Advertisement
০১ মে ২০২৪

বাবুল প্রার্থী হতেই চর্চায় আসানসোল 

কোন পরিস্থিতিতে বাবুলকে ফের প্রার্থী করা হল, বিরোধীদের কোন কোন প্রচার-অস্ত্রের তাঁকে মোকাবিলা করতে হবে তা নিয়ে এখন শোরগোল আসানসোলের রাজনীতিতে।

বাবুল সুপ্রিয়। —ফাইল চিত্র

বাবুল সুপ্রিয়। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০০:১৪
Share: Save:

২০১৪, চৈত্রের চড়া রোদ। পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরের ভারতী ভবন প্রেক্ষাগৃহের সামনে ভিড়। গাড়ি থেকে নেমে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আসানসোলে কোনও কিছুই আসান (সহজ) নয়। আমার সোল (অন্তরাত্মা) দিয়ে সব মুশকিল আসান করব।’’ সে বার হইহই করে জিতেও ছিলেন তিনি। এ বারেও আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র জয়ে বিজেপির ভরসা বিদায়ী সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বড়াল।

গত পাঁচ বছরে দামোদর, অজয় দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। তাই কোন পরিস্থিতিতে বাবুলকে ফের প্রার্থী করা হল, বিরোধীদের কোন কোন প্রচার-অস্ত্রের তাঁকে মোকাবিলা করতে হবে তা নিয়ে এখন শোরগোল আসানসোলের রাজনীতিতে।

জেলার বিজেপি নেতাদের একাংশের ধারণা, বাবুলকে ফের প্রার্থী করার মূল কারণ, এলাকার রাজনীতি নিয়ে তাঁর ‘সরব’ উপস্থিতি। বিজেপি-র এক জেলা নেতার অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে সাংসদকে নানা ভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে শাসক দল (যদিও তৃণমূল সে অভিযোগ মানে না)। ২০১৪-র প্রচার পর্বে বাবুলের বিরুদ্ধে পুলিশে নানা অভিযোগ দায়ের হয়। সাংসদ মেলার আয়োজন ঘিরে সাংসদ বনাম আসানসোল পুরসভার লড়াই গড়ায় আদালত পর্যন্ত। চলতি বছরেও ভোটের ঢাকে কাঠি পড়া মাত্র দু’টি বিষয়ে বাবুলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের কাছে অভিযোগ হয়েছে।

বিজেপি-র এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘মোটের উপরে গত পাঁচ বছরে প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে বাবুল সাধ্যমতো যুঝেছেন। এই প্রতিকূল পরিস্থিতি বা কাজ না করতে দেওয়ার অভিযোগটি সোশ্যাল মিডিয়া, নানা সভা, অনুষ্ঠানে বার বার জানিয়েছেন। এলাকাবাসীদের বুঝিয়েছেন, সমস্যাটা কোথায়।’’ বিজেপি-অন্দরের খবর, প্রচার বিষয়টিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল যে অত্যন্ত সক্রিয়, তা নজরে পড়েছে অনেকের। তা ছাড়া, আসানসোলে তৃণমূলের এ বারের তারকা-প্রার্থী মুনমুন সেন। পাল্টা তারকা হিসেবেও আসানসোলের ক্ষেত্রে প্রথমেই নাম আসে ‘চেনা মুখ’ বাবুলের, মনে করছেন দলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশ।

তবে বাবুলের নাম ঘোষণা হতেই সুর চড়াতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘এলাকায় হিন্দুস্তান কেব্‌লস, বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের মতো কারখানা বন্ধ হয়েছে। বেশ কয়েকটি খনি বন্ধের মুখে। জেলায় কর্মহীনের সংখ্যা বেড়েছে আর সাংসদ শুধুই বড়াই করেছেন।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনেরও বক্তব্য, ‘‘শিল্প নিয়ে বিদায়ী সাংসদ পরপর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই ভোটে মানুষ এর জবাব দেবেন।’’

বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই অবশ্য বলেন, ‘‘যে শিল্পগুলি অলাভজনক, সেগুলিই বন্ধ হয়েছে। ইস্কোর আধুনিকীকরণ-সহ নানা ক্ষেত্রে শিল্পে অগ্রগতি ঘটিয়েছে এই সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন আর রাজ্যে তৃণমূল সরকারের ব্যর্থতা, এই দুইয়ের জন্যই আমরা আবার জিতব।’’ বাবুল নিজেও বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারে দৃষ্টান্তমূলক উন্নয়ন হয়েছে দেশে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প রাজ্য সরকার অন্য নাম দিয়ে চালাচ্ছে। শিল্পাঞ্চলের মানুষ আমাদের সঙ্গেই আছেন।’’

তবে বিজেপি-র জেলা নেতাদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে এ কথাও মানছেন, শিল্প নিয়ে বিদায়ী সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা ব্যর্থতার অভিযোগকে ভোঁতা করতে ‘বিকল্প’ ভাবা হলে, আসলে সেই অভিযোগকেই মান্যতা দেওয়া হচ্ছে এমন বার্তা যেতে পারত। বরং, কেন্দ্রীয় সরকারের নানা প্রকল্পের কথা সামনে এনে এই অভিযোগের জবাব দেওয়া যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asansol Lok Sabha Election 2019 BJP Babul Supriyo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE