মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের মুখে কলকাতা ও বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার-সহ চার পদস্থ আইপিএস অফিসারের অপসারণ নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে কড়া চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবারেই সেই চিঠির পাল্টা জবাব নবান্নে পাঠিয়ে দিয়েছে কমিশন।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, কমিশনের ওই বদলির নির্দেশিকা ‘চূড়ান্ত ভাবে একতরফা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট’। কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির আদেশে কমিশন এমন কাজ করেছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় উপ-নির্বাচন কমিশনার চন্দ্রভূষণ কুমারের জবাবি চিঠিতে এই অভিযোগকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, এই অভিযোগ খারিজ করতে কোনও যুক্তি দেখানো সম্মানজনক এবং উচিত হবে না। মুখ্যমন্ত্রীকে কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন চন্দ্রভূষণ। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র রক্ষার কর্তব্যপালনে কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের যৌথ অংশীদারির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর চিঠিতে।
রাজ্যের দাবি, কমিশন তাদের অভিযোগের যথাযথ উত্তর দেয়নি।
শুক্রবার রাতে নির্দেশ জারি করে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদ থেকে অনুজ শর্মা, বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার পদ থেকে জ্ঞানবন্ত সিংহ, বীরভূমের এসপি-র পদ থেকে শ্যাম সিংহ এবং ডায়মন্ড হারবারের এসপি-র পদ থেকে এস সেলভামুরুগানকে সরিয়ে দেয় কমিশন। অনুজ ও জ্ঞানবন্তের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মমতার ধর্না-মঞ্চে উপস্থিত থাকার অভিযোগ ছিল। আর সংশ্লিষ্ট দুই এসপি-র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ ছিল বলে কমিশনের খবর।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অপসারণের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে কমিশনকে লেখা ‘কড়া’ চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ছিল, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। নির্দেশ দেওয়ার আগে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।
চন্দ্রভূষণের চিঠিতে সংবিধানের ৩২৪ ধারার উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, ওই ধারায় নির্বাচন কমিশনকে নানান ক্ষমতা দেওয়া আছে।
অনেকেই মনে করছেন, খোদ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তোলায় ‘সাংবিধানিক’ ক্ষমতার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন কমিশন-কর্তারা।
আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বলে মমতা চিঠিতে যা লিখেছেন, তার জবাবে উপ-নির্বাচন কমিশনার লিখেছেন, ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ‘২৮ক’ ধারা অনুযায়ী ভোটের দায়িত্বে থাকা রাজ্যের সব আধিকারিক ভোট ঘোষণার পর থেকে ফল বেরোনো পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অধীনে (ডেপুটেশন) থাকেন। তাই ওই সময়সীমার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক নির্বাচন কমিশনের অধীন এবং তাঁকে কমিশনের তত্ত্বাবধান ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। কমিশনের বদলির ক্ষমতা প্রসঙ্গে কেরল হাইকোর্টের একটি নির্দেশের উল্লেখও রয়েছে চন্দ্রভূষণের চিঠিতে। ভোট ঘোষণার আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে, তারিখ-সহ তারও নির্দিষ্ট উল্লেখ করেছেন তিনি।
চিঠির শেষে কমিশন অবশ্য এটাও লিখেছে যে, তাদের নির্দেশ রাজ্য প্রশাসন পালন করেছে। যা থেকে স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে, রাজ্য প্রশাসন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে আগ্রহী।
তবে মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন, কমিশনের সব সিদ্ধান্তই রাজ্যগুলির অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যগুলিতে কেন হস্তক্ষেপ করছেন? অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যসচিবকে সরিয়েছেন। দেশের ক্যাবিনেট সচিব সরবেন না কেন?’’ তাঁর দাবি, পুরোটাই সংবিধান-বিরোধী।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমাদের নেত্রী নির্বাচন কমিশনের কাছে যে-প্রশ্ন তুলেছিলেন, তার সদুত্তর মেলেনি। কমিশন যে-জবাব দিয়েছে, তা দায়সারা। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নেত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না-করে কমিশন কোনও নিয়োগ করতে পারে কি না। তার কোনও সদুত্তর চিঠিতে নেই।’’
রিপোর্ট-বৈঠক
নির্বাচনের দিন কী কী রিপোর্ট পাঠাতে হবে, কী ভাবে পাঠাতে হবে, সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম দু’দফায় যে-পাঁচটি জেলায় নির্বাচন হচ্ছে, সেখানকার জেলাশাসক এবং অন্যান্য আধিকারিকের সঙ্গে আজ, সোমবার বেলা ১১টায় ভিডিয়ো-সম্মেলন করবেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার আরিজ আফতাব। থাকবেন কমিশনের অন্য কর্তারাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy