Advertisement
E-Paper

পর্দার সোনিয়াকে পথ দেখাল সোনাগাছিই

মুম্বইয়ে পাচার হওয়া বোনকে খুঁজতে গিয়ে সে শহরের চোরাগলির অতলে তলিয়ে যাওয়া সোনিয়ার কাহিনি দেখার পরে কিছু ক্ষণ কথা বলতে পারছিলেন না খুলনার মেয়ে কল্পনাও।

মৃণাল ঠাকুর।

মৃণাল ঠাকুর।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:২৬
Share
Save

ওঁরা যখন ঢুকছেন শুরু হয়ে গিয়েছিল সিনেমা। কিন্তু পর্দায় যৌনপল্লির ঘুপচি অন্ধকারে অনিচ্ছুক কিশোরীকে মারধর, নরকসদৃশ বাথরুমে ঠেলে আটকে রাখার দৃশ্যে চোখ ছলছলিয়ে উঠল খেয়ালির (নাম পরিবর্তিত)। অনুচ্চ স্বরে তিনি পরে বলছিলেন, সোনাগাছিতে আমার সঙ্গেও এমনই হয়েছে।

মুম্বইয়ে পাচার হওয়া বোনকে খুঁজতে গিয়ে সে শহরের চোরাগলির অতলে তলিয়ে যাওয়া সোনিয়ার কাহিনি দেখার পরে কিছু ক্ষণ কথা বলতে পারছিলেন না খুলনার মেয়ে কল্পনাও। একটু থেমে থেমে বললেন, ‘‘আমার গল্পটাও অনেক লম্বা। কাজ খোঁজার তাগিদে কলকাতায় এসেই এক দিন হারিয়ে গেলাম।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে আন্তর্জাতিক সব মানবাধিকার সংগঠনের দরবারে ছাপ রাখা ‘লাভ সোনিয়া’ ছবিটি শুক্রবার মেলে ধরা হল, তার নির্মাণের নেপথ্যে থাকা কলকাতার কয়েক জন যৌনকর্মীর সামনে। খেয়ালি-কল্পনাদের গল্প না-শুনলে সোনিয়ার যন্ত্রণার শরিক তিনি হতে পারতেন না বলছিলেন, ছবির নামভূমিকার অভিনেত্রী মৃণাল ঠাকুরও।

আরও পড়ুন: বিষে খুন! এনআরএসে দেহ ১৬ কুকুরছানার​

‘‘একটি মেয়ের মাংসপিণ্ড হয়ে ওঠার দৃশ্যে অভিনয় করা খুব সোজা ছিল না। হংকং ও আমেরিকার একটি দৃশ্যে অভিনয় করার সময়ে অসুস্থ লাগছিল। ছবির পরিচালক, সিনেমাটোগ্রাফার, মেকআপ-নির্দেশকেরা তখন আমায় সাহস জোগাচ্ছেন, কলকাতার মেয়েগুলোর কথা ভাবো!’’ এ দেশের বিভিন্ন যৌনপল্লির চোরাপথের বাঁকে হারিয়ে যাওয়া অমানুষিক অত্যাচারের শিকার মেয়েদের কথা তুলে ধরতেই এই চিত্রনাট্যের ধকল সহ্য করছিলেন মৃণাল। সোনাগাছির মেয়েদের সঙ্গে ভাব করা থেকেই এই চরিত্র হয়ে ওঠার সফর শুরু করেন মরাঠি তরুণী। সোনাগাছির কয়েক জন মেয়ে এক মাস ধরে মুম্বইয়ে পড়ে থেকে মৃণালকে ওয়র্কশপ করিয়েছেন। শো শেষে দেখা হতেই খেয়ালি-কল্পনা আর মৃণাল বন্ধুর মতো পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন। সিনেমা ও বাস্তবের হাত ধরল যন্ত্রণার সেতু।

আরও পড়ুন: পরিবেশ বাঁচাতে ভরসা পুরনো শাড়ি, বার্তা তিরুঅনন্তপুরমের জেলাশাসকের

একদা সাংবাদিক, অধুনা নারীপাচার বিরোধী সমাজকর্মী রুচিরা গুপ্তের দু’টি তথ্যচিত্র— দ্য সেলিং অব ইনোসেন্টস এবং ল্যান্ড অব মিসিং ডটার-ই এই ছবির দরজা খুলে দেয়। পরিচালক তবরেজ নুরানি তখন আমেরিকায়। হিন্দিভাষী একটি ভারতীয় মেয়ে হংকং হয়ে জাহাজের কন্টেনারে আমেরিকায় পাচার হওয়ার কথা তিনি জানতে পারেন। মেয়েটিকে দেখার পরে, এমন একটি ছবি না করে তিনিও পারছিলেন না। এ দেশে পাচারচক্রের শিকার অন্তত ৩০ লক্ষ মেয়ের ভগ্নাংশমাত্র মুক্তি পায়। চিত্রনাট্যের পরতে পরতে সেই ভয়াল ছবি।

পর্দায় মু্ম্বইয়ের যৌনপল্লি, কামাথিপুরা। তস্য গলি, ঘুটঘুটে সর্পিল সিঁড়ি, ঘরের ভিতর ঘর, খাটের নীচে খাট, চোরাকুঠুরির গল্প, অনিবার্য ভাবে কলকাতার সোনাগাছি-বৌবাজারকে মনে পড়ায়। খেয়ালি-কল্পনারা বলছিলেন, এই সিনেমার গল্পের মতো নাবালিকাদের উপরে অত্যাচার সোনাগাছিতে এখনও বন্ধ হয়নি। রুচিরা বলছিলেন, ‘‘মু্ম্বই-কলকাতা— দু’টো শহরের যৌনপল্লিই ব্রিটিশ আমলের। চরিত্রেও মিল। তবে পাচার-বিরোধী স্বর কলকাতায় আরও জোরালো হওয়া দরকার।’’

Movie Red Light Area Love Sonia Mrunal Thakur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}