Advertisement
১৮ মে ২০২৪

জঙ্গলমহলে মমতার হাতিয়ার উন্নয়ন

পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে আসন হারাতে হয়েছে তৃণমূলকে। উন্নয়নের সুফল না পাওয়ার ক্ষোভ ছিল তার একটি বড় কারণ।

সাঁতুড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: সঙ্গীত নাগ

সাঁতুড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: সঙ্গীত নাগ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০৩:৩৫
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কী করেছেন যে তাঁকে ভোট দেবেন? বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার এই প্রশ্নই ছুড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে আসন হারাতে হয়েছে তৃণমূলকে। উন্নয়নের সুফল না পাওয়ার ক্ষোভ ছিল তার একটি বড় কারণ। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় তাই জঙ্গলমহলের এই সব এলাকার জন্য তিনি কী করেছেন, তার বিবরণ ছিল বিশদে।

রানিবাঁধ এবং সাঁতুড়ি— দু’টি সভা থেকেই এ দিন প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মমতার প্রশ্ন, ‘‘জঙ্গলমহলের জন্য একটা ডেভেলপমেন্ট ফান্ড তৈরি করেছিলাম। মোদীর সরকার এসে সেখানেও টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিল। আমি অবশ্য এখনও তা চালাচ্ছি। মোদী কোনও দিন আসেননি এ সব অঞ্চলে। আর এখন নির্বাচনের সময় উড়ে উড়ে আসছেন ভোট চাইতে।’’

এর পরেই মাওবাদী সমস্যার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, গোটা দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই মাওবাদ দমন করে জঙ্গলমহলের আদিবাসীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কিন্তু ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়-সহ দেশের অন্যান্য প্রান্তে মাওবাদী আন্দোলন বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে মোদী সরকার। কারণ প্রধানমন্ত্রী আদিবাসীদের সমস্যাই বোঝেন না। বরং তাদের জমি ‘কেড়ে’ নেন।

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সরকার আদিবাসীদের পাট্টা নিয়ে নিচ্ছিল। আমি গিয়ে লড়াই করেছি। শান্তিরাম মাহাতো, শ্রীকান্ত মাহাতো, পূর্ণেন্দু বসুদের পাঠিয়ে ওখানে লড়াই করিয়েছি। আদিবাসীদের জমি যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে, একমাত্র আমাদের সরকারই তার জন্য আইন করেছে।’’

এ প্রসঙ্গেই আদিবাসী উন্নয়নে রাজ্য সরকার কী কী প্রকল্পে হাত দিয়েছে, তার খতিয়ান দেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আদিবাসীদের জঙ্গলের অধিকার দিয়েছি। কেন্দুপাতার দাম বাড়িয়েছি। পেনশনের ব্যবস্থা করেছি।’’ শুধু তাই নয়, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ায় পানীয় জলের সমস্যার কথা মেনে নিয়ে মমতা বলেন, ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে বাঁকুড়ায় নলবাহিত জলের প্রকল্পের কাজ চলছে। যার ফলে উপকৃত হবেন অন্তত ২৩ লক্ষ মানুষ। একই সঙ্গে কংসাবতী জলাধার সংস্কারের কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ করেন বন্যার প্রসঙ্গ। কেন্দ্রীয় সরকার ডিভিসির জলাধার গুলির সংস্কার করে না, এই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কথাও এ দিন উল্লেখ করেন মমতা।

সাঁতুড়ির সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই এলাকায় একটা বড় কর্মযজ্ঞ চলছে। অনেকেই জানেন না, দিল্লি-অমৃতসর থেকে যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর তৈরি হচ্ছে, তা ডানকুনি-পানাগড় হয়ে রঘুনাথপুরের উপর দিয়ে যাবে। যার ফলে এখানকার অর্থনীতি বদলে যাবে। ইতিমধ্যেই ৩০০০ একর জমির উপর ৪টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টার তৈরি হয়েছে। এর ফলে প্রচুর কর্ম সংস্থান হবে। অর্থনীতি বদলে যাবে।’’

পর্যবেক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, জঙ্গলমহলের এই অঞ্চলে এক সময় অভিযোগ উঠেছিল যে সরকার যা টাকা বরাদ্দ করে, তার কিছু অংশ মাঝপথে ‘উধাও’ হয়ে যায়। উন্নয়নের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীও স্থানীয় নেতাদের সতর্ক করে বলেন, ‘‘বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে। কারও কাছে কেউ এক পযসাও চাইবেন না। কাউকে বিরক্ত করবেন না। তখন কিন্তু আমার থেকে বড় শত্রু কেউ হবে না।’’

একই সঙ্গে বিজেপিকেও কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওরা আগে একটা বিড়ি তিনজনে মিলে টানতো। হাফ প্যান্ট পরে দৌড়তো। এখন হাতে শপিং মলের ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। দু’হাতে টাকা বিলোচ্ছে। আপনারা সাবধানে থাকবেন।’’

রানিবাঁধ, সাঁতুড়ি এবং পরে দুর্গাপুর লাগোয়া বড়জোড়ার সভা থেকে এ দিন স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে মোদীর বিরুদ্ধে নোট বাতিল, হিংসা, বিভেদের রাজনীতির অভিযোগ আনেন মুখ্যমন্ত্রী। দাবি করেন, দেশে যখন ৩ কোটি মানুষের চাকরি গিয়েছে, রাজ্যে তখন ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে যখন ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করছেন, রাজ্যে তখন কৃষকের আয় বেড়েছে তিন গুণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE