Advertisement
E-Paper

আধার সংশোধনে রাতভর লাইন

বুধবার প্রায় আট হাজার মানুষের লাইন পড়েছিল মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের মুখ্য ডাকঘরে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪০
আধার কার্ড সংশোধনের জন্য ফর্ম নেওয়ার ভিড়। বুধবার রঘুনাথগঞ্জের মুখ্য ডাকঘরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

আধার কার্ড সংশোধনের জন্য ফর্ম নেওয়ার ভিড়। বুধবার রঘুনাথগঞ্জের মুখ্য ডাকঘরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে সাগরদিঘির মমতাজ বিবি তাঁর ছেলের আধার কার্ড সংশোধনের তারিখ পেয়েছেন। তবে দু’-এক মাস পরে নয়, মমতাজ বিবিকে ওই কার্ড সংশোধনের জন্য ডাকঘরে আসতে বলা হয়েছে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে! মমতাজ বলছেন, ‘‘এই ভুল কার্ড সেই ২০২১ সাল পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হবে। তার মধ্যে কোনও বিপদ হলে কে দেখবে?’’

বুধবার প্রায় আট হাজার মানুষের লাইন পড়েছিল মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের মুখ্য ডাকঘরে। এত না হলেও বাঁকুড়ায় মুখ্য ডাকঘরের সামনে সেই সময়ে না হোক দুশো মানুষের ভিড়। কয়েকশো কিলোমিটার দূরে কোচবিহারের ছবিটাও বিশেষ আলাদা নয়। মনো আলি, কণিকা কার্যীরা কেউ রাত থেকে লাইন দিয়েছেন, কেউ দিনের পর দিন ঘুরছেন। জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়িতেও একই দৃশ্য।

প্রশ্ন হচ্ছে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হঠাৎ এ ভাবে আধার সংশোধনে দীর্ঘ লাইন পড়ছে কেন? উত্তরবঙ্গই হোক বা দক্ষিণ, সর্বত্রই রাত থেকে অপেক্ষা করে থাকা মানুষজনের একটাই কথা, এনআরসি। যেমন বলছেন মাটিগাড়ার মণিবালা সরকার, চম্পাসারির ধার্মিক সাহুরা। তাঁদের কথায়, ‘‘এনআরসি নিয়ে যা হচ্ছে, উদ্বেগে আছি। তাই পরিবারের বাচ্চাদেরও আধার করিয়ে রাখছি।’’ জলপাইগুড়ি প্রধান ডাকঘরে বসা এক কর্মীর কথায়, “নতুন আধার কার্ড তৈরি প্রায় নেইই। সকলেই আসছেন আধার কার্ডে সংশোধন করাতে। এনআরসি হতে পারে ধরে নিয়েই সকলে লাইন দিচ্ছেন।”

মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জেও একই ছবি। বুধবার সেখানে হাজির হাজার আষ্টেক লোকের বেশির ভাগই এসেছেন আধার কার্ডের নথিতে ভুল সংশোধনের জন্য। প্রায় সকলেই জানিয়েছেন, এনআরসি-র ভয়েই আধার কার্ড ঠিক করার জন্য লোকজন মরিয়া। তার ফলেই চাপ বাড়ছে আধার কেন্দ্রগুলিতে। এবং প্রশাসনের লোকেরা মেনে নিচ্ছেন, এই চাপ সামলানোর মতো কর্মী সংখ্যা তাঁদের সব ক্ষেত্রে নেই। পরিকাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে অনেক জায়গায়।

রঘুনাথগঞ্জের এক ডাককর্তা জানান, এর মধ্যেই ভিড় সামলাতে ফরাক্কা থানার কাছে পুলিশ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ফরাক্কাতেও যদি এত লম্বা লাইন পড়ে, সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি
বলেন, ‘‘সম্প্রতি মালদহের একটি ডাকঘরে ভাঙচুর হয়েছে। তাই কেউই ঝুঁকি নিতে চাইছে না।’’ তাই অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি না নিয়ে তারিখ দিয়ে দিচ্ছেন ডাক বা ব্যাঙ্কের কর্মীরা। কারও তারিখ দু-তিন মাস পরে, কারও আবার বছরখানেক পরে। এই ছবি যেমন মুর্শিদাবাদে বা বাঁকুড়ায়, তেমনই বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার বা কোচবিহারেও।

রঘুনাথগঞ্জ মুখ্য ডাকঘরের পোস্টমাস্টার নির্ঝরকান্তি রায় বলেন, “যাঁর যেমন তারিখ পড়েছে, তিনি সেই মতো এসে আধার কার্ডের কাজ করাতে পারবেন।” শিলিগুড়ি মুখ্য ডাকঘরের পোস্টমাস্টার নন্দা সেন বলেন, ‘‘ফর্ম বিলির সময় ভোর থেকে লাইন পড়ে। কয়েক হাজার ফর্ম বিলি হয়ে গেলে সেগুলো আগে জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রধান সমস্যা, কর্মী কম।’’ মুর্শিদাবাদ বিভাগের ডাক অধিকর্তা প্রবাল বাগচী বলেন, ‘‘বহু ডাকঘরে যন্ত্র খারাপ। কর্মীও রয়েছেন প্রয়োজনের চেয়ে কম। তার মধ্যেও অন্য কাজের সঙ্গে আধার কার্ডের কাজও করতে হচ্ছে।’’

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এই অপেক্ষার অবসান হবে কবে?

Aadhaar Card NRC Citizenship Amendment Bill
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy