শীতের রাত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জাগছে একদল উনিশ-কুড়ি। আসন্ন ছাত্র নির্বাচনের প্রচারে লিখছে তারা। আর সেই দৃশ্যই সরাসরি দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে।
রাত দেড়টাতেও সেই ‘ফেসবুক লাইভ’ দেখতে দর্শকের কমতি নেই। যে সংগঠনের পেজ থেকে এই ভিডিও শেয়ার করা হয়, সেই ‘ফোরাম ফর আর্টস স্টুডেন্টস’-এর দাবি, এক ঘণ্টার মধ্যেই ভিডিওটির দর্শকসংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে যায়।
দ্রুত জনসংযোগ। ন্যূনতম খরচ। প্রচারের বিস্তৃতি। মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের প্রচারে গত কয়েক বছর ধরেই অস্ত্র করেছে সোশ্যাল মিডিয়াকে। এখন সেই দলে নাম লেখাচ্ছে ক্যাম্পাসের ভোটও।
বিদায়ী ইউনিয়নে ক্ষমতায় থাকা ‘ফোরাম ফর আর্টস স্টুডেন্ট’ (ফ্যাস) -এর তরফে বড় রাজনৈতিক দলের মতোই ‘বিশেষ টিম’ তৈরি করা হয়েছে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য। সেই টিমের সদস্য, তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের ছাত্রী অনীশা মণ্ডল জানালেন, ‘‘লিফলেট, পোস্টার, ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে বলা, ফেসবুক পোস্ট— কিছুই বাদ রাখিনি আমরা। লক্ষ করে দেখেছি, ফেসবুকের প্রতিক্রিয়াই সব চেয়ে বেশি।’’
এটা হয়তো এই যুগেরই ধর্ম। যে ধর্মের সঙ্গে তাল মেলাতে বিধানসভা ভোটের সময়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে ‘লাইভ’ এসে জনসংযোগ করেন। গত সপ্তাহেও সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির প্রতিবাদে দিল্লিতে তৃণমূলের ধর্নার লাইভ ভিডিও করা হয়েছিল। ভোটের আগে ফেসবুকে লাইভ এসেছিলেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। যাদবপুরে এসএফআইয়ের পেজ থেকেও নিয়মিত ক্যাম্পাসে কর্মসূচির ছবি শেয়ার করা হচ্ছে বলে জানালেন এমফিলের ছাত্রী, তথা এসএফআই-এর যাদবপুর লোকাল কমিটির সদস্য গীতশ্রী সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘সময়ের সঙ্গে প্রচারের মাধ্যমেও পরিবর্তন ঘটতে বাধ্য। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের পক্ষে সেই পরিবর্তন গ্রহণ করাটাই যুক্তিযুক্ত।’’ এতই মত আইসা-র এজিএস পদপ্রার্থী অস্মিতা সরকারেরও।
যাদবপুরের অবশ্য আন্দোলনের সঙ্গে প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটানোটা নতুন নয়। ‘হোক কলরব’-এর সময়েও প্রশাসনিক ভবনে তাঁদের অনশন-অবস্থানের ছবি লাইভ স্ট্রিমিং করিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এতে যাঁরা সশরীর আন্দোলনে থাকতে পারবেন না, তাঁদের কাছেও আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে যাবে।
ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ভোটও সামনেই। সেখানকার ইউনিয়ন ‘ফেটসু’-র বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক স্বর্ণেন্দু বর্মণ জানালেন, ভোটের মুখে চার দশক ধরে যাদবপুরের নানা আন্দোলনের ছবি দিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করে ফেসবুকে আনবেন তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘এখনকার পড়ুয়ারা তখনকার কথা জানুক। তখনকার মানুষরাও জানুক, আমরা তাঁদের ভুলিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy