Advertisement
E-Paper

কংগ্রেস ঝেড়ে কাশুক, দাবি বাম শিবিরে

বামেদের দিক থেকে খোলাখুলি আহ্বান থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসের তরফে কেন সে ভাবে সাড়া নেই, প্রশ্ন তুলছেন শরিক নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস বিবৃতি দিলেও এআইসিসি সচেতন ভাবেই ধোঁয়াশা বজায় রাখছে কি না, দেখা দিচ্ছে সেই সংশয়ও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৬

একের এর এক ধাপ পেরোনোর পরে আসন-রফার আলোচনা এ বার ঝঞ্ঝার মুখে!

বামেদের দিক থেকে খোলাখুলি আহ্বান থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসের তরফে কেন সে ভাবে সাড়া নেই, প্রশ্ন তুলছেন শরিক নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস বিবৃতি দিলেও এআইসিসি সচেতন ভাবেই ধোঁয়াশা বজায় রাখছে কি না, দেখা দিচ্ছে সেই সংশয়ও। বাম শিবিরের মধ্যে এমন প্রশ্নের মুখে কিঞ্চিৎ বিভ্রান্ত আলিমুদ্দিনও। কংগ্রেসের দিক থেকে স্পষ্ট বার্তার অপেক্ষায় থাকতে থাকতেই আলিমুদ্দিন আগামী ৭ মার্চ রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকে দিয়েছে। সিপিএমের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, কিছু আসনের প্রার্থী তালিকা সে দিনই প্রকাশ করে দেওয়া হতে পারে। তার আগেই আবহাওয়া পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য স্নায়ুর চাপ বজায় রাখা হবে কংগ্রেসের উপরে।

ঘরোয়া ভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম নেতৃত্বের দফায় দফায় কথা হয়েছে আসন-রফা নিয়ে। কংগ্রেসের চাহিদা নিয়ে বামেদের এখনও আপত্তি আছে। তবে তার চেয়েও বড় কথা, কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে হলে বাম শরিকদের পাশে নিতে হবে। সেই উদ্দেশ্যেই ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, মদন ঘোষেরা। আলিমুদ্দিনে ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্য, অশোক ঘোষদের সঙ্গে মঙ্গলবারের আলোচনায় সূর্যবাবু এ দিন গোটা বিষয়ের গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু ক্ষিতিবাবুরা প্রশ্ন তোলেন, রাজ্যে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একজোট করার আহ্বান জানালেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিবৃতিতে তৃণমূলকে হারানোর কথাটা কেন ‘রহস্যজনক ভাবে’ নেই? অথচ সিপিএম তথা বামফ্রন্ট স্পষ্ট করেই বলেছে, তৃণমূলকে হঠাতে এবং বিজেপি-কে রুখতেই বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন। আরএসপি নেতাদের আরও প্রশ্ন, এখন আসন-রফা করলেও ভোটের পরে সামান্য আসনের জন্য তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সনিয়া গাঁধীর হস্তক্ষেপে কংগ্রেস যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরকার গড়তে সাহায্য করবে না, তার নিশ্চয়তা কি?

সিপিএমকে ক্ষিতিবাবুরা অবশ্য জানিয়েছেন, বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে কিছু আসন ত্যাগ করতে তাঁরা মানসিক ভাবে প্রস্তুত। কিন্তু তার আগে কংগ্রেসের দিক থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার। বস্তুত, একই মনোভাব সিপিএমের একাংশেরও। তারাও মনে করছে, এআইসিসি-র সবুজ সঙ্কেত পেয়ে অধীর পদক্ষেপ করছেন, ঠিক কথা। কিন্তু কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের প্রকাশ্যে স্পষ্ট বার্তা ছাড়া বিভ্রান্তি পুরোপুরি দূর হওয়া সম্ভব নয়। আর আলোচনার প্রক্রিয়াও যত দিন ঘরোয়া মোড়কে থাকছে, আনুষ্ঠানিক না হচ্ছে, তত দিন নানা প্রশ্ন উঠবেই!

আলিমুদ্দিনে আলোচনার পরে ক্ষিতিবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বৃহত্তর ঐক্য আমরা অবশ্যই চাই। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে ধোঁয়াশা স্পষ্ট করতে হবে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন করতে হবে।’’ কংগ্রেসের সঙ্গে বার্তা বিনিময় নিয়ে বামফ্রন্টে কেন বিশদে আলোচনা হয়নি, সেই প্রশ্নও তোলেন আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক। পাছে আসন-রফার প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়ে, তাই শরিকি ঝাপ্টা সামলাতে এগিয়ে এসেছে সিপিএমই। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব ক্ষিতিবাবুর বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘বিমানদা (ফ্রন্ট চেয়ারম্যান) ও’রকম মানুষ নন! বারেবারে বামফ্রন্টে আলোচনা করেছেন। কথা বলেছেন। এ সব কথার মানে হয় না!’’ কেন আসন-রফা, তার ব্যাখ্যাও এ দিন কামারহাটিতে দলের কর্মিসভার অবসরে ফের দিয়েছেন গৌতমবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য থেকে তৃণমূলকে এবং দেশ থেকে বিজেপি-কে হঠাতে হবে। তার জন্য যা যা করার, করতে হবে। সেই জন্যই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে হয়েছে। এই জোট মানসিক ভাবে সবাই মেনে নিতে পারছি, এমন নয়! তবু রাজ্যের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে মেনে নিতে হবে।’’

বোঝাপড়ার আবহ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কাতেই বাম শরিকদের বক্তব্যের প্রকাশ্যে প্রত্যুত্তর দেয়নি কংগ্রেস। তবে প্রদেশ কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতার মন্তব্য, ‘‘আমাদের দল তো অত দলিল-পড়চা দেখে চলে না! আদর্শগত বিরোধ থাকা সত্ত্বেও আরএসপি-র বিধায়কেরা তৃণমূলে গিয়ে বিধায়ক, সাংসদ হননি? তা হলে শুধু কংগ্রেসের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলে লাভ কী?’’ কংগ্রেসের একটি সূত্রের খবর, এ দিনই দিল্লিতে অহমেদ পটেল দলের সহকর্মীদের ইঙ্গিত দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে নিচু তলায় বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়া যে জায়গায় চলে গিয়েছে, সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়!

এরই মধ্যে এ দিন আলিমুদ্দিনে আলোচনায় প্রতিম চট্টোপাধ্যায়ের মার্ক্সবাদী ফরওয়ার্ড ব্লককে তাদের কোটার তারকেশ্বর ও জামালপুর আসন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিমানবাবুরা। বিহারি ভোটের কথা মাথায় রেখে আসন ছাড়া হচ্ছে জেডিইউ এবং আরজেডি-কেও। নীতীশ কুমারের জন্মদিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যখন টুইটে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, জেডিইউ রাজ্য সভাপতি অমিতাভ দত্ত তখন আলিমুদ্দিনে গিয়ে ‘গণতান্ত্রিক জোট’কে সমর্থন জানিয়ে এসেছেন!

congress left alliance politics state
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy