Advertisement
E-Paper

খুনের খতিয়ানই বলছে, সুশাসন স্বপ্ন

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলেই তিনি হয় বলেন, ‘সাজানো ঘটনা।’ কিংবা ‘ছোট ঘটনা’ তকমা দিয়ে নস্যাৎ করে দেন। কখনও প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে অন্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা টেনে দাবি করে থাকেন, পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট সন্তোষজনক।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৪

রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলেই তিনি হয় বলেন, ‘সাজানো ঘটনা।’ কিংবা ‘ছোট ঘটনা’ তকমা দিয়ে নস্যাৎ করে দেন। কখনও প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে অন্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা টেনে দাবি করে থাকেন, পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট সন্তোষজনক।

আইন-শৃঙ্খলার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ অন্য রাজ্যকে টেক্কা দিচ্ছে কি না, সে বিচার আপাতত মুলতুবি থাক। বর্ধমানে আজ, বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শততম প্রশাসনিক বৈঠক। তার আগের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা থেকে আসা খুন-খারাপি, রাজনৈতিক হিংসার সরকারি পরিসংখ্যানে চোখ বোলাতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর দাবির সঙ্গে বাস্তবের ফারাক দুস্তর! স্রেফ গত ছ’মাসেই মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়ের রাজ্যে খুন হয়ে গিয়েছে ৫৬৯টি। যার মধ্যে ৩৮টি ‘রাজনৈতিক’ খুন, আর ১২টি হয়েছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে।

অর্থাৎ, গড়ে মাসে ৯৫টি (৯৪.৮৩) হত্যাকাণ্ড!

প্রশাসনকে চাঙ্গা করতে গত চার বছর মমতা নিয়মিত জেলা সফর করছেন। বৈঠক করছেন ডিএম থেকে বিডিও, প্রায় সব স্তরের অফিসারদের নিয়ে। ‘‘কিন্তু চার বছরের শাসনকালের শেষ ছ’মাসের এই তথ্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে, পরিবর্তনের সরকারের হাতে পশ্চিমবঙ্গের বাতাস কতটা তপ্ত।’’— পর্যবেক্ষণ রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার। পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘কোনও রাজ্যে মাত্র ছ’মাসের এই পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগের।’’

এবং এর ফলে নবান্নের ‘সুশাসনের’ দাবি যে যারপরনাই ধাক্কা খাচ্ছে, পুলিশ-কর্তাদের কথায় তা স্পষ্ট। কারও কারও দাবি: সরকারি তথ্যের বাইরেও অনেক কিছু রয়ে গিয়েছে। এক অফিসারের ব্যাখ্যা: অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের উপরে চাপ এসেছে। তাই শাসকদলের ঘরোয়া দ্বন্দ্বের জেরে ঘটে যাওয়া হিংসার যথাযথ বিবরণ নথিতে দেওয়া হয়নি। সেগুলোকে জমি বা তোলা আদায় সংক্রান্ত বিবাদ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ওঁর কথায়, ‘‘সংঘর্ষ হয়েছে, অথচ নেপথ্যে রাজনীতির ছোঁয়া নেই, এমন দিন চলে গিয়েছে।’’

পচন ঠেকাবে কে

সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার, শ্লীলতাহানি-ধর্ষণের মতো নারী নির্যাতনের ঘটনাতেও জড়িয়ে যাচ্ছে স্থানীয় রাজনীতির সমীকরণ। সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক আইপিএস অফিসার বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ না-থাকায় জেলায় জেলায় শাসকদলের বিভিন্ন গোষ্ঠী মাথা চাড়া দিয়েছে। স্বার্থসিদ্ধির তাগিদে সংঘর্ষ বাঁধছে। নিরীহ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, মহিলারা অত্যাচারিত হচ্ছেন।’’ ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের আঁচ পড়ছে শিক্ষাঙ্গণে। এমনকী উর্দিধারী পুলিশও রেহাই পাচ্ছে না। আর এ সব দেখে-শুনেও শাসকের কোপে পড়ার ভয়ে পুলিশ বহু ক্ষেত্রে গুটিয়ে থাকছে বলে আক্ষেপ শোনা যাচ্ছে প্রশাসনের অন্দরেই। মানুষও দেখছেন, বোমা-বন্দুকের লড়াই থামানো দূরে থাক, মাথা বাঁচাতে পুলিশই আড়াল খুঁজছে। কিংবা থানায় চড়াও হওয়া শাসকদলের ছেলেপুলের রোষ এড়াতে ঢুকে পড়ছে টেবিলের তলায়! হালফিলে আলিপুর বা হরিদেবপুরে যেমনটি দেখা গিয়েছে।

এই অবস্থাতেও তিনি এত কাল মাছি মারার ভঙ্গিতে যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়েছেন। কখনও বলেছেন, ‘‘সব বিরোধীদের চক্রান্ত।’’ তবে বিধানসভা ভোটের দশ মাস আগে সেই মুখ্যমন্ত্রী যেন কিছুটা সতর্ক। দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, মমতা এখন টের পেয়েছেন, ওঁর দাবির অসারতা প্রকট হয়ে যাচ্ছে। তাই কিছু ব্যবস্থা নিয়ে অন্য রকম বার্তা দিতে চাইছেন। এক মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘দলের ভিতরে কোথাও কোথাও এমন পচন ধরেছে যে, পচা অংশটা কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। যাদের পিঠে সওয়ার হয়ে আমরা একটার পর একটা ভোট জিতেছি, তাদের কয়েক জনকে বাধ্য হয়ে জেলে ভরতে হচ্ছে।’’

রাজারহাট নিউটাউনের ভজাই-রুইসরা তাই এখন জেলে। হরিদেবপুরের বন্দুকবাজির পরে সেখানকার সমস্ত দাগিকে গারদে পোরার হুকুম হয়েছে। কিন্তু এই চিকিৎসায় আসল রোগ সারবে কি?

শুধু বিরোধীপক্ষ নয়, মমতার দলেরই একাংশেও এ সংশয় ঘোরাফেরা করছে। ‘‘পচন যেখানে গোটা শরীরে, সেখানে তাগা কোথায় বাঁধবেন মুখ্যমন্ত্রী? কোন কোন অঙ্গকে কেটে বাদ দেবেন?’’— প্রশ্ন তুলছে এই মহল। এঁদের বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে যাঁরা এত দিন অপরাধীদের ব্যবহার করে আসছেন, তাঁদের তো দমানো যাবে না! কাজেই নিত্যনতুন ভজাই-রুইস তৈরি হবে না, সে গ্যারান্টি নেই।’’

বিরোধীরা সরব

এক দিকে দুষ্কৃতীদের লাগামছাড়া করে দেওয়া, অন্য দিকে পুলিশকে ঠুঁটো করে রাখা। বিরোধীদের মতে, এই দুইয়ের জেরে অবস্থা দিন-কে-দিন সঙিন হয়ে উঠছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বিশ্লেষণ, ‘‘এই সরকার দুষ্কৃতীদের হাতে বেশি বেশি হাতিয়ার তুলে দেওয়ার পাকা বন্দোবস্ত করেছে। তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নিরস্ত্র পুলিশ ভয়ে মুখ লুকোচ্ছে!’’ সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের সংযোজন, ‘‘সবাই বুঝে গিয়েছে, শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকলে যা খুশি করা যাবে। কিন্তু ভুক্তভোগী মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে যে কোনও সাধারণ দুর্ঘটনাকে ঘিরেও এক দিন কুরুক্ষেত্র বেঁধে যেতে পারে।’’ কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের পুলিশ এখনও যথেষ্ট যোগ্য। মুখ্যমন্ত্রী নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার নির্দেশ দিলে আইন-শৃঙ্খলা বাগে আনতে তাদের পনেরো মিনিট লাগবে। বিহারে ক্ষমতায় এসে নীতীশকুমার পুলিশকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত করেছিলেন। তার সুফল বিহারের মানুষ পেয়েছেন।’’ আর বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের কটাক্ষ, ‘চল্লিশ রাউন্ড গুলি ও এক যুবকের মৃত্যু হওয়ার পরেও যেখানে পুলিশ কমিশনার বলেন বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানুষের মৃত্যুকে বলেন তুচ্ছ ঘটনা, সেখানে এই বিভীষিকাই স্বাভাবিক। সরকারির সঙ্গে বেসরকারি হিসেব জুড়লে খুনের সংখ্যাটা আরও বাড়বে।’’

শাসকদলের নেতৃত্ব স্বভাবতই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের যুক্তি: পুলিশ মানুষের অভিযোগ নিচ্ছে বলেই ছ’মাসে ৫৬৯টি খুনের কথা জানা গিয়েছে, আগের জমানা হলে ৫০০ কে ৫০ করে দেখানো হতো। তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, পুলিশ নিজের কাজ করছে, হস্তক্ষেপের প্রশ্ন নেই। ‘‘তৃণমূলের পতাকা দুষ্কৃতীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি, হবেও না। এ কথা আমরা ক’বছর ধরে স্পষ্ট বলে আসছি।’’— মন্তব্য পার্থবাবুর। তিনি অবশ্য এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের লোক শাসকদলের পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করলে তৃণমূলকে দায়ী করা যায় না। ওই ধরনের কাজকে দলের অনুমোদিতও বলা যায় না।’’

দলের সম্পদেরা

যাঁদের দৌলতে দলের পচন শুরু, তাঁদের তালিকাটা কিন্তু বেশ দীর্ঘ। অথচ তাঁরাই শাসকদলের ‘সম্পদ’ হিসেবে পরিচিত।!

মুখ্যমন্ত্রীর ‘গুড বুক’-এ থাকা এমনই এক জন অনুব্রত মণ্ডল—তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটের আগে যিনি দলের অন্য গোষ্ঠীর লোকজনের বাড়িতে চড়াও হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে অনুগামীদের প্রকাশ্যে পরামর্শ দিয়েছিলেন পুলিশকে বোমা মারতে! সংশ্লিষ্ট মামলায় সম্প্রতি তিনি জামিন পেয়েছেন স্রেফ পাঁচ মিনিটে! আবার পঞ্চায়েত ভোটের আগে বীরভূমেরই লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম স্বীকার করেছিলেন, লাভপুরে তিন সিপিএম কর্মীকে ‘পায়ের তল’ দিয়ে পিষে মেরেছেন তিনি। পুলিশ মনিরুলের টিকিও ছুঁতে পারেনি।

শাসকদলের দুই সাংসদ দোলা সেন ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ও তা-ই। পুলিশকে হেনস্থার অভিযোগ মাথায় নিয়ে দু’জনেই দিব্যি রয়েছেন! যেমন রয়েছেন তৃণমূল নেতা আবু আয়েশ মণ্ডল। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের টোলকর্মীকে মারধরে অভিযুক্ত হলেও তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিয়ে উঠতে পারেনি। এক মন্ত্রীর আক্ষেপ, ‘‘হাতে ক্ষমতা পেয়ে দলের অনেকে ধরাকে সরা দেখছে।’’

তাই শুধু গত মে মাসেই পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে অন্তত দশটি জায়গায়। কোথাও অবরোধ তুলতে গিয়ে, কোথায় তল্লাশি চালাতে গিয়ে, কোথায় বা চোলাই বিক্রেতাকে ধরতে গিয়ে। শিক্ষা-ক্ষেত্রেও চরম নৈরাজ্য।

ক’দিন আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের (টিএমসিপি) হাতে আক্রান্ত হন শিক্ষকেরা। এর আগে টিএমসিপি’র আস্ফালনে খিদিরপুর কলেজের গেটে তালা পড়েছে, ভর্তি ঘিরে তুলকালাম বেঁধেছে রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে, ঝাড়গ্রাম মানিকপাড়া বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ে ইস্তফা দিতে হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে। জয়পুরিয়া, ইসলামপুর, এবিএন শীলে অধ্যক্ষেরা ঘেরাও হয়েছেন একাধিক বার। জঙ্গিপুরে তো অধ্যক্ষ ইস্তফাই দিয়েছেন। শান্তিপুর কলেজের অধ্যক্ষ পদ ছেড়েছেন। মালদহে অধ্যক্ষের ইস্তফা প্রত্যাহারে খোদ শিক্ষামন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। টুকতে দেওয়ার ‘আব্দার’ না-মানায় চাপড়ায় অধ্যক্ষ নিগৃহীত হয়েছেন। ফেল করাদের পাশ করানোর দাবিতে সম্প্রতি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ঘরে ভাঙচুর চালিয়েছে টিএমসিপি। রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষিকাকে হেনস্থা করা হয়েছে। বালিগঞ্জ বিজ্ঞান কলেজে আক্রান্ত হয়েছেন সাধারণ পড়ুয়ারা।

এবং ছাত্র সংগঠনের এ হেন পেশি আস্ফালনের পিছনে সেনাপতি যাঁরা, টিএমসিপি’র প্রাক্তন ও বর্তমান রাজ্য সভাপতি যথাক্রমে সেই শঙ্কুদেব পণ্ডা ও অশোক রুদ্রও দলের বিলক্ষণ সম্পদ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন! প্রকাশ্যে বাড়িতে লোক ঢুকিয়ে ‘রেপ করিয়ে’ দেওয়ার হুমকি দিয়ে শিরোনামে আসা তৃণমূল সাংসদ তাপস পালও তা-ই। সারদা-কাণ্ডে মাসের পর মাস জেলে কাটিয়েও মন্ত্রিত্ব ধরে রেখেছেন মদন মিত্র। তাঁকেও ‘সম্পদ’ তালিকায় রাখছেন দলের অনেকে। এবং জানাচ্ছেন, বার বার দলীয় নেতৃত্বকে বিড়ম্বনায় ফেলেও ভাঙড়ের আরাবুল ইসলাম একদা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের কাছে সম্পদই ছিলেন।

সিন্ডিকেট-শিল্প

বালি থেকে কয়লা খাদান। গরু পাচার থেকে সীমান্তযাত্রী ট্রাকে তোলা আদায়। ইমারতির মাল সাপ্লাই থেকে জমির দালালি। পাথর খাদানের কর্তৃত্ব দখল থেকে ছাঁট-লোহায় মাফিয়ারাজ। দক্ষিণ ভারতীয় চোরাই চন্দনকাঠ বিদেশে পাচার, যাতে জড়িয়ে যায় শাসকদলের বিধায়কের নাম।

অভিযোগ, এই সব ‘শিল্প-বাণিজ্যের’ই এখন রমরমা রাজ্য জুড়ে। সরকারি রাজস্ব তহবিলে টাকা ঢুকুক না-ঢুকুক, এগুলির দৌলতে শাসকদলের দলীয় তহবিল যেমন ফুলে-ফেঁপে উঠেছে, তেমন কিছু নেতার পকেট ভারী হয়েছে।

আর এ ক্ষেত্রেও শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অতীতের সব নজিরকে ছাপিয়ে গিয়েছে। রাজারহাট-নিউটাউনে ইমারতির ইট-বালি-সিমেন্ট সরবরাহের বরাত আদায় ঘিরে তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের গোষ্ঠীর সঙ্গে সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের গোষ্ঠীর টক্করে রক্তও ঝরেছে কম নয়। বিনিয়োগকারী থেকে আমগেরস্ত— ওই তল্লাটে সিন্ডিকেটের শাসনে সকলেই ত্রস্ত। পুলিশ অবশ্য নির্বিকার। আসানসোল-জামুরিয়া-মেজিয়া-আদ্রায় কয়লা, মহম্মদবাজার-নলহাটিতে পাথর, বারাবনি-রানিগঞ্জে লোহার ছাঁট কিংবা আলিপুরদুয়ারে কাঠের চোরাকারবার ঘিরেও দুষ্কৃতীদের তৎপরতা ও আইনরক্ষকের নির্লিপ্তির ছবিটা বড়ই স্পষ্ট। বর্ধমান জেলার এক প্রবীণ শিল্পোদ্যোগীর শ্লেষ, ‘‘চোরাকারবারের আশীর্বাদে বহু বড়-মেজো-ছোট নেতার আঙুল ফুলে কলাগাছ। তোলা আদায়কে ওঁরা সত্যিই শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন!’

অতঃকিম

পরিস্থিতি দেখে প্রমাদ গুনছেন তৃণমূলেরও অনেক নেতা। যাঁদের বক্তব্য, ক্ষমতার দম্ভে সিপিএমের পতন হয়েছিল। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে শক্তিক্ষয় করেছিল। পরিণতিতে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা টুটেছে। ‘‘দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কি এ সব দেখে শিক্ষা নেননি?’’— প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁদের মনে।

সোজা-সাপ্টা উত্তর হতে পারে, না। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিভিন্ন জেলা থেকে সরকারি সূত্রে পাওয়া খুন-জখম-সংঘর্ষের এ সব পরিসংখ্যান বেবাক ভুল। কাজেই তিনি এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেবেন না।

তবে সামনে বিধানসভার লড়াই। যে কারণে মুখে নস্যাৎ করলেও এই পরিস্থিতি চললে লড়াইটা খানিক কঠিন হতে পারে ধরে নিয়েই বুঝি মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে কিছু সদর্থক বার্তা দিতে চাইছেন। নবান্নের খবর: সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ পদস্থ পুলিশ অফিসারদের বৈঠকে ডেকে মমতা বলেছেন, ‘কোনও ঘটনা ঘটলে রাজনৈতিক রং না-দেখে ব্যবস্থা নিন। সরকার রাজধর্ম পালন করতে চায়।’

যা শুনে পুলিশের এক কর্তার প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুলিশ এতে বুকে একটু বল পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, শাসকের এমন কড়া-ভাব বেশি দিন টেকে না। কিছু দিন পরে ফের যে-কে-সে-ই হয়ে যায়।’’

কাজেই সংশয় কাটছে না। সুশাসনের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে এখনও অনেকটা পথ পেরোতে হবে।

century meeting mamata century meeting day dream west bengal murders list of murder abpnewsletters good administration west bengal administration mamata administration series of murders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy