমাতে রাজি না হলে কি রবার পার্ক হবে না? অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্র তাঁরা সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy