বৃহস্পতিবার মেয়ো রোডে তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
বিজেপিকে বিঁধে মমতা বলেন, “আপনারা মানুষের অধিকার কেড়ে নেন। বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে গরিব মানুষদের উপর অত্যাচার করেন। আমি মনে করি, গরিব মানুষেরা আমার হৃদয়। আমার সবচেয়ে বড় মেধা। আমি জাত-পাত মানি না। আমি মানি মনুষ্যত্ব।”
বাংলার অপমান করার অভিযোগে বিজেপিকে বিঁধে মমতা বলেন, “জনগনমন অধিনায়ক জাতীয় সঙ্গীত হল কী করে! বন্দেমাতরম জাতীয় গান হল কী করে! জয় হিন্দ স্লোগান দাও কী করে!” তিনি আরও বলেন, “সারা ভারত থেকে ৫০০ টা দল নিয়ে এসেছে বিজেপি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্ভে করছে কার কার নাম বাদ দেওয়া যায়। কেউ সার্ভে করতে এলে, কখনও নিজের তথ্য দেবেন না। আপনার ডিটেল নিয়ে গিয়ে আপনার নাম বাদ দিয়ে দেবে। নিজের ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে দেখবেন, নামটা আছে কি না। আধার কার্ডটা করে রাখুন। আধার কার্ডটা কম্পালসরি করে দেওয়া হয়েছে। ললিপপ সরকার বিডিও, এসডিও, ডিএম, পুলিশদের ভয় দেখাচ্ছে। বলছে চাকরি খেয়ে নেব, নয় জেলে পুরে দেব। নির্বাচন কমিশন আসে আর যায়, তার পরে কিন্তু রাজ্য সরকার থাকে। কমিশনের আয়ু নির্বাচন চলাকালীন তিন মাস। গায়ের জোরে এ সব হবে না। ভান্ডারা কিন্তু আমাদের কাছেও আছে। যেমন লক্ষ্মীর ভান্ডার আছে, তেমনি আপনাদের দুর্নীতির ভান্ডারাও আছে। খুলে দেব, ফাঁস করে দেব।”
তৃণমূলনেত্রী বলেন, “রিসেন্ট কথা বলুন। ১৯৪৬ সালের কথা বলছেন কেন? তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? তখন তো মায়ের পেটেও ছিলেন না। আমিও ছিলাম না। এত জ্ঞান কোথা থেকে এল? জ্ঞানভান্ডারী, জ্ঞানবৃক্ষ সব… জ্ঞানবৃক্ষ নয়, এদের মগজে মরুভূমি। এরা কোনও দিনও বৃক্ষ হতে পারে না। বাংলার ইতিহাস ভুলে গেছেন?” মমতা আরও বলেন, “এখন আবার সিনেমা বানাচ্ছে টাকা দিয়ে দিয়ে। বাংলার বদনাম করার জন্য, বাংলাকে অপমান করার জন্য।”
জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে মমতা বলেন, “নির্বাচন কমিশনের চেয়ারকে আমি সম্মান করি। কিন্তু জানেন তো, বাচ্চারা ললিপপ খেলে মানায়। কিন্তু বড়রা যদি ললিপপ খায় কোনও পার্টির হয়ে, সেটা মানায় না।”
মমতা বলেন, “কিছু হিংসুটে লোক আছে। দেখলেই জ্বলে, আর লুচির মতো ফোলে। এরা হচ্ছে তাই। ১০০ দিনের কাজে পরপর চার-পাঁচ বছর আমরা এক নম্বরে ছিলাম। গ্রামীণ আবাস যোজনা, রাস্তা তৈরিতে এক নম্বরে ছিলাম। তাই সেলফিশ জায়েন্টেরা, যারা হাই লোডেড ভাইরাস, তারা হিংসা করে আমাদের টাকা বন্ধ করে দিয়ে ভাবছে এনআরসি চালু করবে এবং সকলের ভোটাধিকার কেড়ে নেবে। জীবন থাকতে কারও ভোটাধিকার কাড়তে দেব না।”
মমতা বলেন, “ইলেকশন আসলেই দেখবেন এজেন্সির দাপাদাপি বাড়ে। একটা এজেন্সি নয়। আগে কখনও কেন্দ্রীয় এজেন্সি বিজেপি করত না। কোনও রাজনৈতিক দল করত না।”
মমতা বলেন, “তৃণমূলকে শুধু বাম-বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় না। সব শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার হলে তখন মুখে বোল ফোটে না। পরশুদিনও হাবরায় এক জন মারা গিয়েছেন। তাঁকে মহারাষ্ট্রে মারা হয়েছিল।”
নিয়োগ জটিলতা এবং জয়েন্টের ফলপ্রকাশে দেরি নিয়ে মামলাকারীদের একাংশকে বিঁধলেন মমতা। তিনি বলেন, “যারা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বড় বড় কথা বলে, নিয়োগে বাধা দেয়, ভর্তিতে বাধা দেয়— আমি দুঃখিত যে জয়েন্টের ফল প্রকাশে একটু দেরি হয়েছে। এর জন্য আমাদের দোষ নেই। কোর্টে কেস করে, এরা একসঙ্গে কেস কেস করে। আবার এসে আমাদের নামে নিন্দা করে। এরা দু’নম্বরি।”
মমতা বলেন, “গবেষকদের ইউজিসি গ্র্যান্ট বন্ধ করে দিয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ করে গবেষকদের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সব জায়গায় তো আমাদের লোক থাকেন না। বিভিন্ন জায়গার লোক থাকেন। কেউ কেউ দুষ্টুমি করে, কেউ কেউ মিষ্টিমি করে। আমরা মিষ্টিমি করি, দুষ্টুমি করি না।”
মমতা জানান, সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে সবুজসাথী প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ৫৩ লক্ষ পড়ুয়াকে তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পে মোবাইল দেওয়া হয়েছে। ‘স্টুডেন্ট্স ক্রেডিট কার্ড’-এর আওতায় ৯২ হাজার ছাত্রছাত্রী সুবিধা পাচ্ছেন। পাশাপাশি সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের জন্য বৃত্তি সংক্রান্ত তথ্যও তুলে ধরেন তিনি।
মমতা বলেন, “২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যের আয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ। দারিদ্রসীমা সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মাপকাঠি। ১ কোটি ৭২ লক্ষ মানুষকে ২০১৩-২০২৩ সালের মধ্যে দারিদ্রসীমার উপরে নিয়ে এসেছি।”
মেয়ো রোডের মঞ্চে বক্তৃতা করছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। যোগমায়া দেবী কলেজে নিজের ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে তিনি।
দুপুর ১টা নাহাদ মেয়ো রোডের সভাস্থলে পৌঁছে যান তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন মঞ্চে বক্তৃতা করছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেশ জুড়ে বাঙালি হেনস্থার অভিযোগের আবহে বৃহস্পতিবার দলের ছাত্রশাখার উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন, সে দিকে নজর রয়েছে সকলের। আগামী বছরই রাজ্যে বিধানসভা ভোট রয়েছে। বিহারে ইতিমধ্যে ভোটার তালিকার নিবিড় এবং বিশেষ সংশোধন (এসআইআর) শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। বিহারের পরে অন্য রাজ্যগুলিতেও একই পদক্ষেপ করার কথা রয়েছে কমিশনের। তা নিয়ে ইতিমধ্যে কমিশনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে সুর চড়িয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবারের সভা থেকে দলনেত্রী মমতা এ বিষয়ে কোনও বার্তা দেন কি না, তা নিয়েও কৌতূহল বৃ্দ্ধি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-র প্রতিষ্ঠা দিবসে মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে সভা রয়েছে শাসকদলের ছাত্রশাখার। টিএমসিপির বার্ষিক সমাবেশে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy