তৃতীয় দফার ভোটে এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায় বুথের কাছেই রাজনৈতিক হিংসার বলি হন এক গ্রামবাসী। ছেলের সামনেই টিয়ারুল শেখ নামে ওই ব্যক্তিকে কুপিয়ে খুন করা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনকে নিহতের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করল নির্বাচন কমিশন। ‘চন্দননগর আইন পরিষেবা কেন্দ্র’-এর এ সংক্রান্ত আর্জির ভিত্তিতে ওই পদক্ষেপ বলে কমিশনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, ‘‘কমিশনের ওই চিঠি আমাদের কাছে শনিবার এসে পৌঁছেছে। বিডিও এবং মহকুমাশাসকের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
এ রাজ্যে নির্বাচনে রাজনৈতিক হানাহানিতে হতাহত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু সরকারি ভাবে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। নির্বাচনী হিংসায় হতাহত সাধারণ মানুষের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আর্জিতে বছর কয়েক ধরে নির্বাচন কমিশনের কাছে দরবার করে চলেছে আইন সহায়তা কেন্দ্র। চলতি লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার আগেও এ নিয়ে তারা দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়।
মুর্শিদাবাদের ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করে সংবাদপত্রের খবর-সহ গত ২৫ তারিখে ফের দিল্লি এবং কলকাতায় কমিশনের দফতরে চিঠি পাঠান আইন পরিষেবা কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তার ভিত্তিতে গত ৮ মে রাজ্যের উপ-মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিককে চিঠি দেন। তাতে বিষয়টি নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘আশা করব গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।’’
ওই সংগঠনের সদস্যদের বক্তব্য, ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক বা কর্মীদের ক্ষেত্রে সরকারি বিমা সংস্থার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাধারণ ভোটার বা রাজনৈতিক দলের এজেন্ট আক্রান্ত হলে তাঁদের কিছু জোটে না। বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে এটা পরিষ্কার, অধিকাংশ ক্ষেত্রে গরিব বা নিরীহ মানুষ হিংসার বলি হন। লোকসভা, বিধানসভা, পুরসভা, পঞ্চায়েত— সব নির্বাচনেই এটা দস্তুর। তাঁরা মনে করেন, সম্পত্তি বা জীবনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া সরকারি ব্যবস্থার দায়িত্ব হওয়া উচিত। কারণ, গণতন্ত্রে অংশগ্রহণ করতে এসে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি মারা গেলে বা জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে পরিবার গভীর সমস্যায় পড়ে। ভোটের খবর সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিকেরাও আক্রান্ত হন। ছোটরাও গোলমালের শিকার হয়। এই সব ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা উচিত।
বিশ্বজিতবাবুদের বক্তব্য, প্রয়োজনে কমিশনের অধীনে কমিটি গড়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ খোঁজ নিয়ে আর্থ-সামাজিক অবস্থা খতিয়ে দেখে ক্ষতিপূরণের মাত্রা নির্ধারণ করা হোক। তাদের সুপারিশে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক। দুষ্কৃতী বা নিজের দোষে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই সুযোগ না দিলেই হল। একটি ঘটনা আক্রান্তের আত্মীয় বা অন্যদের মনে দাগ কেটে যেতে পারে। যাতে পরবর্তীকালে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁদের মনে অনেক ক্ষেত্রে অনীহা তৈরি হয়। উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থার পাশাপাশি কোনও ঘটনা ঘটলে কমিশন বা প্রশাসন আক্রান্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ালে তা হবে না।