Advertisement
E-Paper

ভারতীর হুমকি শেষ হল কান্নায়

রবিবার ভোটের দিন সাতসকালেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন ভারতী।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০৪:২৩
মন্দিরের পাঁচিল টপকে ভারতী ঘোষকে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রবিবার কেশপুরে। নিজস্ব চিত্র

মন্দিরের পাঁচিল টপকে ভারতী ঘোষকে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রবিবার কেশপুরে। নিজস্ব চিত্র

হুমকির শুরুটা তিনিই করেছিলেন কেশপুরে। বলেছিলেন, তৃণমূলকে রুখতে উত্তরপ্রদেশ থেকে ছেলে এনে কুকুরের মতো মারবেন। ভোটের দিন সেই কেশপুরেই হুমকি ও বিক্ষোভে দিনভর আটকে রইলেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। আক্রান্ত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। কেঁদেও ফেললেন। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে আহত হলেন এক তৃণমূলকর্মী। তার আগে ও পরে দফায় দফায় তৃণমূলের বিক্ষোভ, ইটবৃষ্টি, লাঠিচার্জ সব মিলিয়ে তৈরি হয় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। কোনওক্রমে একটি মন্দিরের পিছনের পাঁচিল টপকে কেশপুর থানায় আশ্রয় নিতে হয় মেদনীপুরেরই প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতীকে। রবিবার ষষ্ঠ দফার ভোটে এ ভাবেই হিংসায় সবাইকে ছাপিয়ে গেল কেশপুর। আক্রান্ত সংবাদমাধ্যমও।

রবিবার ভোটের দিন সাতসকালেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন ভারতী। বুথ থেকে দলের এজেন্টকে মেরে বার করে দেওয়া হয়েছে খবর পেয়ে গোটগেড়িয়ায় যেতেই তাঁকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মীরা। মহিলাদের ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যান বিজেপি প্রার্থী। পায়ের নখ উপড়ে যায়। কেঁদে ফেলেন তিনি। সেখান থেকে কোনওরকমে বেরিয়ে তিনি যান বগছড়িতে। পরে বড়বরোজ ঘুরে দোগাছিয়ায় পৌঁছতেই ফের বিক্ষোভ। এ বার বিক্ষোভ তুমুল আকার নেয়। ভারতীকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান ওঠে। তৃণমূলকর্মীরা বলতে থাকেন, ‘‘সোনা চোর, বালি চোর, গরু চোরকে এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না।’’ ভারতীকে হেনস্থার হাত থেকে বাঁচাতে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ জওয়ানেরা লাঠিচার্জ করলে চারপাশ তেতে ওঠে। ভারতীর গাড়ি লক্ষ্য করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। অল্প জখম হন ভারতী। আর গুরুতর জখম হন ভারতীর নিরাপত্তারক্ষী কিষান কুমার। ইটের ঘায়ে তাঁর মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে শুরু করে। শুধু ভারতী নয়, সংবাদমাধ্যমের বেশ কয়েকটি গাড়ির কাচও ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

এর পরই কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন ভারতীর নিরাপত্তায় নিযুক্ত সিআইএসএফ জওয়ানেরা। গুলি তৃণমূলকর্মী বক্তিয়ার খানের ডান হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। তৃণমূলকর্মীরা ভারতীর গাড়ি তাড়া করেন। কোনও রকমে সেখান থেকে বেরিয়ে জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার কেশপুরে পৌঁছন। সেখানেও ফের বিক্ষোভ। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে ভারতীর গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে প্রশাসন। কেশপুরে ভারতীর গাড়ি আটকান ডিএসপি উৎপল পুরকাইত, ওসি হীরক বিশ্বাস। ছিলেন কেশপুরের বিডিও দীপক ঘোষও। উৎপলকে বলতে শোনা যায়, ‘‘গাড়ির যে পারমিশন রয়েছে তার কাগজ দেখান।’’ ভারতীর দাবি, তিনি নিয়মমাফিক গাড়ির পারমিশন চেয়েছেন কমিশনের কাছে। আবেদনপত্র জমাও দিয়েছেন। ভারতী কি গাড়ির অনুমতি নেননি? ঘাটালের রিটার্নিং অফিসার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘উনি অসম্পূর্ণ কাগজ জমা দিয়েছিলেন। বারবার বলা হয়েছে। তাও সম্পূর্ণ কাগজ জমা দেননি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কেশপুরে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়ে এক কালী মন্দিরে ঢুকে পড়েন ভারতী। সেখানে ঘন্টা খানেক থাকার সময়েও ইটবৃষ্টি থেকে রেহাই পাননি। শেষে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভরত তৃণমূলকর্মীদের হটিয়ে দেয়। ভারতীকে পাঁজাকোলা করে মন্দিরের পাঁচিল টপকে কেশপুর থানার মধ্যে নিয়ে আসেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। দুপুরে কেশপুর ছাড়েন ভারতী। ফেরার পথে শুরুতে জামতলায়, পরে ধর্মায় ভারতীর গাড়ি আটকায় পুলিশ। ভারতীর দাবি, ‘‘আমি যাতে অন্য এলাকায় না-যেতে পারি সেই জন্যই গাড়ি আটকানো হয়েছে।’’ পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। এ দিন সকালে পড়ে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছিলেন ভারতী। পায়ের একটি আঙুলের নখ উঠে গিয়েছিল। বিকেলে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসে চিকিৎসা করান তিনি। অসুস্থ হয়ে তাঁর এক নিরাপত্তারক্ষীও মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি হন। দোগাছিয়ার ঘটনার সময়ে ইটের ঘায়ে জখম হয়েছিলেন ওই নিরাপত্তারক্ষী।

লোকসভা হোক বিধানসভা বা পঞ্চায়েত, ভোটে বরাবর শিরোনামেই থাকে কেশপুর। এ বার প্রচার পর্ব থেকেই কেশপুরকে নিশানা করেছিলেন ভারতী। বারবার এসেছেন। বাধার মুখে পরে পাল্টা শাসিয়েছেন। ফলে, কেশপুরের মাটি তেতেই ছিল। এ দিন সাতসকালে ভারতী ফের এলাকায় আসতেই আগুনে ঘি পড়ে।

এ দিন কেশপুরে এসে দেবও অভিযোগ করেছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক আনার কথা বলেছিলেন। কুকুরের মতো মারার কথা বলেছিলেন। আজকেও বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসেছিলেন। বুথে নিজেই ভিডিয়োগ্রাফি করছেন।’’ ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘প্রচারের সময় থেকেই প্ররোচনা তৈরি করেছেন ভারতী। এখনও উর্দির দেমাক ছাড়তে পারেননি।’’ গুলি চালনার ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন গুলিতে জখম তৃণমূলকর্মী বক্তিয়ার খানের দাদা আলমগির খান। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ গুলিতে জখম তৃণমূল কর্মীর বাড়িতেও এ দিন গিয়েছিলেন দেব। তাঁর কথায়, ‘‘গুলিটা এক ইঞ্চি বাঁ দিকে গেলেই ওই কর্মী মারা যেতেন।’’

তৃণমূল শিবির মনে করছে, এ সবই ভারতীর কৃতকর্মের ফল। মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, ‘‘উনি এখনও নিজেকে জেলার দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা ভাবেন। ট্রাক মালিকদের থেকে টাকা তুলতেন, মানুষের উপর অত্যাচার করতেন।’’ আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির মন্তব্য, ‘‘সারা জীবন অন্যের চোখের জল ফেলিয়েছেন, আজ রাজ্যবাসী ওঁর চোখের জল দেখল।’’

পাল্টা ভারতী বলছেন, ‘‘এ ভাবে ভোট হয় না। তবে আমিও ছোড়নেওয়ালি নয়। কমিশনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাব। এত সহজে হারব না।’’

Lok Sabha Election 2019 Bharati Ghosh লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy