Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Left Front

বিজেপি রুখতে হবে, অমর্ত্য-মতে সায় বামের

সিপিএমের নীলোৎপল বসু, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বা কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য কেউই অবশ্য অমর্ত্যবাবুর কথার কোনও ‘গূঢ় অর্থ’ খোঁজার পক্ষপাতী নন।

অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ফাইল চিত্র।

অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৫২
Share: Save:

বাংলায় এখন বিজেপিকে ঠেকানোই বাম, তৃণমূল ও সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সামনে প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তাঁর ওই বক্তব্যের সঙ্গে নীতিগত ভাবে একমত বাম দলগুলিও। তবে রাজনৈতিক কৌশলের প্রশ্নে তাদের মধ্যে ভিন্নমত আছে। অমর্ত্যবাবুর মতকে ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও বলছেন, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঠেকানো এবং গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করার লক্ষ্যেই তাঁরা পথ চলছেন।

সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে অমর্ত্যবাবু বলেছেন, বিজেপিকে রোখাই এখন বাংলায় বাম, তৃণমূল ও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির প্রধান লক্ষ্য। তাদের কর্মসূচি আলাদা রকম হতেই পারে। তবে সাম্প্রদায়িক শক্তিতে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে বাম, তৃণমূল ও সব ধর্মনিরপেক্ষ দল দায়বদ্ধ থাকবে বলেই তিনি মনে করেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বিজেপিই যে এখন রাজ্যে প্রধান শত্রু, বাম ও তার সহযোগী দলগুলিকে সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন অমর্ত্যবাবু। এমনকি, কারও কারও প্রশ্ন, বিজেপির মোকাবিলায় অ-বিজেপি সব শক্তির সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার ইঙ্গিতও কি ধরা পড়েছে অর্থনীতিবিদের কথায়?

সিপিএমের নীলোৎপল বসু, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বা কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য কেউই অবশ্য অমর্ত্যবাবুর কথার কোনও ‘গূঢ় অর্থ’ খোঁজার পক্ষপাতী নন। অমর্ত্যবাবুর বক্তব্যের সঙ্গে নীতিগত ভাবে একমত হয়ে তাঁরা সকলেই বিজেপিকে ‘বড় বিপদ’ বলে চিহ্নিত করছেন। তবে রাজনীতিতে ব্যবহারিক কৌশলের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলির নিজস্ব মতওে রয়েছে। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নীলোৎপলবাবু যেমন বলছেন, ‘‘অমর্ত্যবাবুর উদ্বেগ ও চিন্তার শরিক আমরাও। তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের মতের উপরে আমাদের মন্তব্য করা সাজে না। তবে বাংলার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব বিশ্লেষণ রয়েছে, সেটা আমরা বারেবারেই বলেছি।’’ নীলোৎপলবাবুদের মতে, বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ফায়দা নিচ্ছে বিজেপি। এমতাবস্থায় শুধুই বিজেপিকে আক্রমণ করা হলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী পরিসর বাম বা কংগ্রেসের হাতছাড়া হবে এবং তাতে আখেরে বিজেপিরই সুবিধা হবে। তাঁদের মতে, বামেদের বিজেপি-বিরোধিতায় কোনও খাদ নেই। কিন্তু বিজেপি ও তৃণমূলের পারস্পরিক রসায়ন নিয়ে নানা বিতর্ক হতেই পারে।

আরও পড়ুন: অমর্ত্য সম্পর্কে কুমন্তব্য, নিন্দায় বিদ্ধ দিলীপ

আরও পড়ুন: মতুয়া-বিবাদ মিটল, ‘অমিত আশ্বাসে’ শান্ত ঠাকুরনগরের ঠাকুর সাংসদ শান্তনু

বিহারের নির্বাচনের পরে লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্করবাবুও মন্তব্য করেছিলেন, বাংলায় এখন বিজেপিকেই মূল শত্রু করে আক্রমণের বর্শামুখ নির্দিষ্ট করা উচিত বামেদের। বিজেপি ও তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে না রাখার কথা তিনি বলেছিলেন, যার সঙ্গে একমত হতে পারেননি বিমান বসুরা। অমর্ত্যবাবুর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দীপঙ্করবাবুর মত, ‘‘উনি তো রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে কিছু বলেননি। বাংলার বাম ও গণতান্ত্রিক বিবেকের কাছে তিনি আবেদন করতে চেয়েছেন সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঠেকানোর জন্য। আমাদের সকলেরই সেই আবেদন মাথায় রাখা উচিত।’’

একই সুরে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘অমর্ত্যবাবু বিদগ্ধ মানুষ। তাঁর কথায় একটা শূন্যস্থান আছে। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য রক্ষার জন্য যে কথা তিনি বলেছেন, আমাদের কাছেও সেটাই মূল লক্ষ্য। কী ভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়, তার জন্যই আমাদের তরফে নিরন্তর ভাবনা-চিন্তা ও চেষ্টা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amartya Sen Left Front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE