Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্কুল-কলেজের পদে এত দিনে ইস্তফা মদনের

কুড়ি মাসেরও বেশি তিনি জেলে আছেন। এবং বহাল তবিয়তে আছেন বা বুধবার সকাল পর্যন্ত ছিলেন বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি-পদেও! কোনও কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় মন্ত্রীদের থাকা আদৌ উচিত কি না, তা নিয়ে প্রবল চাপান-উতোরের মধ্যে এ দিন সব স্কুল ও কলেজের পরিচালন সমিতি থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রাক্তন ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০৬
Share: Save:

কুড়ি মাসেরও বেশি তিনি জেলে আছেন। এবং বহাল তবিয়তে আছেন বা বুধবার সকাল পর্যন্ত ছিলেন বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি-পদেও! কোনও কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় মন্ত্রীদের থাকা আদৌ উচিত কি না, তা নিয়ে প্রবল চাপান-উতোরের মধ্যে এ দিন সব স্কুল ও কলেজের পরিচালন সমিতি থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রাক্তন ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।

জোড়া দফতরের পূর্বতন মন্ত্রী এ দিন ছাড়লেন বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ, দক্ষিণেশ্বরের হীরালাল মজুমদার মেমোরিয়াল কলেজ, বাগবাজার উইমেন্স কলেজ এবং কামারহাটির আরও বেশ কয়েকটি কলেজ ও স্কুলের সভাপতির পদ। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে মদনবাবু ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে জেলে বন্দি। জেলে থেকে, মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর আগে-পরে দীর্ঘদিন ধরে তিনি কী ভাবে ওই সব স্কুল-কলেজের পরিচালন সমিতির শীর্ষ পদ অলঙ্কৃত করে গেলেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। কিছু দিন আগেও ঠিক যে-ভাবে প্রশ্ন উঠছিল, লৌহকপাটের আড়ালে থাকা সত্ত্বেও ক্রীড়া ও পরিবহণের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রীর কাজ তিনি চালিয়ে যাচ্ছিলেন কী করে? কেনই বা তাঁকে সেটা চালাতে দেওয়া হচ্ছিল?

ট্রেড ইউনিয়নের মাথায় বা কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির মাথায় মন্ত্রীদের থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। তাঁর এই মন্তব্যকে ভাল চোখে দেখেননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমের সামনে এই মন্তব্য করার জন্য দলের তরফে সাধনবাবুর কাছে চিঠি পাঠানোর কথাও জানান তিনি। পার্থবাবু বুধবারেও বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতিতে জনপ্রতিনি‌ধিরা যে থাকতে পারেন, সেটা তো আইনেই আছে। যদি তাঁদের রাখা না-যায়, তা হলে তো আইনের বদল প্রয়োজন। আলোচনা করতে হবে।’’ তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই মন্তব্য করে সাধনবাবু যে মোটেই উচিত কাজ করেননি, তা এ দিনও জানিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী। মদনবাবুর ইস্তফা প্রসঙ্গে অবশ্য পার্থবাবু বলেন, ‘‘ও বুঝেছে, জেলে থেকে কলেজের কাজ করতে পারবে না। তাই নীতিবোধ থেকেই এই কাজ করেছে।’’

মঙ্গলবারেই জয়পুরিয়া কলেজের পরিচালন সমিতিতে সরকারের প্রতিনিধি-পদে মন্ত্রী শশী পাঁজার জায়গায় তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আসার কথা ঘোষণা করা হয়। এ দিন কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকে অবশ্য সুদীপবাবু ছিলেন না। ওই কলেজে গন্ডগোলের জেরে শশীদেবীকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রীই। তার পরেই সব স্কুল-কলেজের দায়িত্ব ছাড়লেন মদনবাবু।

কয়েক দিন আগে জয়পুরিয়া কলেজে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র গোষ্ঠী-কাজিয়ার জেরে এক ছাত্রের মাথা ফাটিয়ে দেয় অন্য গোষ্ঠীর এক পড়ুয়া। ওই কলেজেরই এক শিক্ষককে রাস্তায় মারধর করা হয়। প্রহৃত শিক্ষক আঙুল তোলেন কলেজেরই কিছু ছাত্রের দিকে। তবে নির্দিষ্ট করে তিনি কাউকেই চিহ্নিত করতে পারেননি। এই প্রেক্ষিতে পদত্যাগপত্র দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা নন্দিতা চক্রবর্তী। শিক্ষামন্ত্রী সেই সময় বলেছিলেন, ‘‘যদি টিএমসিপির গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বই হয়ে থাকে, দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কিন্তু ঘটনার ছ’দিন পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেন?

বুধবার সায়েন্স সিটিতে একটি অনুষ্ঠানের পরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘অধ্যক্ষা যদি কারও নাম বলতে না-চান, প্রহৃত শিক্ষক যদি কাউকে চিনতে না-পারেন, তা হলে পুলিশ তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেবে কী ভাবে? তা হলে তো আমি ধরে নেব, ওরা (যারা গোলমাল পাকিয়েছে) ছাত্র নয়! ছাত্র হলে তো তাদের চেনার কথা।’’

অন্ধকারে মুখ ঢাকা অবস্থায় কাউকেই চেনা যায়নি। তা বলে কি দুষ্কৃতীদের ধরা যাবে না? পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা নন্দিতা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুলিশকে বারবার জানিয়েছি। ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানিয়েছেন, তদন্তে সময় লাগবে।’’ অধ্যক্ষা জানান, এ দিন পরিচালন সমিতির বৈঠকে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তাঁকে আবার কাজে যোগ দিতেই অনুরোধ করা হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার তিনি ফের ওই পদে যোগ দেবেন।

জয়পুরিয়ার অধ্যক্ষা কাজে ফিরতে রাজি হলেও স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যক্ষ ইস্তফায় অনড়। এ দিন বিকেলেই বিশপের ঘরে স্কটিশের কাউন্সিল বৈঠক ডাকা হয়। পদত্যাগী অধ্যক্ষ অমিত আব্রাহাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক চলে রাত পর্যন্ত। রাত ৮টায় ফোন করা হলে বিশপ জানান, তিনি সবে বাড়ি ফিরেছেন। বৈঠকের ব্যাপারে যা বলার, বৃহস্পতিবার বলবেন।

পদত্যাগী অধ্যক্ষের অভিযোগ, তাঁর ইস্তফা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। ‘‘আসলে লড়াইটা পুরনো। ত্রিমুখী লড়াই। মাঝখান থেকে ফেঁসে গিয়েছি আমি। এতে কলেজের বদনাম হচ্ছে,’’ বলেন অমিতবাবু।

কারা এই তিন মুখ, অমিতবাবু সেটা স্পষ্ট করে বলতে চাননি। লড়াইটা যে অন্য জায়গায়, তার আভাস মিলেছে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যেও। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘এটা স্কটিশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে অনেক রকম খবরই আছে। হঠাৎ করে কেউ সরে যাচ্ছে না।’’

স্কটিশের কিছু শিক্ষক মঙ্গলবার পার্থবাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মন্ত্রী তাঁদের বলেন, ‘‘ঘনঘন অধ্যক্ষ বদল ঠিক নয়। এতে শিক্ষা ক্ষেত্রের ধারাবাহিকতার ক্ষতি হতে পারে। এই বিষয়ে আপনারা সতর্ক হোন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madan Mitra Management Committee resignation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE