Advertisement
০৪ মে ২০২৪
general-election-2019-west-bengal

হুমকির মুখে ঘর ছাড়া পোলিং অফিসার, ভোটাধিকার প্রয়োগের দাবিতে কমিশনে চিঠি

কলকাতার নির্বাচন কমিশনের দফতরে চিঠি দিতে যাওয়ার সময়েই অঞ্জনের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।

জয়নগরের বাসিন্দা পোলিং অফিসার অঞ্জনকুমার মাইতি। —নিজস্ব চিত্র।

জয়নগরের বাসিন্দা পোলিং অফিসার অঞ্জনকুমার মাইতি। —নিজস্ব চিত্র।

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ১৬:৪৩
Share: Save:

যাঁর কাঁধে ভোট কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব পড়েছে, সেই পোলিং অফিসারই কি না তৃণমূল কর্মীদের হুমকির মুখে ঘর ছাড়া! তিনি এতটাই আতঙ্কিত যে, নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে এসেও থরথর করে কাঁপছেন। কমিশনের কাছে তাঁর একটাই আকুতি, “নিরাপত্তা দিন। ভোটাধিকার প্রয়োগ করার ব্যবস্থা করুন।”

বিরোধীদের প্রশ্ন, খোদ পোলিং অফিসারই যদি এ ভাবে সন্ত্রস্ত থাকেন তা হলে ভোটারদের কী অবস্থা? ওই পোলিং অফিসারের নাম অঞ্জনকুমার মাইতি। পেশায় তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আগামী ১৯ মে সপ্তম দফায় তাঁর ভোটের ডিউটি পড়েছে। তিনি ডিউটিতে গেলে পরিবারের অন্যান্যরা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন তো? শুধু তাই নয়, তিনি নিজেও কি নিরাপদে ভোটের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন?

জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত জীবনতলা থানা এলাকার কালিকাতলার মাইতি পাড়ায় অঞ্জনের পৈতৃক বাড়ি। গত ছ’দফা নির্বাচনে সংবাদমাধ্যমে যে রাজনৈতিক হিংসার ছবি উঠে এসেছে, তা দেখে আতঙ্কিত তিনি। আশঙ্কা, ভোটের দিনে জয়নগরেও গোলমাল হতে পারে। অঞ্জনের অভিযোগ, “২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পরেই গ্রামে হামলা চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তখন থেকেই ঘর ছাড়া। সম্প্রতি ভোটের আগে ফের গ্রামে গ্রামে ঢুকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”

আরও পড়ুন: বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় অমিত শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর, ভয় পাই না, পাল্টা অমিতের

অঞ্জনের দাবি, “২০১৮ সালে কালিকাতলা গ্রামপঞ্চায়েতে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা সন্ত্রাস চালিয়েছিল। যাঁরা ভোট দিয়েছিলেন, পরে তাঁদের উপরেও হামলা হয়। আমার পরিবারও আক্রান্ত হয়েছে। সন্ত্রাসের পিছনে স্থানীয় তৃণমূল নেতা অশোক শাসমল, মাজেত শেখ, মোনাজাত শেখের হাত রয়েছে। দুষ্কৃতীদের নাম কমিশনের কাছে জানিয়েছি। এই পরিস্থিতিতে কী করে ভোটের ডিউটি করব বুঝতে পারছি না। বাবা-মা, ভাই-বোন কী করে ভোট দিতে যাবে তা-ও বুঝতে পারছি না। আমরা সবাই তো ঘরছাড়া!”

কলকাতার নির্বাচন কমিশনের দফতরে চিঠি দিতে যাওয়ার সময়েই অঞ্জনের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। জীবনতলা থানাতে জানিয়ে কোনও কাজ না হওয়ায় তিনি কমিশনকে জানান। একইসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও চিঠি দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়েও। এমনকি তিনি এই ঘটনার বর্ননা দিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও ই-মেল মারফত চিঠি পাঠিয়েছেন।

কালিকাতলার মাইতি পাড়ায় অঞ্জনের পৈতৃক বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: ভোটের তাণ্ডবে ভাঙা হল বিদ্যাসাগর-মূর্তি, অমিত শাহের শোয়ে ধুন্ধুমার

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে এত হইচই, কিন্তু তাঁর সম্পর্কে এ সব তথ্য জানতেন?

তাঁর আশা, শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের এই উৎসবে অংশ নিতে পারবেন। ভোট দিতে পারবেন তাঁর পরিবারও। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের দফতর সূত্রে খবর, এ বিষয়ে একটি অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। ইতিমধ্যেই সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE