Advertisement
০৩ মে ২০২৪
general-election-2019-national

আড়ি পেতে শোনে ফোন! সকলেই ভয়ে 

নির্ঘাৎ ফোনে কেউ আড়ি পাতছে, নেতা-মন্ত্রী ছাড়িয়ে সেই ভয় এখন সেঁধিয়েছে আমজনতার অনেকের মনেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ০২:২২
Share: Save:

ফোনটা করার কথা ছিল নন্দবাবুর (নাম পরবর্তিত)। মুঠোফোনে গড়গড় করে বলতে শুরু করতেই কার্যত ধমক খেলেন ও পার থেকে। তাঁকে বলা হল, ভোটের সময় কে কোথায় কার ফোনে আড়ি পাতছে জানা নেই! ফোনে আর কোনও কথা নয়, বলেই কুট করে ফোন কেটে দিলেন উল্টো পারের ব্যক্তিটি।

নির্ঘাৎ ফোনে কেউ আড়ি পাতছে, নেতা-মন্ত্রী ছাড়িয়ে সেই ভয় এখন সেঁধিয়েছে আমজনতার অনেকের মনেই। রাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা সরকারি কর্তাও ফোনে একটু মেপেই কথা বলছেন যেন। বিতর্কিত বা গোপনীয় হলে তো সতর্কতা অনেক বেশি। ভোট পর্বের মধ্যে ফোনে এমন অনেক কথোপকথন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানোয় জল্পনা আরও বেড়েছে। আড়িপাতার অভিযোগ ঢুকে পড়েছে শাসক-বিরোধীর বৃত্তেও।

অনেকের আশঙ্কা, সহজেই যে কারও ফোন ‘ট্যাপ’ করা যায়। চলচ্চিত্রেও এমন দৃশ্য তো চেনা! সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আবার কানাকানি, আড়িপাতার জন্য বাজারে ইজ়রায়েলি যন্ত্র এসেছে। কারও সতর্কবাণী, কথা বলার মাঝে ফোনে ‘বিপ-বিপ’ আওয়াজ শুনলেই বুঝতে হবে কেউ আড়ি পাতছে!

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিকল্প খুঁজতে অনেকে সাক্ষাতেই বিশেষ করে গোপন কথা বলবেন বলে ভাবছেন। কারও দাওয়াই, হোয়াটসঅ্যাপ বা স্কাইপে’র মতো ইন্টারনেট ভিত্তিক ফোন পরিষেবা। তাতে কথা বললে নাকি আড়ি পেতে শোনার ভয় নেই।

এত যখন বিতর্ক, নিশ্চয়ই সহজ আড়িপাতা? যা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেরোচ্ছে, সবই তা হলে তার ফল?

সবটা মানতে নারাজ টেলিকম বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, সব কিছুই আড়িপাতা নয়। বরং তাঁদের মতে, আসলে ফোনের কোনও কথোপকথন রেকর্ড করে বাজারে ছড়ানো হচ্ছে। কারণ আড়িপাতার নিয়মগুলি আইন মেনে তৈরি। এবং এখন তা আরও আঁটোসাঁটো। চাইলেই সহজে যে কেউ তা করতে পারেন না।

তাঁরা জানাচ্ছেন, দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, এমন আশঙ্কা থাকলে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা আইন মেনেই ফোনে আড়ি পাতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় টেলকম দফতর (ডট)। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির কোন তদন্তকারী সংস্থার অন্যের ফোনে আড়ি পাতার অধিকার থাকবে সেই নিয়মেই তা নির্দিষ্ট করা আছে। যেমন সিবিআই, র, সিআইডি, কলকাতা পুলিসের মতো কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির গোটা দশেক সংস্থা সেই তালিকায় রয়েছে।

কারও ফোনে আড়ি পাততে হলে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব বা রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছ থেকে ওই সব সংস্থাকে আগে বাধ্যতামূলক ভাবে অনুমতি নিতে হবে। আড়িপাতা প্রক্রিয়ার সবটাই গোপনীয়।

তবে জরুরি বা আপৎকালীন প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্রসচিবদের অনুমোদন পেতে সময় লাগলে অন্তত আইজি পদমর্যাদার নির্দিষ্ট এক জনকে কখনও বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে তিনি খুব অল্প কয়েক দিনের জন্য অনুমোদন দিতে পারেন।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, নিয়মের বাইরে গিয়ে কারও ফোনে আড়ি পাতা সহজ নয়। অনুমোদন ছাড়া তদন্তকারী সংস্থা বা টেলিকম সংস্থা, কেউই সেই ঝুঁকি এখন নেবে না। কারণ, সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আর বিপ-বিপ আওয়াজ? এই দাবি হেসেই ওড়াচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, ‘‘এমন কিছুই হয় না। কারণ আওয়াজ হলে তো তিনি বুঝেই যাবেন! ফোনে আড়ি পাতলে ঘুণাক্ষরেও তাঁর কিছুই টের পাওয়ার কথা নয়।’’

তবে হোয়াটস্যাপের মতো ইন্টারনেট পরিষেবায় ফোনের কথাবার্তা ‘ডেটা’ বা ইন্টারনেট পরিষেবার মাধ্যমে যায়। টেলিকম প্রযুক্তিবিদদের অনেকে বলছেন, তা সাঙ্কেতিক (এনক্রিপটেড) ভাবে এক জনের কাছ থেকে অন্য জনের কাছে পৌঁছয়। অনেক সংস্থারই সার্ভার বিদেশে। সব মিলিয়ে সেই বার্তা উদ্ধার করতে কখনও কিছুটা সময় লাগলেও, তা জানা অসম্ভব নয়।

বিতর্ক উঠলে বিশেষজ্ঞরা তার খুঁটিনাটি বিচার করেন। আমজনতার বড় অংশই কি আর সে সবে মাথা ঘামান? বরং সাবধান থাকতে পুরনো প্রবাদবাক্যটিকেই একটু পরিমার্জন করে বলছেন, ‘‘ফোনেরও কান আছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE