Advertisement
E-Paper

মুড়ি-পতাকার লড়াইয়ে আটকে অক্ষয়ের দৃষ্টি

সমাজের নির্দল প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ হেমব্রম রয়েছেন লড়াইয়ের ময়দানে। তা হলে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০৩:৩৮
বিজেপির বুথ ক্যাম্পে বিলি করা হচ্ছে মুড়ি। রবিবার বেলপাহাড়ির চিড়াকুটিতে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বিজেপির বুথ ক্যাম্পে বিলি করা হচ্ছে মুড়ি। রবিবার বেলপাহাড়ির চিড়াকুটিতে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

মাওবাদী পর্ব অতীত। কিন্তু একদা মাওমুলুকে ভোট পরবে বজায় থাকল মুড়ি বিলির ধারা।

বিলির লড়াইয়ে শাসক-বিরোধী উভয়েই। বিনপুর বিধানসভার অন্তর্গত বেলপাহাড়ি ব্লকের শিমূলপাল গ্রাম পঞ্চায়েতের দৃশ্য। এটি আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের দখলে। গত পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের বুথ ক্যাম্পগুলো কার্যত ছিল সুনসান। তুলনায় সমাজের ক্যাম্পে ভিড় ছিল। সমাজের শিবির থেকে গত বছর দেদার মুড়ি বিলি হয়েছিল। বিধানসভাতেও সেই ছবি দেখা যায়। এবার অবশ্য লোকসভা ভোটে তৃণমূল ও বিজেপির বুথ ক্যাম্প বাড়িমুখো ভোটারদের হাতে মুড়ির প্যাকেট ধরিয়ে দিতে দেখা গেল দিনভর।

শিমূলপালের ওদলচুয়া হাইস্কুল বুথে ভোট দিয়ে চিড়াকুটি হাট চত্বরে বিজেপির বুথ ক্যাম্পে হাসিমুখে মুড়ি নিচ্ছিলেন শিঙাডোবা গ্রামের সরলা সিং, লীলাবতী মাহাতোরা। তাঁরা জানালেন, ‘‘সমাজের ক্যাম্পে মুড়ি নেই। এবার তো হাওয়া পদ্মফুলের দিকে। তাই বিজেপির শিবিরে মুড়ি নিচ্ছি।’’ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত অজয় মাহাতো বলেন, ‘‘তৃণমূলের দুর্নীতি আর স্বজনপোষণে আদিবাসী-মূলবাসীরা বীতশ্রদ্ধ। গত আট-দশ মাসে সমাজের দখলে থাকা পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ কোনও কাজ করতে পারেনি। তাই মানুষ বিজেপিতেই আস্থা রাখছেন। আমাদের শিবির থেকে কুড়ি কেজি মুড়ি বিলি করা হয়েছে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তৃণমূলের বুথ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরোজ মাহাতো জানালেন, তাঁরা দুপুরের মধ্যে দশ কেজি মুড়ি বিলি করেছেন। বিজেপি-র থেকে পিছিয়ে? সরোজ হেসে বলেন, ‘‘মোটেই তা নয়, এলাকার গরিব মানুষেরা যাঁরা আমাদেরই ভোটার তাঁরা ওদের থেকেও মুড়ি নিয়েছেন। কিন্তু ভোটটা আমাদেরই দিয়েছেন।’’ এবার বুড়িঝোর প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে তৃণমূল ও বিজেপির এজেন্ট থাকলেও সমাজের এজেন্ট দেওয়া হয়নি। সমাজের শিবিরে বসে থাকা প্রেমচাঁদ সরেন, মঙ্গল সরেনরা বলেন, ‘‘দু’টো বড় দল এজেন্ট দিয়েছে। ভালই তো ওরা লড়াই করুক। আমাদের সমাজের জনসমর্থন অটুট আছে। মুড়ির দরকার হবে না।’’

সমাজের নির্দল প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ হেমব্রম রয়েছেন লড়াইয়ের ময়দানে। তা হলে? ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া বেলপাহাড়ির জামাইমারি আর ঝাড়খণ্ডের পাকুড়িয়া প্রতিবেশী গ্রাম। পাকুড়িয়া জামশেদপুর বিধানসভার অন্তর্গত। পাকুড়িয়ার বাসিন্দা বৃদ্ধ তপন নায়েক ঝাড়খণ্ডের ভোটার। তিনি এদিন নিকটবর্তী বুথে ভোট দিয়ে এসেছেন। তপনের ছেলে অক্ষয় আবার ঝাড়গ্রাম লোকসভার ভোটার। অক্ষয় থাকেন জামাইমারি গ্রামে। শিলদা কলেজ থেকে স্নাতক ঝাড়গ্রাম থেকে সাঁওতালিতে ডিএলএড করা অক্ষয় চাকরি পাননি। চোখে ভাল দেখেন না। একবার পুলিশের উদ্যোগে শিবিরে দেখিয়েছিলেন। রেটিনার সমস্যা। অক্ষয়ের কথায়, ‘‘আমি দৃষ্টিক্ষীণতায় ভুগছি। কিন্তু অভাবের সংসারে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।’’ জামাইমারির ভোটগ্রহণ কেন্দ্র পাথরচাকড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে যাননি অক্ষয়। ওই বুথে অবশ্য সমাজের এজেন্ট ছিলেন। ছিলেন তৃণমূলেরও এজেন্ট। ভোটের আগের রাতে জামাইমারি আর পাথরচাকড়িতে তৃণমূলের পতাকা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতির পতাকা, সমাজ আর মুড়ির মাঝে আটকে রয়েছে অক্ষয়ের মতো যুবকদের চোখ।

এদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ৩ ব্লকের শামরমারা প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথের ভোটারদেরও মুড়ি বিলি করে তৃণমূল এবং কংগ্রেস। এদিন তৃণমূলের ক্যাম্প থেকে ছোলা, শসাকুচি, চপের সঙ্গে ছিল মুড়ি। তৃণমূলের ক্যাম্প ইনচার্জ ভজহরি হেমব্রম বলেন, ‘‘সকালে মুড়ি তো ছিলই, দুপুরে শুধু মাংস ভাত খাইয়েছি, ২৫ কেজির মতো মুরগির মাংস আনিয়েছি।’’ বিজেপি শিবিরও ছোলা, মুড়ি খাইয়েছে। বিজেপির ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা উত্তম সামন্ত বলেন, ‘‘দুপুরের জন্য বিশেষ কিছু করতে পারিনি, ব্রয়লার মুরগির মাংসের ঝোল, আমের চাটনি আর ভাত। প্রায় শ’দুয়েকের রান্না করছি।’’ খাওয়াদাওয়ার আয়োজনে ভোটারদের প্রভাবিত করা হচ্ছে কেন? বিডিও অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি, তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

Lok Sabha Election 2019 Belpahari লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy