মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
মমতা বলেন, ‘‘সাধ্যমতো চেষ্টা করব। ভয় পাচ্ছেন কেন। যাঁদের বয়স ৪০ পেরিয়ে গিয়েছে, তাঁদের বয়সের সীমায় ছাড় দেওয়া হবে। কোর্টকেও জানাতে হবে, আমরা বিজ্ঞপ্তি জারির আগে সংবাদমাধ্যমেও জানিয়েছি। আপনাদের আগে জানাব, তার পরে আমরা করব। সকলে যাতে জানতে পারেন, তাই আগে থেকে বলেছি। রিভিউ পিটিশন কড়া ভাবে লড়ব। নিজের কানে শুনে নিজস্ব ভাবে চাকরি রক্ষার চেষ্টা করুন। আমরা ছিলাম, আছি, থাকব। যোগ্যতা রয়েছে যাঁদের, সকলেই আবেদন করতে পারবেন। ত্রিপুরাতেও দেখেছি, ১০ হাজার শিক্ষকের চাকরি যাওয়ার পরে, প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও বর্তমান সরকার কিছু করেনি। উল্টে লাঠি মেরেছে। উত্তরপ্রদেশে ৬৯ হাজার শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশে ব্যাপম মামলায় কী হয়েছে! কত জন মারা গিয়েছে। আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। আমরা চাই, বিচারের সঙ্গে, মর্যাদার সঙ্গে কাজ করুন, যাতে সমাজ উপকৃত হয়।’’
মমতা বলেন, ‘‘পরীক্ষায় বসুন। স্কুলে যাচ্ছেন, যান। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাইনে পাবেন। যথাযথ জায়গায় মর্যাদার সঙ্গে ফিরে আসার জন্য নিজেদেরটা রক্ষা করুন। সুযোগ আসবে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন। কোর্টের নির্দেশ আমি না-মানলে ২৬ হাজার শিক্ষক বিপদে পড়তে পারেন। তাঁদের জন্য দুটো পথ রাখা হয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বললে হবে না, পরীক্ষা দেব না। তা হলে চাকরি থাকবে না। এটা আমাদের নির্দেশ নয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। সরকার কোর্টে গিয়ে বাতিল করেনি। এটা আমাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। কিছু স্বার্থপর মানুষ বাতিল করেছেন। নিজেদের স্বার্থে করেছেন। আজ তাঁরা বন্ধু হয়ে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সকলকে বলব, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, অপশন দুই এবং অপশন এক, দুটোই কাজে লাগান। আপনারা পরীক্ষা দিলেন না, এ দিকে রিভিউ পিটিশন করে বিচার না-পেলে, আপনাদের চাকরি ফিরে পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। কবে আদালত খুলবে জানি না। গরমের ছুটি শেষ হলে রিভিউ পিটিশন নিয়ে আবার তৎপর হব। আমরা সময়েও রেখেছি। আমাদের আইনজীবীরা সাধ্যমতো লড়বেন। বিচার আমার হাতে নেই। বিচারের দায়িত্ব বিচারপতিদের হাতে। মানবিক ভাবে তুলে ধরব, যাতে চাকরি বাতিল না হয়।’’
মমতা জানান, যাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে, চাকরি বাতিল করা হয়েছে, বলা হয়েছে চাকরির পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, তাঁরা অন্য বিভাগে যোগ দিতে পারেন। কোর্ট বলেছে। শিক্ষা বিভাগে লোক প্রয়োজন। ঘর পরিষ্কার, ঘণ্টা বাজানোর লোক নেই, তালাবন্ধ করার লোক নেই। তিনি বলেন, ‘‘যেমন, অতিরিক্ত গ্রুপ সি, ডি নিচ্ছি। অনেকে শিক্ষা বিভাগে কাজ করছেন, অথচ চাকরি বাতিল হয়েছে, তাঁরা শিক্ষা বিভাগে আবেদন করতে পারেন। আরও তিন চারটি বিভাগে আবেদনের সুযোগ দেব। তবে আলাদা ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। এর সঙ্গে ওটার সম্পর্ক নেই। গ্রুপ সি , গ্রুপ ডির টা আলাদা ভাবে করব। তিন চার-দিন পরে হবে। আগে শিক্ষকদের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি হবে।’’ গ্রুপ সি, গ্রুপ ডির জন্য অন্য বিভাগে আবেদনের ব্যবস্থা করা হবে। বিজ্ঞপ্তি জারি হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যাঁরা চাকরি করেছেন, কিন্তু এখন আবেদন করার বয়স পেরিয়ে গিয়েছে, এ রকম অনেকে রয়েছেন। চাকরিহারাদের ক্ষেত্রে বয়সে ছাড় দেওয়া হবে। তাঁরা যাতে সকলেই পরীক্ষায় বসতে পারেন, বয়সের জন্য যাতে না-আটকায়, সেই ব্যবস্থা হবে। চাকরিহারারা বয়স পেরিয়ে গেলেও পরীক্ষায় বসতে পারবেন। যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতার জন্য সুবিধা দেওয়া হবে। এই নিয়ে বিশদ ভাবে এখন প্রস্তুতি হয়নি। গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-র কথা আজ বলছেন না বলে জানান মমতা।
গ্রুপ-সির জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি হচ্ছে ৫৭১টি। গ্রুপ ডির জন্য অতিরিক্ত এক হাজার পদ করা হচ্ছে। মোট শূন্যপদ ৪৪ হাজার ২০৩। নবম-দশমে চাকরিহারাদের নিয়ে ২৩,২১২ শূন্যপদ। একাদশ-দ্বাদশে চাকরিহারাদের নিয়ে শূন্যপদ ১২,৫১৪। গ্রুপ সি ২৯৮৯, গ্রুপ ডি ৫,৪৮৮ শূন্যপদ।
একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষকের জন্য ৬,৯১২ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হচ্ছে।
২৪,২০৩ শূন্যপদ ছাড়াও অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হচ্ছে। ১১,৫১৭ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি হয়েছে নবম-দশমের শিক্ষকদের জন্য।
মমতা জানান, প্যানেল প্রকাশিত হবে ১৫ নভেম্বর। কারণ, ডিসেম্বরের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে। কাউন্সেলিং শুরু হবে ২০ নভেম্বর। যদি রিভিউয়ে বিচার না হয়, তা হলে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রক্রিয়া হবে। মমতা বলেন, ‘‘আমরা বলছি না, কোর্ট বলছে। লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ সব প্রক্রিয়া করে নেব, যদি রিভিউতে বিচার না পাই।’’ ২৪,২০৩ শূন্যপদের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। হাই কোর্টের নির্দেশে ওই পদের জন্য নিয়োগ হবে।
মমতা বলেন, ‘‘৩১ মে বিজ্ঞপ্তি জারির শেষ সময়। বিজ্ঞাপন দিতে হবে ৩০ মে। রিভিউয়ের সুযোগ সব সময় খোলা রয়েছে। যত ক্ষণ রিভিউ না-হচ্ছে, বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া চালানো হবে। যাঁরা অনলাইনে আবেদন করতে চান, তাঁরা তা করতে পারবেন ১৬ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। যদি রিভিউ হতে সময় লাগে, তাই হাতে সময় রাখা হয়েছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘ ৩১ মের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কোনও পদক্ষেপ করছিলাম না। কারণ, অপেক্ষা করছিলাম রিভিউ আলোচিত হবে। তার ভিত্তিতে কোর্ট যে নির্দেশ দেবে, তা চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষে হতে পারে। তাই অপেক্ষা করেছি। আমরা বলেছি, চাকরি খেতে চাই না। যে হেতু রিভিউ হয়নি, পিটিশন পেন্ডিং, কোর্টে গরমের ছুটি। আমাদের হাত বাঁধা, ৩১ মের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। দুটো প্রক্রিয়া চালু থাকবে। এক, নির্দেশ মেনে ৩১ মের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করব। দুই, রিভিউতে ভাল ফল পেলে সেটা গ্রহণ করব। পরে যাতে বলতে না-পারে সুপ্রিম কোর্ট যে, নির্দেশ মানা হয়নি।’’
মমতা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট আগের নির্দেশে বলেছে, দুটো ভাগ রয়েছে। শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। আমাদের করার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু করতে হচ্ছে। আমরা চাই যে, চাকরিহারারা সকলে চাকরি ফিরে পান। অনেকে একক ভাবে কোর্টে গিয়েছেন। কোর্ট থেকে নেগেটিভ রিপোর্ট আসছে। এটা যে কেউ যেতে পারেন। এটা তাঁদের অধিকার। আমরা তা করব না। রাজ্য সরকারকে সকলেরটা নিয়ে করতে হয়। রাজ্য করলে সকলের স্বার্থ দেখতে হয়।’’
মমতা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আমরা সবটাই রেডি করে রাখছি। যদি রিভিউয়ে বলে, পরীক্ষা দিতে হবে না, লিস্ট বাতিল করা হল না, তখন সুপ্রিম কোর্টের কথা শুনব। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। ৩১ মের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। না-করলে কোর্ট বলবে, নির্দেশ মানল না। তাই বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া চলবে।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা যাঁরা সরকার চালাই, আইন মেনে চলতে হয়। আইনের বাইরে গিয়ে যদি কিছু করি, অন্য বার্তা যেতে পারে। সঠিক সময়ে রিভিউ পিটিশন দিয়েছি। সেখানে কারও চাকরি যাওয়ার কথা বলিনি। রিভিউ আলোচনার সুযোগ আসেনি। কারণ, গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। আমরা তত ক্ষণ অপেক্ষা করলে, আগের অর্ডার না-মানলে যদি সুপ্রিম কোর্ট বলে, নির্দেশ মানোনি, সবটাই বাতিল! এটা আমরা চাই না।’’
মঙ্গলবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি বিকেলে চাকরিহারাদের বিষয়ে কিছু ঘোষণা করতে সাংবাদিক বৈঠক করতে চলেছেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “চাকরিহারা শিক্ষক ভাইবোনদের জন্য আজ বিকেল ৫টায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে, নবান্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক সম্মেলন।”
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ৩১ মে-র মধ্যে নতুন করে পরীক্ষায় বসার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চলেছে শিক্ষা দফতর। তবে তাতে আপত্তি রয়েছে বলে জানান চাকরিহারারা। তাঁদের দাবি, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে কী ভাবে ‘যোগ্য’দের চাকরিতে পুনর্বহাল করা যায়, তা দেখুক সরকার। পুনর্বিবেচনা মামলার রায়ের আগে বি়জ্ঞপ্তি প্রকাশ না-করার দাবি চাকরিহারাদের।
চাকরিহারাদের দাবি, পরীক্ষা না-দিয়ে চাকরিতে ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের বহাল রাখুক সরকার! সোমবারের বৈঠকেও সেই দাবি জানানো হয়। বৈঠক শেষে চাকরিহারাদের পক্ষে বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, ‘‘সরকারের তরফে পুনর্বিবেচনা মামলার জন্য যে খসড়া করা হয়েছে, তা আমাদের দেখিয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি দেখেছি। দেখে ঠিকই মনে হয়েছে।’’
বিক্ষোভকারী চাকরিহারারা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা ব্রাত্যকে খোলা চিঠিও দিয়েছিলেন। তাঁদের দাবিমতোই চাকরিহারাদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সোমবার বিকাশ ভবনে বৈঠক করেন শিক্ষাসচিব বিনোদ কুমার এবং সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রকল্পের ডিরেক্টর শুভ্র চক্রবর্তী। তবে সেই বৈঠকে ছিলেন না ব্রাত্য।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ২৫,৭৩৫ জন শিক্ষক। তাঁরা সকলেই ২০১৬ সালে এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন। ওই বছর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছিল বলে অভিযোগ। চাকরি হারিয়ে ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের একাংশ বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। তাঁদের দাবি, পরীক্ষা ছাড়াই তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy