দেদার টাকা নিয়ে চিকিৎসা পাঠ্যক্রমে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করার অভিযোগ হামেশাই ওঠে অনেক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে। অথচ রাজ্যের এক সরকারি প্রতিষ্ঠানে তিন লক্ষ টাকা ফি নিয়ে এমন একটি বিভাগে এমফিলের পঠনপাঠন চলছে, যার কোনও অনুমোদনই দেয়নি ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)। ওই বিভাগে চিকিৎসা চালানোরও অনুমতি দেয়নি এমসিআই। স্বাস্থ্য ভবনের প্রবীণ অফিসারেরা জানান, রাজ্যের কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানে এত বিপুল খরচে এমন অনুমোদনহীন এমফিল কোর্স পড়ানোর নজির নেই।
এমসিআই সূত্রের খবর, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন বা এসটিএমে এই ‘রিজেনারেটিভ অ্যান্ড ট্রানস্লেশনাল সায়েন্স’ বিভাগকে তারা ছাড়পত্র দেয়নি। কিন্তু অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। টাকা নিয়ে এমফিল পড়ানো তো চলছেই। সেই সঙ্গে পড়ুয়াদের কেউ কেউ মোটা টাকা বৃত্তিও পাচ্ছেন। এমসিআইয়ের ওই সূত্রেই জানানো হয়েছে, তাদের অনুমোদনহীন পাঠ্যক্রম পড়ানোর অভিযোগে রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এমসিআইয়ের অভিযোগ, ওই বেআইনি এমফিল পাঠ্যক্রমকে আকর্ষক করে তুলতে এক দিকে কিছু পড়ুয়ার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা তো হয়েছেই। সেই সঙ্গে তৃণমূলের বেশ কিছু চিকিৎসক-নেতা ওই পাঠ্যক্রমে ভর্তি হয়ে তার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন সমানে। ২০১৬-’১৭ শিক্ষাবর্ষে এমফিলে ৩১ জন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের সকলকে এক বছর বৃত্তি দিতেই সরকারের খরচ হবে প্রায় এক কোটি ৩০ লক্ষ টাকা।
এমসিআই অনুমতি না-দেওয়া সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতালে ওই পাঠ্যক্রম চলছে কী ভাবে? তাতে ফি হিসেবে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া এবং বৃত্তি দেওয়াই বা হচ্ছে কী করে?
এমসিআইয়ের গ্রিভান্স কমিটির চেয়ারম্যান অজয় কুমারের বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের কাজকর্ম নিয়ে আমরা তিতিবিরক্ত। ওরা কোনও নিয়মই মানে না।’’
যাঁরা ওই এমফিল পড়ছেন, তাঁদের ডিগ্রি স্বীকৃতি পাবে কি?
‘‘ওই ডিগ্রি ভারতের কোনও জায়গাতেই স্বীকৃতি পাবে না,’’ বলে দিয়েছেন অজয় কুমার।
গোটা বিষয়টি নিয়ে চমকপ্রদ মন্তব্য করেছেন ট্রপিক্যালের রিজেনারেটিভ অ্যান্ড ট্রানস্লেশনাল সায়েন্সের বিভাগীয় প্রধান নিরঞ্জন ভট্টাচার্য। ‘‘এমসিআই এই বিষয়ের কী বোঝে? এ ব্যাপারে আমিই হলাম দেশের মধ্যে সব চেয়ে শিক্ষিত। আমিই একটা প্রতিষ্ঠান! কারও যদি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা থাকে, সেটা আছে শুধু আমারই,’’ গলা উঁচিয়ে বলছেন নিরঞ্জনবাবু।
কিন্তু এমসিআইয়ের অনুমোদন না-থাকলে ছাত্রছাত্রীদের ওই ডিগ্রি আদৌ কোনও মূল্য পাবে কি?
‘‘এমসিআই অনুমোদন দিল না তো বয়েই গেল! পড়ুয়ারা এই বিষয়ে এমফিল করে পশ্চিমবঙ্গের ভিতরে কাজ করবেন। কেউ তাঁদের বাধা দেবে না,’’ আশ্বাস নিরঞ্জনবাবুর।
নিরঞ্জনবাবুকে সমর্থন করছেন স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস। তাঁর যুক্তি, ‘‘অতীতেও এমসিআইয়ের অনুমতি ছাড়া অনেক কোর্স চলেছে, এখনও চলবে। তাতে কোনও অসুবিধে নেই। এমফিল বা ফেলোশিপ গবেষণার বিষয়। তাতে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ই অনুমোদন দিতে পারে।’’
কী বলছেন সরকার বা মেডিক্যাল শিক্ষার সরকারি নিয়ন্ত্রকেরা?
নিরঞ্জনবাবুকে চোখধাঁধানো শংসাপত্র দিচ্ছেন স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘নিরঞ্জনবাবু যে-মাপের পণ্ডিত, তিনি কোনও ভুল জিনিস ছাত্রদের শেখাবেন না, শেখাতে পারেন না। এই বিশ্বাস সরকারের আছে। বিদেশে জন্মালে তিনি এত দিনে নোবেল পেয়ে যেতেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy