নির্বাচনের কাজের গুরুত্ব অসীম। কিন্তু তা করতে গিয়ে যদি চিকিৎসা পরিষেবা লাটে ওঠে? সেটা কি বাঞ্ছনীয়? আপাতত এই টানাপড়েনে পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
ভোটে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ-সহ কিছু চিকিৎসককে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। রাজ্যে এমনিতেই ডাক্তারের আকাল। এই অবস্থায় চিকিৎসকদের ভোটের কাজে পাঠালে চিকিৎসা পরিষেবা ধাক্কা খাবে। তাই কমিশনকে অনুরোধ করে ডাক্তার তুলে নেওয়ার ব্যাপারটা আটকে দেয় স্বাস্থ্য দফতর।
এ বার একই রকম সমস্যা দেখা দিয়েছে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের ক্ষেত্রে। ভোটের কাজের জন্য মহকুমা, স্টেট জেনারেল ও গ্রামীণ হাসপাতাল এবং হাসপাতাল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে বিপুল সংখ্যায় টেকনোলজিস্ট তুলে নেওয়া হয়েছে। অনেক হাসপাতালে পরিষেবা ভেঙে পড়ার জোগাড়। কোথাও মাত্র দু’জন এক্সরে টেকনোলজিস্ট আছেন, তোলা হয়েছে দু’জনকেই। কোনও ব্লাড ব্যাঙ্কে পাঁচ জন ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্ট রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই ভোটের ডিউটি দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা ইসিজি ও এক্সরে পরিষেবা চলে, এমন হাসপাতাল থেকেও সব টেকনিশিয়ান তুলে নেওয়ার উদাহরণ রয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে ১৯ জন এক্সরে টেকনোলজিস্টের মধ্যে ১৫ জন, সাত জন ইসিজি টেকনোলজিস্টের মধ্যে পাঁচ জন এবং ব্লাড ব্যাঙ্কের আট জন টেকনোলজিস্টের মধ্যে পাঁচ জনকে ভোটের কাজে নেওয়া হয়েছে। এখানে ২৪ ঘণ্টার পরিষেবা কী ভাবে চলবে কেউ জানে না। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের ভোটের কাজের জন্য ডেকে পাঠানোয় বাসন্তি গ্রামীণ হাসপাতাল, কুলতলি জামতলা গ্রামীণ হাসপাতাল, রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালের মতো জায়গায় এক্সরে ও রক্তপরীক্ষা বন্ধ হতে বসেছে। একই অবস্থা মুর্শিদাবাদ-সহ বিভিন্ন জেলায়। এক্সরে ও ব্লাড ব্যাঙ্ক পরিষেবায় প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গিয়েছে নদিয়ার বগুলা ও কালীগঞ্জ বিপিএইচসি, রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে। খাস কলকাতায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের চার জন টেকনোলজিস্টের মধ্যে দু’জনকে এবং আর আহমেদ ডেন্টাল হাসপাতালের নিজস্ব একমাত্র এক্সরে টেকনোলজিস্টকে ভোটের কাজের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছে।
সমস্যার কথা মেনে নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আরও একটু সচেতন হয়ে নাম পাঠানো উচিত ছিল। আমি নির্দেশ দিয়েছি, যেন সুপারেরা চিঠি দিয়ে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের গোচরে আনেন।’’
টেকনোলজিস্টদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, চিকিৎসকদের ভোটের কাজে যাওয়া আটকাতে স্বাস্থ্য দফতর যত সক্রিয় ছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে ততটা দেখা যায়নি। উত্তরবঙ্গের টেকনোলজিস্টদের ভোটের প্রশিক্ষণ হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে প্রশিক্ষণ ৬ এপ্রিল। তৃণমূলপন্থী সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল প্রোগ্রেসিভ
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শমিত মণ্ডল জানান, প্রত্যন্ত গ্রামে এমনিতেই রক্তপরীক্ষা, ইসিজি বা এক্সরে করার বেসরকারি জায়গা নেই। সরকারি হাসপাতালই ভরসা। ভোটের কাজে এত বেশি
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট তোলা হয়েছে যে, জেলার বেশ কিছু হাসপাতালে এই সব পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বেশ কিছু দিন। ‘‘সেই সময় রোগীরা কোথায় যাবেন,’’ প্রশ্ন শমিতবাবুর। সরাসরি জবাব এড়িয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নির্বাচন সামনেই। এখন এই সব বিষয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy