ভোটের চিঠি: বহরমপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোটের দিন ষাট হাজার পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার আবেদন জানিয়ে আঠারো বছর আগে মুর্শিদাবাদ জেলার এক রাজনৈতিক নেতা দলের দৈনিক মুখপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। এ বারের লোকসভা ভোটে মুর্শিদাবাদের ১ লক্ষ ১২ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি ফেরানোর আবেদন জানাতে অনেকটা সেই পথেই হাঁটলেন জেলা নির্বাচন আধিকারিক পি উলাগানাথন।
২০০১ সাল, দুয়ারে বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের দিন পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি ফেরার আমন্ত্রণ জানাতে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মধু বাগ দলের দৈনিক মুখপত্রে বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে প্রচার করেছিলেন। তার ১৮ বছর পরে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের দিন ১ লক্ষ ১২ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি ফিরে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক। মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের কর্মস্থলে থাকা পরিযায়ী কর্মীদের ডাক মারফত সেই চিঠি পাঠানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
একদা সিপিএমের ‘ভিয়েতনাম’ হিসাবে খ্যাত নবগ্রাম থেকে ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের বিধায়ক হয়েছিলেন অধীর চৌধুরী। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে বিরোধী শূন্য বহরমপুর পুরসভা দখল করে কংগ্রেস। পরের বছর ১৯৯৯ সালে বামেদের ‘অপরাজেয়’ লোকসভা কেন্দ্র বহরমপুর থেকে অধীর চৌধুরী সাংসদ হন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
২০০০ সালে শতাব্দীর নজিরবিহীন বন্যায় ধুয়ে মুঝে সাফ হয়ে গিয়েছিল অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মুর্শিদাবাদ জেলার জনজীবন। শিয়রে তখন ২০০১ সালের বিধানসভা ভোট। দুয়ারে অশনি সঙ্কেত দেখে পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা মনে পড়ে যুযুধান সব রাজনৈতিক দলেরই।
কৌশলে কিন্তু এগিয়ে যায় সিপিএম। পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভোটের দিন ‘বিদেশ’ থেকে কী ভাবে বাড়ি ফিরবে সেই বিষয়ে দলের ‘ক্যাডার’রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিশ্চিত করেন। একই উদ্দেশ্যে মধু বাগ দলের দৈনিক মুখপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক ও দলের কর্মীদের আবেদন জানান। মধু বাগের মতো ভোটে অবশ্য কাউকে জেতানোর তাগিদ নেই পি উলাগানাথনের। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে সব ভোটারকে বুথমুখি করার তাগিদটাই তাঁর রয়েছে।
এ জেলার মোট ভোটার ৫১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৮৩৭। তার মধ্যে জীবিকার তাড়নায় প্রায় এক লক্ষ বারো হাজার ভোটার কেরল, মুম্বই ও দিল্লির মতো ভিন রাজ্যে আছেন।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘বাড়ি গিয়ে সেই পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগ্রহ করা হয়েছে ওই শ্রমিকদের ফোন নম্বর ও কর্মস্থলের ঠিকানা।’’ সেই সব ঠিকানায় জেলাশাসকের স্বাক্ষরিত পোস্টকার্ড পাঠিয়ে ভোটের দিন পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরে ভোট দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদন করা হয়েছে বাড়ির লোকজনদেরও।
ইতিমধ্যে ডাক বিভাগের সঙ্গে ওই বিষয়ে আলোচনাও করেছেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘ডাক বিভাগ কথা দিয়েছে, তিন দিনের মধ্যে চিঠি পৌঁছে যাবে কেরল, মুম্বই ও দিল্লির মতো দূরবর্তী এলাকায় কর্মরত মুর্শিদাবাদের লোকজনের কাছে।’’
ভোটের দিন ভোট দেওয়ার জন্য তাঁরা ‘সবেতন ছুটি পাবেন’ বলেও ছাপানো চিঠিতে লিখেছেন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক। এ জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের শতকরা ৪০ ভাগ ডোমকল মহকুমার।
ডোমকল মহকুমাশাসক দিব্যা লোগানাথন বলেন, ‘‘জেলাশাসকের লেখা চিঠি পাঠানো ছাড়াও মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে, প্রয়োজনে ফোন করে পরিযায়ী শ্রমিকদের ডাকার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ সেই চিঠি হাতে পাওয়া এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy