Advertisement
E-Paper

বৈঠকের মাঝে হানা পুলিশের

সরকারি ভাবে অবশ্য এ দিনও সিকিমের কাছে সাহায্য চেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের মুখ্যসচিব বার্তা দিয়েছেন সিকিমের মুখ্যসচিবকে। তার আগে এ দিনই গুরুঙ্গ, প্রকাশ গুরুঙ্গ ও রোশন গিরির নামে লুক আউট সার্কুলার জারি হয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১৪

দলের রাশ নিজের হাতে রাখতে মরিয়া বিমল গুরুঙ্গ প্রথমে বিনয় তামাঙ্গের বন্‌ধ তোলার সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দেন। তার পরে শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েক জন সদস্যকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। লক্ষ্য ছিল, বিনয় ও অনীত থাপাকে দল থেকে বহিষ্কার করে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না মোর্চা সভাপতির। সিকিম ঘেঁষা মাঝিটাঁড় গ্রামে তাঁর গোপন ডেরায় বৈঠক চলার সময়ে পুলিশ হানা দেয়। কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচেন গুরুঙ্গ। গ্রেফতার করা হয় ১৪ জনকে, যাঁদের মধ্যে ৯ জন মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।

মাঝিটাঁড়ের কাছে ওই গোপন ডেরায় পুলিশের সঙ্গে মোর্চা সমর্থকদের সংঘর্ষও হয়েছে। তাতে পুলিশের গুলিতে দাওয়া ভুটিয়া (৩৪) নামে এক সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে বলে মোর্চার দাবি। কালিম্পঙের বাসিন্দা দাওয়ার দেহ নামচি হাসপাতালে রয়েছে। তবে দার্জিলিং পুলিশ জানিয়েছে, তল্লাশি হলেও কোথাও গুলি চলেনি। ওই যুবকের মৃত্যুর সঙ্গে তল্লাশির কোনও সম্পর্ক নেই।

এই ঘটনায় কালিম্পঙের এসপির বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করেছে সিকিম পুলিশ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দাবি, তারা আগাম সতর্কবার্তা দিয়েই মাঝিটাঁড়ে গিয়েছিল। কেন তাদের বাধা দিয়ে গুরুঙ্গকে পালানোর সুযোগ করে দিল সিকিম পুলিশ, এই মর্মে পাল্টা একটি মামলা করছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। রাতে আবার বাগডোগরা থানার কাছে একটি সিকিম নম্বরের গাড়ি থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে।

সরকারি ভাবে অবশ্য এ দিনও সিকিমের কাছে সাহায্য চেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের মুখ্যসচিব বার্তা দিয়েছেন সিকিমের মুখ্যসচিবকে। তার আগে এ দিনই গুরুঙ্গ, প্রকাশ গুরুঙ্গ ও রোশন গিরির নামে লুক আউট সার্কুলার জারি হয়ে গিয়েছে। ফলে দেখা মিললেই গ্রেফতার করা হবে তাদের। ৮ জুন পাহাড়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক চলাকালীন হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগেই জারি হয়েছে এই নোটিস।

বৃহস্পতিবার বিনয় বন্‌ধ তোলার সিদ্ধান্ত নেন। তাতে প্রচণ্ড খেপে যান গুরুঙ্গ। বিনয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ দিন বৈঠক করে তাঁকে দল থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন মোর্চা সভাপতি। তার পরে ১২ তারিখ উত্তরকন্যার বৈঠকে নিজের ঘনিষ্ঠদের পাঠাবেন বলেও ঠিক করে রেখেছিলেন। মোর্চার একটি সূত্রে বলা হয়েছে, দলে যে তিনিই শেষ কথা, সেটা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন গুরুঙ্গ। এক দিকে তাঁর হুঁশিয়ারির পরে এ দিন আবার পাহাড়ের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পথে নামেন গুরুঙ্গপন্থী বন্‌ধ সমর্থকেরা। অন্য দিকে, বিনয়কে সরিয়ে দিতে পারলে দলের যে কোনও বিদ্রোহীর প্রতি কঠোর বার্তা দেওয়াও সম্ভব হতো।

কিন্তু এক বার বন্‌ধ তোলার ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে প্রশাসন আর নতুন জটিলতা চাইছে না। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের একাংশের কথায়, ‘‘শান্তি ফেরাতে সরকার অনেক সময় দিয়েছে।’’ তাই এ দিন থেকেই সুতো গোটানোর কাজ শুরু করে দিল রাজ্য।

সেই সূত্রেই গুরুঙ্গের ডেরায় হানা। ওই বৈঠক থেকে খালি পায়ে পালাতে হয়েছে গুরুঙ্গকে। পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, এ বার পাহাড়ের লোকজন বুঝতে পারবে যে, গুরুঙ্গও ভয় পাচ্ছেন। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘গুরুঙ্গ ও তাঁর কিছু সঙ্গীকে পাহাড়ের মানুষ ভয় পায়। ফলে ইচ্ছের বিরুদ্ধেও সেখানকার মানুষকে অনেক কিছু মেনে নিতে হচ্ছে।’’ এ বার সেই ভয় কিছুটা কমবে বলেই ধারণা প্রশাসনের একাংশের। ফলে বন্‌ধ উঠে গিয়ে পাহাড়ে সাধারণ জীবনে ফেরাও সহজ হবে।

লুক আউট নোটিস কী?

অভিযুক্তকে খুঁজে না পেলে এই লুক আউট সার্কুলার (এলওসি) জারি করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাসপোর্ট নম্বর, নাম, ছবি দিয়ে এলওসি পাঠানো হয় দেশের সব বিমানবন্দর ও বন্দরে। আইন বলবৎকারী যে কোনও সংস্থা এই নোটিস জারি করতে পারে।

কী সুবিধা এই নোটিসে?

বিদেশ যেতে হলে অভিবাসন দফতরে পাসপোর্ট দেখাতে হয়। পাসপোর্টের নম্বর কম্পিউটারে ফেললেই ফুটে ওঠে সতর্কবার্তা। অপরাধ বেশি হলে খবর পাঠানো হয় বিদেশেও।

Darjeeling Unrest Bimal Gurung GJM Gorkhaland Lookout notice Indefinite Strike বিমল গুরুঙ্গ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy